আশঙ্কাই সত্যি হল মুকুল সাংমার। তুরা উপ-নির্বাচনে বিধায়ক স্ত্রীকে জেতাতে না পেরে এবং দলের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যর্থতায় অরুণাচলের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির মতোই তাঁর আসনও টলোমলো। দলের ৩০ জন বিধায়কের মধ্যে ২০ জনই মুকুলের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়েছেন।
এমনটা হবে আঁচ করেই হাইকম্যান্ডকে ‘ম্যানেজ’ করতে ১৯ মে, ফল ঘোষণার পর থেকেই মুকুল দিল্লিতে। পরাজয়ের রিপোর্টকার্ড হাতে এআইসিসির দরবারে হাজির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি ডি লাপাংও। মেঘালয়ের দায়িত্বে থাকা এআইসিসি নেতা ভি নারায়ণস্বামী লাপাং, মুকুলদের সঙ্গে বৈঠক করার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতৃত্ব নিয়ে দলের সব মন্ত্রী ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। অসম-অরুণাচলের ভুলের পুনরাবৃত্তি মেঘালয়ে আর করতে চায় না কংগ্রেস।
এআইসিসির মতে, অসম ও অরুণাচলে সময় মতো নেতৃত্ব বদলের দাবিকে পাত্তা না দেওয়ার ফলেই দুই রাজ্য কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে। কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে গেরুয়াদলকে প্রথমবার অসমে ক্ষমতায় আনার অন্যতম প্রধান কারিগর হিমন্তবিশ্ব শর্মা স্পষ্টই বলেন, “রাহুল গাঁধীর একনায়কতন্ত্র এবং পরিবারতন্ত্রের প্রতি অন্ধ আস্থাই অসমে কংগ্রেসের পতনের কারণ। সেই জন্য তিনি ৩৪ জন এমন প্রার্থী দিয়েছেন যাঁরা কোনও না কোনও বর্তমান বা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতার পরিবারের সদস্য।”
এক সময় মেঘালয়ে উদ্ভুত জটিলতা কাটাতে এই হিমন্তের উপরেই ভরসা রেখেছিল এআইসিসি। তাঁর কথায়, “দলের বিধায়করা যখন ২০১৫ সালে নেতৃত্ব বদলের দাবি জানিয়েছিলেন, রাহুল গাঁধী একক সিদ্ধান্তে তা উড়িয়ে দিয়ে জানান, এ ব্যাপারে তাঁর কথাই চূড়ান্ত। তাঁর মনে ছিল না যে তিনি অসমের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন।” একই ভাবে অরুণাচলপ্রদেশের প্রাক্তন কংগ্রেসি অর্থমন্ত্রী কালিখো পুলের নেতৃত্বে যখন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়, তখনও হাইকম্যান্ড রাজ্যের পরিস্থিতি ও মানসিকতা বিচার না করেই টুকির পাশে দাঁড়ায়। এমনকী রাষ্ট্রপতি শাসনের পরে আস্থা ভোটে জিতেও পুল ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা কংগ্রেস ছাড়তে চান না, কংগ্রেসেরই সরকার হবে। কিন্তু সেই সুযোগও হাতছাড়া করে সনিয়া গাঁধী নাবাম টুকির হয়ে সওয়াল চালিয়ে যান। অরুণাচল হাতছাড়া হয়।
দু’বারের ভুল থেকে ঠেকে শেখার পরে মেঘালয় নিয়ে এআইসিসি অন্য পথে হাঁটতে পারে বলে দলীয় সূত্রে খবর। মুকুল নিজেও পরিবারতন্ত্রের প্রকৃষ্ট নমুনা। তিনি স্ত্রী ও ভাইকে বিধায়ক করেছেন। ঘনিষ্ঠদের বিস্তর সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। প্রদেশ কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই খাসি পাহাড়ের ১৬ জন ও গারো পাহাড়ের চার বিধায়ক নেতৃত্ব বদলের দাবিতে সরব। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এখনই বদল চাইছেন তাঁরা। কারণ তুরায় জেলা পরিষদ ভোটে হারের পরে, উপ-নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী ডিকাঞ্চি শিরাকে এক লক্ষ ৯২ হাজার ভোটে হারিয়েছেন বিজেপি শরিক এনপিপির প্রার্থী তথা প্রাক্তন সাংসদ পূর্ণ সাংমার পুত্র কনরাড সাংমা। তুরা লোকসভা কেন্দ্রের ২৪টি বিধানসভার মধ্যে মুকুলের নিজের কেন্দ্র আমপাতি ছাড়া সর্বত্র হেরেছেন ডিকাঞ্চি। তাই দলের নড়বড়ে জনসমর্থনও সামনে এসেছে। কনরাডকে সামনে রেখে বিজেপি মেঘালয় জয়ের জন্যে ঝাঁপাবে বলেই তাঁদের ধারণা। বিদ্রোহীরা পরবর্তী নেতার পদে ডি ডি লাপাং, আর সি লালু বা এস সি মারাকের নাম ভেবে রেখেছে।
এ দিকে, তুরা উপ-নির্বাচনের অসমে এনডিএ সরকার গড়তে পেরে। এই জয় দেশের মোদী সরকারের বিকাশেরই স্বীকৃতি।’’
প্রধানমন্ত্রী মোদী ভাষণ দিতে উঠতেই শঙ্খধ্বনি দেয় জনতা। তিনি বলেন, “বিকাশের স্বপ্ন দেখেন বলেই অসমের জনতা সর্বাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। উপজাতি যুব নেতা এ বার অসমের নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, রাজ্যকে নতুন উচ্চতায় তুলে আনতে সব রকম সাহায্য করবে কেন্দ্র। সর্বার নেতৃত্ব অসম দেশকে নতুন শক্তি দেবে।’’ প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘‘অসম-বাংলা-বিহার ভারতকে নতুন আর্থিক শক্তি দিতে পারে।’’
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বক্তৃতায় সর্বানন্দ বলেন, ‘‘সকলের উন্নতি করাই এই সরকারের লক্ষ্য হবে। অসম বিদেশিমুক্ত হবে। প্রদূষণমুক্ত হবে। দেশের সেরা সমৃদ্ধ রাজ্য হবে। এ বার থেকে বরাক-ব্রহ্মপুত্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলবে। সকলে যেন বিকাশের সমান সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রইল আমাদের।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্তের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন সর্বা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy