পুরীতে রথযাত্রা ঘিরে আবার বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ উঠল। শুক্রবার ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন প্রায় ৬০০ জন। রবিবার পদপিষ্ট হয়ে গুণ্ডিচা মন্দিরের সামনে প্রাণ হারালেন তিন জন। অসুস্থ বেশ কয়েক জন। এই ঘটনায় পুলিশ এবং প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্য থেকে উপস্থিত ভক্তেরা। নিহত এক মহিলার স্বামীর দাবি, বার বার পুলিশ, দমকলকর্মীদের ডেকেও সাড়া মেলেনি। প্রশাসন যদিও সেই দাবি মানেনি। জানিয়েছে, আচমকা গুণ্ডিচা মন্দিরের সামনে ভিড় বৃদ্ধি পাওয়ায় পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে এই ঘটনায় ভক্তদের কাছে ‘ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছেন। মৃতদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। দোষীদের শাস্তির কথাও জানিয়েছেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে পুরীর জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বদলির কথা ঘোষণা করা হয়।
রবিবার ভোর ৪টে থেকে সাড়ে ৪টের মধ্যে এই ঘটনা হয়েছে। শুক্রবার গুণ্ডিচা মন্দিরে রথ পৌঁছোনোর কথা থাকলেও তা সে দিন গন্তব্যে পৌঁছোতে পারেনি। শনিবার দুপুরে সেখানে পৌঁছোয় জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার রথ। রবিবার মন্দিরে প্রবেশ করার কথা রয়েছে তিন বিগ্রহের। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় দর্শন বন্ধ হয়ে যায় জগন্নাথের। ভোর পৌনে ৪টে নাগাদ আবার দর্শন শুরু হয়। এই আচারকে বলে ‘পাহুদা’। সেই ‘পাহুদা’-র সময় হুড়োহুড়ি পড়ে যায় গুণ্ডিচা মন্দিরের সামনে। তখনই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তিন জনের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম প্রতিভা দাস ফেমালে (৫২), প্রেমকান্ত মোহান্তি (৭৮), বাসন্তী সাহু (৪২)। তিন জনেই খুরদা জেলার বাসিন্দা। প্রশাসন সরকারি ভাবে জানিয়েছে, এই ঘটনায় ছ’জন অসুস্থ হয়েছেন। তবে বেসরকারি সূত্র বলছে, আহতের সংখ্যা অনেক বেশি।
আরও পড়ুন:
বাসন্তীর স্বামী বলেন, ‘‘ভোরবেলা গুণ্ডিচা মন্দিরের সামনে ছিলেন প্রায় ৫০ হাজার ভক্ত। পাহুদা খুলতেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনেক পুলিশকর্মী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। প্রায় ২০০-৩০০ জন পড়ে যান। আমরা পুলিশের কাছে সাহায্য চাই। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছিলাম। জল চেয়েছিলাম। এক ফোঁটা জলও দেয়নি পুলিশ।’’
পুলিশ যদিও এই দাবি মানেনি। পুরীর পুলিশ সুপার বিনীত আগরওয়াল জানিয়েছেন, গুণ্ডিচা মন্দিরের সামনে অনেক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তদন্তের পরেই পুরোটা প্রকাশ করা হবে। পুরীর জেলাশাসক সিদ্ধার্থশঙ্কর স্যেন জানান, পাহুদা খুলতেই আচমকা দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ন’জনের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন জনের মৃত্যু হয়। বাকি ছ’জন এখন স্থিতিশীল। ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পুরীর জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার, দু’জনকেই অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। পুরীর নতুন এসপি হয়েছেন পিনাক মিশ্র। নতুন জেলাশাসক হয়েছেন চঞ্চল রানা।