Advertisement
E-Paper

সকাল থেকে বিকেল থেকে রাত— প্রধানমন্ত্রীর একটি দিন

অজস্র মানুষ আসছেন। কারো হাতে ফুলের মালা, কারো হাতে ফুলের স্তবক, নিদেন পক্ষে একটি ফুল। শুধু রাজধানীর মানুষ নয়।

পূরবী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৯:৩৬
ইন্দিরা গাঁধী।—ফাইল চিত্র।

ইন্দিরা গাঁধী।—ফাইল চিত্র।

১ নং আকবর রোড। প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থানের সংলগ্ন একটি বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্যই রেখে দেওয়া আছে। সেখানে তিনি সর্ব-সাধারণের সঙ্গে দেখা করেন প্রতিদিন সকালে। সবুজ ঘাসে ঢাকা লন। আর আছে বড় বড় গাছ, নাম জানা, না জানা নানা জাতের মৌসুমী ফুল আর ফলের গাছ। রাস্তার ধারে খাঁচায় কিছু পোষমানা পশু আর পাখি। ভোরবেলা দেখা যাবে নাতি রাহুল তার দাদীর হাত ধরে খাঁচার পাশে দাঁড়িয়ে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে, নয়তো বাগানে ছুটোছুটি করছে।

সওয়া আটটা বাজল। ইন্দিরাজী চললেন পাশের বাড়িতে দর্শনার্থীদের সামনে। আমিও প্রায়ই যাই। গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে ভাল লাগে। অজস্র মানুষ আসছেন। কারো হাতে ফুলের মালা, কারো হাতে ফুলের স্তবক, নিদেন পক্ষে একটি ফুল। শুধু রাজধানীর মানুষ নয়। দূর-দূরান্তের শহর গ্রাম গঞ্জ থেকে শ্রমিক, কৃষক, যুবক, ছাত্র, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা— কেউই বাদ নেই। ভাষা তাঁদের আলাদা, পোশাক ভিন্ন, কাপড় পরবার কায়দাও আলাদা আলাদা। কেউ বাঙালী ধাঁচে, কেউ সামনে শাড়ির প্রান্ত ঝুলিয়ে গুজরাতী ধরনে, কেউ মালকোছা দিয়ে শাড়ি পড়ে, রাজস্থানী ঘাঘরা, কাশ্মীরী ওড়না, হিমাচলী কাঁচুলি কিছু বাদ নেই। দেখতে ভাল লাগে। মনে হয়, এত রকমারী পোশাক, এত বিভিন্ন ভাষা, এক ধর্মের সঙ্গে এক ধর্মের কত ব্যবধান— তবু ভারতাত্মা এক অভিন্ন। বৈচিত্রের মধ্যে এই একতা সৃষ্টি শুধু ভারতেই সম্ভব। আর সেই ভারতেরই প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের সংস্কৃতির প্রতীক, জীবন্ত মাতৃমূর্তি। এত ভাল লাগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে দেখতে যখন অজস্র মানুষ তাঁকে ঘিরে অভিনন্দন জানায়। মা বলে কেউ ডাকছে, কেই বহিনজী, কেউ বলছে দিদি। তিনি যেন তখন হয়ে যান ওদের ঘরের একান্তের একটি মানুষ। সকাল সাতটা থেকে ভিড় জমতে শুরু করে বন্ধ দরজার সামনে। পৌনে আটটা নাগাদ সদর দরজা খুলে দেওয়া মাত্র একীকে লাইন করে, কখনও বা দলবদ্ধ হয়ে ঢুকতে শুরু করেন কাতারে কাতারে মানুষ। নিজের অসহিষ্ণু প্রকৃতির দিকে তাকাই আর মনে মনে ভাবি— সারা ভারতের সমস্ত দায়িত্ব যার কাঁধে, কী করে তিনি প্রায় প্রতিদিন দেখা করছেন হাসি মুখে শতাধিক মানুষের সঙ্গে, কী সুন্দর প্রশান্তির সঙ্গে শুনছেন তাঁদের কথা, কোন বিরক্তি নেই। ধৈর্যের সঙ্গে প্রত্যেকের প্রতিটি কথা শুনছেন, যদি প্রতিকারের মত কথা থাকে সঙ্গে সঙ্গে একান্ত সচিবদের কাউকে ডাকছেন, লিখে নিতে বলছেন। অনেকে বা মুখে না বলে লেখা কাগজ ধরিয়ে দিচ্ছেন। সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে— চলবে ১০টা পর্যন্ত। কেউ আসছেনে একা, কেউ বা দল বেঁধে। এক পাশে রয়েছে মাথার উপর আচ্ছাদন, বসবার কুরসি। তাতে সিকি লোকেরও জায়গা হবে না। যদি সবাইকে কুরসিতে বসতে দিতে হয়। বাগানের সর্বত্র কুরসি দিয়ে বোঝাই করে দিলেও চলবে না। তাই ব্যবস্থা রয়েছে শতরঞ্চির। গুচ্ছে গুচ্ছে বসে আছেন দর্শনার্থীরা। হাতে মালা, ফুল আর্জির কাগজ। শুধু দেখা করলেই হবে না। ইন্দিরাজীর সঙ্গে ছবি তোলাও চাই। তারও ব্যবস্থা আছে। ক্যামেরা কাঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক ব্যক্তি। তার কাজই হল শুধু ছবি তোলা। আকাশবাণী ভবনে কোথায় তার স্টুডিও ঠিকানা আছে। ছবির খরচা দিলে তারিখ মিলিয়ে ঠিক বের করে নেওয়া যাবে ছবির কপি। আমার মত প্যাচার মুখ যাঁদের নয় তাঁরা নিশ্চয় সেই ছবি বড় করে বাঁধিয়ে রাখবেন। ইন্দিরাজীর সঙ্গে পরম মুহূর্তটিকে স্মরণে রাখার জন্য।

কেমন ধরনের লোকেরা আসেন দেখা করতে? একটি দিন আরেকটি দিন করে যদি রোজনামচা ঘেটে দেখা যায়, তবে দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রীর দিনগুলো কেমন কাটে। যে কোনও একটি দিন বেছে নিই। গত ১৩ নভেম্বর। গিয়েছিলুম সকাল ৯ টায় ১ নম্বর আকবর রোডে। গিয়ে দেখলুম তিনি এক এক বার দর্শনার্থী এক একটি দলের সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। পাশ কাটিয়ে আসতে গিয়ে দেখলুম ঝুঁকে পড়ে একটি ছোট্ট শিশুকে আদর করছেন। বাচ্চাটির গলায় নিজের পাওয়া মালা পরিয়ে দিচ্ছেন। মৃদু হাসলেন আমায় দেখে। সরে এক কোণে দাঁড়ালুম। তার আগে জিজ্ঞেস করলুম, ‘কখন থেকে’? বললেন, ‘আজ ঠিক আটটা দশ থেকে, তুমি প্রায় এক ঘন্টা লেট’। নিত্য হাজিরা দিই না, দিতে ভাল লাগে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পাই কেমন করে তিনি জনতার মনে শান্তি আত্মবিশ্বাস জাগাচ্ছেন। একটি দুঃখীর মুখ ইন্দিরাজীর সামনে হাসিতে প্রসন্নতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, সেই প্রসন্নতা সেই হাসিই আবার ইন্দিরাজীকে শক্তি জোগায়। তাই জনতার প্রীতি, বিশ্বাসই তাঁর নেতৃত্বের উৎস,শক্তির উপাদান। জনসাধারণ তাদের আকুন্ঠ সমর্থন এবং অবিচলিত বিশ্বাস দিয়ে নিজেরা শক্তিশালী হন আর তাদের নেত্রীকে শক্তিশালী করেন। জনসাধারণকে তিনি প্রেরণা দেন আর জনশক্তি তাকে প্রেরণা দেয়। জওহরলালকেও দেখেছি, যখন তিনি ক্লান্ত বোধ করছেন, বিশ্রামের জন্য মন উন্মুখ হয়েছে, শহরে কিংবা শহরের বাইরে, কোন গ্রামে গিয়ে তিনি জনসভা করছেন। তাঁর জনসভা মানে তো জনসমুদ্র। আর ভাষণ মানে তো নিদেনপক্ষে একটি ঘণ্টা। বিশ্রাম হল কই ক্লান্তির। কিন্তু ফিরে এলেন তিনি সম্পূর্ণ সতেজ, নতুন শক্তি নিয়ে। বার বার দেখা গেছে এই দৃশ্য। কী করে এ সম্ভব হত? হত কারণ জনসাধারণের অকুণ্ঠ প্রীতি শ্রদ্ধা বিশ্বাস তার ক্লান্তি দুরকরত, নতুন উদ্যম দিত। কন্যা ইন্দিরাও ঠিক এই প্রকৃতিটির উত্তরাধিকারী। জনতার সমর্থন এবং প্রেরণা তাঁকে দেয় নতুন উদ্যম নতুন প্রেরণা। তাই ইন্দিরা আজ ভারতের অবিসংবাদী নেতা।

ফিরে আসি ১৩ নভেম্বর দিনটিতে— সওয়া ন’টা বাজল। তখনও নতুন নতুন আসছেন দলবেঁধে। একটি বৃদ্ধাকে দেখলুম। অপূর্ব দৃশ্য। নিজের শক্ত সমর্থ ছেলের কাঁধে চেপে ঢুকলেন। সামনের শামিয়ানার তলায় রাখা চেয়ারে ছেলেতাকে পাঁজাকোলা করে নামালেন। ইন্দিরাজী ছুটলেন। অসুস্থ কি? সেবার বা চিকিৎসার প্রয়োজন আছে? না, অশীতিপর বৃদ্ধার ইচ্ছে— ক’দিন বা জীবনের বাকি আছে, একবার ইন্দিরা বেটীকে দেখিয়ে নিয়ে আয়। সেই একবার তাদের শহরে ইন্দিরাজী গিয়েছিলেন। আবার কি দেখা হবে? কে জানে! ‘দিল্লিতে নিয়ে গিয়েই আমাকে দেখিয়ে নিয়ে আয়।’ মায়ের ইচ্ছে ছেলে রাখবে না? ক’দিনই বা মা আর বাঁচবে! চলতে পারেন না, চোখের জ্যোতি কমে এসেছে। ছেলে কাঁধে চাপিয়ে রুগ্ন মাকে নিয়ে এসেছেন ইন্দিরা বেটীকে দেখাতে। ইন্দিরাজী পাশে দাঁড়িয়ে কিন্তু বৃদ্ধা ভাল করে মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। আরো ঝুঁকে পড়ে দেখতে চাইছেন। ইন্দিরাজী বুঝতে পেরে তিনিও ঝুঁকে নিজের মুখখানা আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরতে চাইছেন। বৃদ্ধা তার কাঁপা কাঁপা হাতখানা দিয়ে ইন্দিরাজীর মুখখানায় হাত বুলিয়ে আগের দেখা মুখের চেহারাখানা বুঝে নিতে চাইছেন। দেখতে গিয়ে দর্শকদের চোখ ভিজে উঠল। এত পরম স্নেহ মায়ের মনে বেটী কি সাড়া না দিয়ে পারেন?

এই নিত্য ঘটছে। এই দৃশ্য ১ নম্বরে দাঁড়ালেই দেখা যাবে। সকাল থেকে সাড়ে ন’টার মধ্যে শতাধিক মানুষের সঙ্গে দেখা করলেন। তারপর এলেন একদল বিদেশিনী। সোভিয়েট রাষ্ট্রের ইউক্রেন এবং তুর্কমান দেশের সুপ্রীম সোভিয়েটের সদস্যরা। তাঁদের মধ্যে, পরমচক্র পাওয়া বীরাঙ্গনা, সঙ্গে আবার নামকরা অভিনেত্রী। বর্তমানে ভারত সফরে এসেছেন। এত দূর থেকে এসেছেন, প্রবল আগ্রহ প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর দেশজোড়া এত নামডাক— একবার তাঁকে দেখবেন, দুটি কথা বলবেন, সঙ্গে নিয়ে একটি ছবি তুলবেন। তাঁদের দেশের ভাষা রাশিয়ান নয়। সঙ্গে দোভাষী। যারা তাদের ভাষা থেকে রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করবেন রাশিয়ান থেকে আরেকজন ইংরেজিতে। পরম আগ্রহ নিয়ে তাঁরা দেখা করে গেলেন।

ঘড়িতে তখন পৌনে দশ। এক বিরাট দল এলেন। এঁরাও বিদেশী মহিলা। অল্প বয়স্কা। মধ্য বয়স্ক সাথী ভারতীয় কটি পুরুষ এবং মহিলা। আমার পরিচিত। সকলেই শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়। জিজ্ঞেস করলুম পরদেশীয়াদের পরিচয়। বললেন, এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা শ্রমিক আন্দোলন সংক্রান্ত শিক্ষাগ্রহণ করতে এদেশে এসেছেন বিশেষ শিক্ষণ সূচীতে। জাপান, ফিলিপিন্স, নিউজিল্যাণ্ড, ক্যানাডা কেউ বাদ নেই।এশিয়ার বাইরেও। দেখা করে, আলোচনা করে তারা যখন গেলেন তখন দশটা দশ।

১০-২০ মিনিট। প্রধানমন্ত্রী সাউথ ব্লকে নিজের দফতরে পৌঁছে গিয়েছেন। শুরু হয়েছে সরকারি দফতরের নথি পুঁথি দেখার কাজ। উৎসুক হলুম-দিনের শেষে সংগ্রহ করব কী কী করলেন সারা দিন ধরে। যা দেখেছি, সারাদিনের দেখা সাক্ষাতের কাজ কি শেষ হয়েছে? নাকি সবে শুরু? সংগ্রহ করেছি দিনপঞ্জী। তাই তুলে দিলুম হুবুহু।

১৩ নভেম্বর-

১০.৩০ মি- আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য

১০. ৫০ মি- আইনমন্ত্রী

১১. ১৫ মি- বিদ্যুৎ ও শক্তি মন্ত্রী

১১. ৩০ মি- কেরলের মুখ্যমন্ত্রী

১২ টা দ্বিপ্রহর- ডঃ জি রি য় ন মেক্সিকো দেশের ডিরেক্টর জেনারেল (টেলিফোন সংস্থা)

১২.৩০ মি- এথনো লজিকেল সায়েন্স কংগ্রেস সংস্থার পক্ষে ডেপুটেশন

১. ১৫ মি- নিজস্ব দফতরের অফিসার তিনজন

১. ৩০ মি- স্নান-আহারের জন্য এক ঘণ্টার অবকাশ

২. ৩০ মি- গান্ধীজীর সহকর্মী বিবি আব্দুল সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ

২.৪৫ থেকে ৪ টে পর্যন্ত দফতরের কাজ

৪. ৩০ মি- আট জন সাংসদ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ

৪. ৫০ মি- দফতরের কাজ। দলের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ (মন্ত্রী এবং অফিসাররা)

৫ টা থেকে ৭ টা- অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল ইন্সটিটিউটে গিয়ে ‘জওহরলাল নেহরু বক্তৃতামালার বক্তৃতা দান।

৭ .১৫ মিনিটে গৃহে প্রত্যাবর্তন। রাত্রির আহারের পর পুনরায় সরকারী কাজ- রাত প্রায় দশটায় সে দিনের মত কাজ শেষ ।

এই ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর জীবনের একটি দিন। এমনি দিনের পর দিন। এই সাক্ষাৎসূচীটি যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে— শিক্ষাসংক্রান্ত, আন্তর্দেশীয়, আন্তরাষ্ট্রীয় এক বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে তাকে অবাধে বিচরণ করতে হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর এই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হচ্ছে। কোন একজন বিশেষজ্ঞ তিনি তার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তাঁকে সব জানতে হবে, বিশেষজ্ঞরা যে সব সমস্যা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তাঁর কথাই যখন শেষ কথা তখন সম্পূর্ণ জেনেই তাকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এ অত্যন্ত কঠিন কাজ। তার প্রতিজ্ঞা–প্রতিশ্রুতি পালন করবই। তাই বিশ্রামের কথা ওঠে না।

আজ তাঁর জন্মদিন। প্রার্থনা করি— তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা হোক। ভগবান তাকে রক্ষা করুন, শতজীবী করুন।

[আনন্দবাজার পত্রিকা, নভেম্বর ১৯, ১৯৭৫]

Indira Gandhi's birth centenary Indira Gandhi Indian Female Prime Minister ইন্দিরা গাঁধী শতবর্ষে প্রিয়দর্শিনী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy