Advertisement
E-Paper

সংসদে স্লোগান রাহুলের, জেটলির পাল্টা আক্রমণ

সংঘাতের প্রায় প্রথম পর্বেই পরস্পরের সব চেয়ে দুর্বল জায়গায় ঘা দিয়ে বসল কংগ্রেস ও বিজেপি। নরেন্দ্র মোদীর নাম না করেই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁকের অভিযোগ আনলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে তিনি আজ লোকসভায় বলেন, “সংসদে এখন এমন পরিবেশ যে, দেশে যা কিছুই হোক, তা নিয়ে শুধু এক জনের কথাই শোনা হবে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫২

সংঘাতের প্রায় প্রথম পর্বেই পরস্পরের সব চেয়ে দুর্বল জায়গায় ঘা দিয়ে বসল কংগ্রেস ও বিজেপি। নরেন্দ্র মোদীর নাম না করেই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁকের অভিযোগ আনলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে তিনি আজ লোকসভায় বলেন, “সংসদে এখন এমন পরিবেশ যে, দেশে যা কিছুই হোক, তা নিয়ে শুধু এক জনের কথাই শোনা হবে।”

নিশানা যে মোদী সেটা স্পষ্ট। বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসায় সরকার ও দলে মোদীর একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে আরএসএসের অন্দরে ও বিজেপি নেতাদের একাংশে। ফলে বিশেষ এই স্পর্শকাতর বিষয়ে খোঁচা খেয়েই বিজেপি পাল্টা আক্রমণ শানাতে আজ টেনে আনে কংগ্রেসে পরিবারতন্ত্রের কথা। লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিঁধেছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী নিজে বারবার রাহুলকে কখনও শাহজাদা কখনও সাহাবজাদা বলে কটাক্ষ করেছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইস্তক তিনি ব্যক্তি রাহুলের প্রতি প্রকাশ্যে সৌজন্যই দেখিয়ে আসছিলেন। কিন্তু নিজের দলেই চাপের মুখে থাকা রাহুল তাঁর দিকে আঙল তুলতেই কাটল ছন্দ।

বিজেপি সূত্রের খবর, মোদীর নির্দেশেই আজ রাহুলের রাগের আঁচে জল ঢালার ভার হাতে নেন তাঁর নির্ভরযোগ্য সেনাপতি অরুণ জেটলি। রাহুলের দুর্বল স্থানটিতে আঘাত করতে জেটলি বলেন, “কংগ্রেসের প্রাসাদেই এখন অভ্যুত্থান হচ্ছে। দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠিত নেতারা শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। সে দিক থেকে নজর ঘোরাতে সংসদে শান্তিভঙ্গ করা হচ্ছে কেন? স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়েই বা কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? এর থেকে উনি নিজের দলকে ঠিকমতো নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন।” রাহুলকে কটাক্ষ করে জেটলি এ-ও বলেন, “সংসদে যিনি কখনও মুখই খুললেন না, তিনিই এখন অভিযোগ করছেন, কেন বলতে দেওয়া হচ্ছে না!” জেটলির এই খোঁচার তোয়াক্কা করছেন না এই বার্তা দিতে সনিয়া গাঁধী এ দিন বলেন, “ওঁরা যা ইচ্ছে হয় বলুন!”

রাহুলের আদৌ কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে কি না, সে প্রশ্ন আগেও উঠেছে। কিন্তু লোকসভা ভোটে দলের ভরাডুবির পর এ নিয়ে রীতিমতো কাটাছেঁড়া চলছে প্রকাশ্যে। প্রিয়ঙ্কা বঢড়াকে সংগঠনের দায়িত্বে আনার দাবিও উঠছে দলে। এর মধ্যে রাহুলের এই আচমকা জ্বলে ওঠা স্বাভাবিক ভাবেই নজর কেড়েছে সকলের।

এটা কি চাপে থাকা রাহুলের ক্ষোভের আচমকা প্রকাশ? নাকি সবটাই পরিকল্পিত? কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার ইঙ্গিত দ্বিতীয় সম্ভাবনার দিকেই। তাঁর বক্তব্য, রাহুল ঘরে-বাইরে চাপের মুখে রয়েছেন ঠিকই। কিন্তু দল যাতে খোয়ানো মনোবল দ্রুত ফিরে পায়, সে জন্য এ রকম রণং দেহি হওয়ারই দাওয়াই দিচ্ছেন তিনি। তাঁর নির্দেশেই সংসদে বিমা বিল রুখে দিতে কোমর বেঁধে নেমেছেন আনন্দ শর্মারা।

রয়েছে আরও একটি উদ্দেশ্য। তা হল মোদীর আমেরিকা সফরের আগে, তাঁকে বেকায়দায় ফেলা। গোধরা-কাণ্ডের জেরে এক সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল আমেরিকা। এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে যখন আমেরিকা স্বাগত জানাচ্ছে, তখন ফের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ খুঁচিয়ে তোলাই কংগ্রেসের উদ্দেশ্য।

উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি একাধিক জায়গায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আজ সংসদে মুলতবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল কংগ্রেস। স্পিকার সম্মতি দেননি। এর পরেই সংসদের বাইরে গিয়ে স্পিকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করেন রাহুল। পরে লোকসভার জিরো আওয়ারে বিষয়টি ফের তোলেন কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁর বক্তব্য ছিল, মুলতবি প্রস্তাব না হোক, এ ব্যাপারে অল্প সময়ের জন্য আলোচনা হোক। তার জন্যও নোটিস দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু স্পিকার তাতেও রাজি হননি। এরই পরই ওয়েলে নেমে পড়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন কংগ্রেস সাংসদরা। সামিল হন রাহুলও। দলের সতীর্থদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলেন, “স্বৈরাচার চলবে না।” এই প্রথম তাঁকে সভার ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে দেখা গেল।

সভা মুলতবি হতে লোকসভার লবিতে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে দেখা হয় রাহুলের। সূত্রের খবর, রাহুল তাঁর কাছেও স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করেন।

দলীয় সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ১২ নম্বর তুঘলক রোডে দলের শীর্ষ সারির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন রাহুল। সেখানেই স্থির হয়েছিল, এ ব্যাপারে সংসদ অচল করবে কংগ্রেস। এ ছাড়া, নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ও সে ব্যাপারে শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে মুখর হবে দল। সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই সংসদের বাইরে আজ মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “দেশে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত কয়েক সপ্তাহে ৬০০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এ সব নিয়ে যদি সংসদে আলোচনা না হয়, তবে কোন ঘটনা নিয়ে হবে?”

সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেসের দাবিতে আজ সায় দেয় আরজেডি এবং সমাজবাদী পার্টিও। শেষ পর্যন্ত স্পিকার জানান, এ ব্যাপারে চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে সংসদে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে পক্ষপাতের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে সুমিত্রা মহাজন বলেন, “কে কী বলছেন জানি না। আমি নিয়ম মেনে সভা চালানোর চেষ্টা করছি।”

এ দিনের এই চাপানউতোরে স্পষ্ট রাহুল এ বার ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। তাঁর নির্দেশে সংসদে, বিশেষ করে রাজ্যসভায় সরকারকে বেগ দিতে এখন চেষ্টার ত্রুটি রাখবে না কংগ্রেস। ফলে সংশোধিত বিমা বিল নিয়ে সমঝোতার আশা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়ল। কংগ্রেসের এক নেতা জানান, প্রথম বার ওয়েলে নেমে স্লোগান দেওয়ার সময় রাহুলকে কিছুটা অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু আগামী দিনে সংসদে তাঁকে এই রকম ভূমিকাতেই দেখা যাবে।

রাহুলের আক্রমণ মোকাবিলায় জেটলি আজ যে ভাবে মাঠে নামলেন, সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া রাহুলকে গোড়াতেই যাতে মোক্ষম আক্রমণে ফের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, সে উদ্দেশ্যেই আজ প্রাসাদে অভ্যুত্থানের কথা বলে খোঁচা দেন জেটলি। এর জবাবে রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ পাল্টা বলেন, “বিজেপিতে সদ্য অভ্যুত্থান হয়েছে তো, তাই জেটলির ঘোর কাটেনি এখনও।”

parliament rahul gandhi arun jetly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy