ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হওয়া ঘিরে বিতর্ক ছড়াল সংসদেও। আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য কী ভাবে অনুমতি মিলল, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন তুলে আসছে কংগ্রেস। এ বার ওই বিতর্ক পৌঁছে গেল সংসদ ভবনের অন্দরেও। বুধবার লোকসভায় কেন্দ্র জানায়, ওই প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রের ছাড়পত্রের পরেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এই জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি কংগ্রেস। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করছেন কংগ্রেস সাংসদেরা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে স্লোগান তুলতে থাকেন তাঁরা। পরে কংগ্রেস এবং ডিএমকে সাংসদেরা স্লোগান দিতে দিতে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন।
কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য, জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিদ্যুৎ খাতে নিরাপত্তার উচিত পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলা। তাঁর দাবি, ওই বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তা বিধি অনুসারে, কোনও বড় শিল্প আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে থাকতে হবে। এই প্রকল্পটির জন্য কোনও ছাড় দেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চান কংগ্রেস সাংসদ। জবাবে কেন্দ্রীয় নব এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী জানান, দেশের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনে আগ্রহী সরকার। এর জন্য অনুমোদন দেওয়ার আগে কেন্দ্র, রাজ্য সরকার এবং অন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার থেকে ছাড়পত্র চাওয়া হয়। সেই ছাড়পত্র মিলেছে।
কিন্তু কেন্দ্রের ওই উত্তর সন্তোষজনক নয় বলে দাবি করেন কংগ্রেস সাংসদেরা। প্রহ্লাদের জবাবের পরে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে লোকসভায় স্লোগান তুলতে থাকেন তাঁরা। শুরু হয় হট্টগোল। তার পরে কক্ষত্যাগ করে কংগ্রেস শিবির। ডিএমকে সাংসদেরাও তাঁদের সঙ্গে কক্ষত্যাগ করেন। পরে সংসদ চত্বরে তিওয়ারি বলেন, “বিদ্যুৎ খাতে নিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে একটি ভারসাম্যের প্রয়োজন রয়েছে। (গুজরাতের) খাভড়ায় একটি বড় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সেটি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। জাতীয় নিরাপত্তা বিধি অনুসারে, সীমান্তের ১০ কিলোমিটার মধ্যে কোনও শিল্প হতে পারে না। আমরা শুধু সেই প্রশ্নটাই করেছিলাম, কিন্তু উত্তর মেলেনি। তাই আমরা সংসদ বয়কট করেছি।” লোকসভায় কংগ্রেসের উপদলনেতা গৌরব গগৈর বক্তব্য, “কংগ্রেস কেবল জানতে চেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী কি জাতীয় নিরাপত্তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?” তাঁরও দাবি, সরকার পক্ষ কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি।
আরও পড়ুন:
বস্তুত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিদেশি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য সীমান্তের ‘নিরাপত্তা বিধি শিথিল’ করা হয়েছে। এর ফলে আদানি গোষ্ঠী সুবিধা পেয়েছে বলেও দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে। তার পর থেকেই কংগ্রেস শিবির কেন্দ্রকে এই প্রসঙ্গে বিঁধতে শুরু করেছে।