E-Paper

‘এ তো ভোটবন্দি’! কমিশনকে বিরোধীরা

এই বৈঠকে কংগ্রেস, আরজেডি থেকে বাম শিবিরের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন যে ভাবে ভোটারদের নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইছে, তাতে ২ কোটির মতো মানুষ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫ ০৯:২৮
নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বিজেপির ‘মিডলম্যান’-এর মতো আচরণ করছেন বলে অভিযোগ তুলল কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকারের ‘নোটবন্দি’-র মতো নির্বাচন কমিশন এ বার ‘ভোটবন্দি’ করে ভোটারদের বাতিল করে দিতে চাইছে। বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সেই বৈঠকে কোনও কোনও বর্ষীয়ান নেতা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে এ-ও মনে করিয়ে দেন, তিনি যেন সম্মান দিয়ে কথা বলেন, তা হলেই পাল্টা সম্মান পাবেন! মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আবার জানান, ‘এটা নতুন নির্বাচন কমিশন’।

বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জন নিয়ে আশঙ্কার কথা জানাতেই বুধবার সন্ধ্যায় ১১টি বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকটি করেন। এই বৈঠকে কংগ্রেস, আরজেডি থেকে বাম শিবিরের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন যে ভাবে ভোটারদের নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইছে, তাতে ২ কোটির মতো মানুষ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। বিরোধীদের দাবি, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিজেই বৈঠকে জানিয়েছেন, বিহারের প্রায় ২০ শতাংশ ভোটার রাজ্যের বাইরে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বিহারের বিধানসভা ভোটের ফল খুব কম ব্যবধানে নির্ধারিত হয়। তা সত্ত্বেও ভোটারদের বাদ পড়ার আশঙ্কা নিয়ে কোনও আশ্বাস দেননি। উল্টে তিনি জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের ভোটার তালিকা নিয়ে বিরোধীরা কারচুপির অভিযোগ তোলার পরেই বিহারের ভোটার তালিকা পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্রের খবর, বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এমন আক্রমণাত্মক ভাবে কথা বলছিলেন যে, তাঁকে থামিয়ে দিয়ে সমাজবাদী পার্টির সাংসদ হরেন্দ্র সিংহ মালিক বলেন, তিনি যেন কাউকে অপমান না করেন। তিনি তিন দশক ধরে ভোটে লড়ছেন বলে মনে করিয়ে দিয়ে হরেন্দ্র বলেন, ‘সম্মান দিন, তা হলে সম্মান পাবেন’। নির্বাচন কমিশন যে ভাবে কোন দলের কে দেখা করতে পারবেন, তা ঠিক করতে দিতে চাইছে, তা নিয়েও বিরোধীরা ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটা নতুন নির্বাচন কমিশন’।

কংগ্রেসের জনসংযোগ দফতরের চেয়ারম্যান পবন খেরা আজ অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘গত কাল কমিশনে গিয়ে মনে হচ্ছিল, ভুল ঠিকানায় এসেছি। নির্বাচন কমিশন বিজেপির সদর দফতরেই বসতে পারে। আমরা মিডলম্যানদের সঙ্গে কেন বৈঠক করব? সরাসরি বিজেপির সঙ্গেই কথা বলব!’’ সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আমাদের সময় দিয়েছেন। দেখা করেছেন। সমস্যার কথা শুনেছেন। এখানেই শেষ। কোনও আশ্বাস মেলেনি। কেন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে, এই পরিকল্পনা গোপন রেখে, আচমকা ২২ বছর পরে বিহারের ভোটার তালিকা পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হল— তার উত্তর মেলেনি। আমি তাঁকে বলেছি, মানুষ একে নোটবন্দির মতো ভোটবন্দি বলে আখ্যা দিচ্ছেন।’’

বিহারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ কুমারের প্রশ্ন, আধার, রেশন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমনকি ভোটার কার্ড, সব বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশন জন্মের শংসাপত্র চাইছে কেন? যে ৮ কোটি মানুষ গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ১২ মাসের মধ্যে কেন ফের ভোটার হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে? দীপঙ্কর বলেন, ‘‘জ্ঞানেশ কুমার শুধু বলেন, কোনও ‘যোগ্য’ ব্যক্তি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে না। কিন্তু যোগ্যতা ঠিক করবে কে? কমিশন নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Voter Election Commission of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy