E-Paper

ভোটার তালিকা নিয়ে কথা না হলে সংসদ কি অচল

গত শুক্রবার বিহারের পরিমার্জিত বিশেষ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সংশোধনের কাজ নিয়ে গোড়া থেকেই আলোচনা চেয়ে সরব রয়েছেন বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৭

—ফাইল চিত্র।

ভোটার তালিকার বিশেষ পরিমার্জন নিয়ে আলোচনা না হলে সংসদ অচল করে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইছেন বিরোধীরা। বিরোধীরা যদি সত্যিই ওই অবস্থান নেন, সে ক্ষেত্রে বাদল অধিবেশনের তৃতীয় সপ্তাহ ভেসে যেতে চলেছে।

গত শুক্রবার বিহারের পরিমার্জিত বিশেষ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সংশোধনের কাজ নিয়ে গোড়া থেকেই আলোচনা চেয়ে সরব রয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে, সরকার কিছু বিষয় লুকিয়ে রাখতে চাইছে বলেই এই নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, এ নিয়ে আলোচনা করতে হবে সংসদের উভয় কক্ষে। তা না হলে সংসদ চলার কোনও প্রশ্ন নেই। আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “ভোটার তালিকা পরিমার্জন, (যা আসলে ভোট চুরি) নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে অনায়াসে আলোচনা হতে পারত। কিন্তু বিজেপি ভয় পাচ্ছে বলেই হাঙ্গামা চালিয়ে অধিবেশন ভেস্তে দিতে চলেছে। আমাদের দাবি, এ নিয়ে আলোচনা চালাতে হবে।”

সরকারের যুক্তি, যে হেতু নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংবিধানিক সংস্থা, কোনও মন্ত্রকের আওতায় নয়, সে কারণে নির্বাচন কমিশন বা তাদের কাজকর্ম নিয়ে সংসদে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আজ এই প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, “আমরা আগামিকাল সরকারকে দেখিয়ে দেব, কোন উপায়ে ওই আলোচনা হওয়া সম্ভব।” সরকারের এই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে লোকসভার উপবিরোধী-দলনেতা তথা কংগ্রেসের গৌরব গগৈ বলেন, “আজকের দিনে মানুষের মনে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সেই জন্য দল আলোচনা চাইছে। কিন্তু সরকার কিছু একটা লুকোতে চাইছে। প্রশ্ন হল, সেটা কী? গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে ভোটের সময়ে যে কারচুপি হয়েছিল, সেই বিষয়টিই কি লুকোতে চাইছে সরকার?” গগৈয়ের কথায়, “আমজনতার ভোটার তালিকার সংশোধনের বিষয়ে জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সরকার বলছে, কমিশন কোনও মন্ত্রক বা দফতরের আওতায় নেই। সেই যুক্তি মানলে তো মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কোনও ভূমিকা থাকাও উচিত নয়।”

কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, উত্তর বিহারে বিরোধীরা যেখানে শাসক দলের থেকে বেশি শক্তিশালী, সেখানেই বেশি ভোটার বাদ পড়েছেন। কংগ্রেস সাংসদ মাণিকম টেগোরের মতে, উত্তর বিহারের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা কংগ্রেস ও আরজেডির শক্তিশালী ঘাঁটি বলে পরিচিত। যেমন গোপালগঞ্জে ১৫.১০% ভোটার বাদ গিয়েছেন, পূর্ণিয়ায় ১২.০৭%, কিসানগঞ্জে ১১.৮২% এবং মধুবনীতে ১০.৪৪% ভোটার বাদ গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এটা কোনও সাধারণ সংশোধন নয়। পরিকল্পিত ভাবে বিরোধী ভোটার বাদ দেওয়া হচ্ছে।” আর কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ পি চিদম্বরমের কথায়, “বিহারে ৬৫ লক্ষ লোকের নাম বাদ পড়েছে। অন্য দিকে তামিলনাড়ুতে যে ভাবে ৬.৫ লক্ষ ভোটারের নাম সংযুক্ত হয়েছে, তা যথেষ্ট চিন্তার ও সম্পূর্ণ অবৈধ। সব মিলিয়ে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের কাজ কৌতূহল বাড়িয়ে চলেছে।”

ভোটার তালিকার বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে আগামী ৭ অগস্ট বৈঠকে বসছে ইন্ডিয়া শিবির। সব ঠিক থাকলে ওই বৈঠক হবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করা এবং ৮ অগস্ট দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Monsoon Session of Parliament Special Intensive Revision Opposition Parties

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy