Advertisement
০২ মে ২০২৪
Election Commission of India

শিবসেনা-বিতর্কে ফের প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন

সম্প্রতি গুজরাতের ভোট ঘোষণার পরেও অভিযোগ ওঠে, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে নির্বাচন কমিশন দেরি করে গুজরাতের ভোট ঘোষণা করেছে।

Picture of ECI.

নির্বাচন কমিশন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৪
Share: Save:

গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। বিরোধীরা অভিযোগ তুলছিলেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের অধীনে করে ফেলেছে। সম্প্রতি গুজরাতের ভোট ঘোষণার পরেও অভিযোগ ওঠে, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে নির্বাচন কমিশন দেরি করে গুজরাতের ভোট ঘোষণা করেছে।

এ বার শিবসেনার নাম-প্রতীক মহারাষ্ট্রে বিজেপির জোটসঙ্গী একনাথ শিন্দের গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার পরে বিরোধীরা দাবি করলেন, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি মোদী সরকারের দখলে চলে গিয়েছে। উদ্ধব ঠাকরে তো বটেই, কংগ্রেস, আরজেডি-র মতো বিরোধী দলগুলিরও মতে, মোদী জমানায় নির্বাচন কমিশন নিজের স্বাধীনতা পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে।

শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরে আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ‘প্রধানমন্ত্রীর দাস’-এ পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘ইশারা’-তেই নির্বাচন কমিশন শুক্রবার রাতে শিবসেনার নাম, নির্বাচনী প্রতীক ‘তির-ধনুক’ ব্যবহারের অধিকার একনাথ শিন্দে গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছে।

কংগ্রেসও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে। কংগ্রেসের নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘যে সংস্থার দায়িত্ব হল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রক্ষা করা, সেই সংস্থাই পুরোপুরি আপস করেছে। এটাই নতুন ভারতের অমৃত কাল।’’ আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা-এর মতে, ‘‘খুব শীঘ্র নির্বাচন কমিশনকে এই সিদ্ধান্তের জন্য পস্তাতে হবে। মনে হচ্ছে, নতুন ভারতে নির্বাচন কমিশন ভুলে গিয়েছে যে, সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে তাদের কাজ করার কথা।’’

মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনা, কংগ্রেস, এনসিপি-র জোট সরকার ফেলে দিয়ে শিবসেনার একনাথ শিন্দের নেতৃত্বে কিছু বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েছেন। এ নিয়ে এখনও সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। কারা আসল শিবসেনা, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লড়াই চলছিল। সুপ্রিম কোর্টের ফয়সালার আগেই শুক্রবার কমিশন শিন্দে-গোষ্ঠীর হাতে শিবসেনার নাম-প্রতীক তুলে দিয়েছে। আজ উদ্ধব ঠাকরে তাঁদের ‘মাতোশ্রী’ বাসভবনের সামনে সমর্থকদের বলেছেন, মহারাষ্ট্রে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বালাসাহেবের মুখোশ দরকার পড়ছে।

শিবসেনার নাম-প্রতীক পাওয়ার পরে আজ মুখ্যমন্ত্রী শিন্দে বলেই িদয়েছেন, ‘‘অমিত শাহ আমাকে বলেছিলেন, ‘শিন্দেজি আপনি এগিয়ে যান। আমরা পাহাড়ের মতো আপনার পিছনে থাকব।’ তিনি তা করে দেখিয়েছেন।’’ আবার শাহ উদ্ধবের নাম না করেই বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য বিরোধী মতাদর্শের লোকেদের পদলেহন করতে গিয়েছিলেন।... নির্বাচন কমিশন ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ করে দিয়েছে।’’

বিরোধী নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে সেনার অভিযান বা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে নির্বাচনী ফায়দা তুলতে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু কমিশন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। কমিশনে বাকিদের সঙ্গে অন্যতম নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা একমত হননি। তার পরে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থাকে মাঠে নামানো হয়। সম্প্রতি গুজরাতে প্রধানমন্ত্রীর শিলান্যাস অনুষ্ঠান বাকি ছিল বলে নির্বাচন কমিশন দেরি করে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে। বিরোধীদের দাবি, শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, সিবিআই-ইডি থেকে সমস্ত সংস্থাই মোদী সরকার নিজের করায়ত্ত করে ফেলছে। এ বার তারা বিচার বিভাগকে করায়ত্ত করতে চাইছে।

কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘যখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন, সে সময় শিন্দে গোষ্ঠীর হাতে শিবসেনার নাম-প্রতীক তুলে দিতে কমিশনের মরিয়া পদক্ষেপ প্রমাণ করে, এই সংস্থাগুলিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বার করে আনা কত দরকার।’’ উদ্ধব ঘোষণা করেছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। শিবসেনার উদ্ধব-অনুগামী রাজ্যসভার সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন পুরো আপস করে ফেলেছে। বিজেপি নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডি-কে ভোটে জেতার যন্ত্রে পরিণত করেছে। পরের নিশানা হল বিচার বিভাগ। আইনমন্ত্রী, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বিচার বিভাগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন। এ বার সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব, গণতন্ত্রকে রক্ষা করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE