Advertisement
E-Paper

জেল থেকে বেরিয়েই নীতীশকে খোঁচা সাহাবের

শুক্রবার বিকেলেই আদালতের নির্দেশ এসে গিয়েছিল। তোড়জোড় শুরু হয়েছিল রাত থেকেই। এর পরে আজ সকাল সাতটাতেই হাজির হয়ে যান জেলার থেকে জেল সুপার, সকলে। ঠিক সওয়া সাতটায় জেল থেকে বের হয়ে এলেন তিনি, সিওয়ানের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিহারে আরজেডির দাপুটে ‘বাহুবলী’ নেতা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন।

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১২
মুক্তির পরে। ভাগলপুরে সাহাবুদ্দিন। ছবি: পি টি আই।

মুক্তির পরে। ভাগলপুরে সাহাবুদ্দিন। ছবি: পি টি আই।

শুক্রবার বিকেলেই আদালতের নির্দেশ এসে গিয়েছিল। তোড়জোড় শুরু হয়েছিল রাত থেকেই। এর পরে আজ সকাল সাতটাতেই হাজির হয়ে যান জেলার থেকে জেল সুপার, সকলে। ঠিক সওয়া সাতটায় জেল থেকে বের হয়ে এলেন তিনি, সিওয়ানের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিহারে আরজেডির দাপুটে ‘বাহুবলী’ নেতা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন।

আর বেরিয়েই প্রথম তোপটি দাগলেন আরজেডি-জেডিইউ জোটের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্দেশে! লালু-ঘনিষ্ঠ এই নেতার কথায়, ‘‘পাকেচক্রে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন নীতীশ! লালু প্রসাদই আসল নেতা। ন্যাচারাল চয়েস।’’ আর যে নীতীশ অধিকাংশ বিষয় ফুৎকারে উড়িয়ে দেন, এমন মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি সাহাবুদ্দিনের

নাম না করে বললেন, ‘‘কিছু মানুষের বেশি কথা বলার অভ্যাস আছে। আমি এই সব মন্তব্যের কোনও গুরুত্ব দিতে চাই না।’’ কর্মা উৎসবে যোগ দিতে নীতীশ আজ জামশেদপুরের গোপাল ময়দানে এসেছিলেন। সাহাবুদ্দিন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায় বিহারের আইন শৃঙ্খলার অবনতির কোনও সম্ভাবনা আছে কি? জোটসঙ্গী আরজেডি-র পরাক্রান্ত নেতা প্রসঙ্গে সতর্ক নীতীশের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আইন আইনের কাজ করছে। দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাহাবুদ্দিন জেলে গিয়েছিল। আবার জেল থেকে জামিনও সে পেয়েছে আইনি প্রক্রিয়াতেই। এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

গোটা চল্লিশ গুরুতর মামলা ঝুলছে সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। একটি মামলায় নিম্ন আদালত তাঁর বিরুদ্ধে সাজাও শুনিয়েছে। তবে আইনি জটিলতায় বেশির ভাগ মামলা স্থগিত রয়েছে। তাই প্রায় ১৩ বছর পরে জেল থেকে বেরিয়েও ফুরফুরে মেজাজে সিওয়ানের ‘সাহাব’। পরণে সাদা কুর্তা-পাজামা। জেল থেকে বেরিয়ে প্রায় ছ’শো গাড়ির কনভয় নিয়ে ভাগলপুর থেকে সিওয়ানের দিকে রওনা দেন তিনি। সেই কনভয়ে হাজির ছিলেন রাজ্যের অন্যতম শাসক দল আরজেডি তথা নীতীশের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের জনা তিরিশ বিধায়কও।

এ দিন ভোর চারটে থেকেই ভাগলপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জমতে থাকে ভিড়। রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন সাংবাদিকেরা। জেল থেকে বেরিয়ে সোজাসুজি সাংবাদিকদের সামনে চলে আসেন সাহাবুদ্দিন। রাজ্য রাজনীতি থেকে ব্যক্তিগত বিষয়, কোনও প্রশ্নেই তাঁর অনীহা ছিল না। তবে রাজ্য-রাজনীতিতে ঝড় তুলে দিয়েছেন নীতীশের মুখ্যমন্ত্রিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। বাহুবলী এই নেতার মন্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন আরজেডির সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ-সহ দলের বহু নেতা। আর সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের বিরোধিতায় নেমেছেন জেডিইউ নেতা শ্যাম রজক-সঞ্জয় সিংহরা।

গত ৭ সেপ্টেম্বর পটনা হাইকোর্ট থেকে ‘অ্যাসিড হত্যাকাণ্ড মামলা’য় জামিন পান সাহাবুদ্দিন। সাত মাসেও নিম্ন আদালতে বিচার শুরু না হওয়ায় আদালত তাঁকে জামিন দেয়। রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী অভিযোগ করেন, ‘‘রীতিমতো পরিকল্পনা করেই রাজ্য সরকার সাহাবুদ্দিনকে জেল থেকে বের করল। সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনও মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করতে দেয়নি রাজ্য সরকার। আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করব।’’ তবে সুশীল মোদীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ সাহাবুদ্দিন। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘‘বিহারের কেউই সুশীল মোদীকে সিরিয়াসলি নেয় না!’’

২০০৫ সালে নীতীশ কুমার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই সিওয়ানের তৎকালীন সাংসদ সাহাবুদ্দিনকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯৮৬ সালে সিওয়ানের সদর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। তার পর থেকেই একের পর এক অপরাধ করলেও কোনও ব্যবস্থাই কার্যত নেয়নি পুলিশ। ১৯৯০ সালে লালু প্রসাদের হাত ধরে জনতা দলে ঢোকেন তিনি। তার পরে আর থেমে থাকেননি। রাজনীতি আর অপরাধের মিশেলে উত্তর বিহারের বেশির ভাগ এলাকায় তিনিই হয়ে ওঠেন অঘোষিত শাসক। সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে শুরু করেন তিনি।

দু’ডজন খুন আর অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০১ সালে সিওয়ানের তৎকালীন পুলিশ সুপার বাচ্চু সিংহ মিনার সঙ্গে বিরোধ বাধে সাহাবুদ্দিনের। দু’তরফের গুলিযুদ্ধে কম করে ১০ জনের মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি থেকে একে ৪৭-সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়। তখনও গ্রেফতার হননি সাহাবুদ্দিন। ২০০৩ সালে সিপিআইএমএল নেতা মুন্না চৌধুরিকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালে দুই ভাই গিরিশ রাজ এবং সতীশ রাজকে অ্যাসিডে ডুবিয়ে খুনেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরে গিরিশ-সতীশের আরও এক ভাই রাজীব রোশনকে একই কায়দায় খুন করা হয়। ২০০৭ সালে সিপিআইএমএল নেতা ছোটেলাল গুপ্ত হত্যাকাণ্ডে ১০ বছরের সাজা হয় তাঁর। ওই বছরই পুলিশ সুপারকে আক্রমণের দায়ে ১০ বছরের সাজা হয় তাঁর। তবে দু’টি মামলাতেই উচ্চ আদালতে জামিন পেয়ে যান তিনি।

Mohammad Shahabuddin Nitish Kumar Bail
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy