বিক্ষোভ: ভোপালে করণী সেনার জমায়েত। সোমবার। পিটিআই
গোল বেধেছিল ছবির শ্যুটিং শুরুর সময় থেকেই। দীর্ঘ আইনি জট পেরিয়ে আর মাত্র তিন দিন পরে গোটা দেশে ছবিটির মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘পদ্মাবত’ নিয়ে বিতর্ক এখনও থামল না।
এক দিকে যখন ছবির মুক্তি আটকাতে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে দুই রাজ্য, অন্য দিকে দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ আর তাণ্ডবও জারি রেখেছে রাজপুতদের সংগঠন করণী সেনা। তাদের দোসর হয়ে উঠেছে ক্ষত্রিয় সভা, রাজপুত উত্থান সমিতির মতো সংগঠনগুলি। নয়ডা থেকে উজ্জয়নী, গুজরাতের নানা অংশও আজ রাজপুত সংগঠনগুলির বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
গুজরাতের নানা অংশে আজ কার্যত তাণ্ডব চালিয়েছে করণী সেনা সমর্থকেরা। বিশেষত উত্তর গুজরাতে। মেহসানায় দু’টি সরকারি বাস পুড়িয়ে দেয় তারা। আগাম সতর্কতা হিসেবে রাজ্যের নানা অংশে বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। তার জেরে প্রবল হয়রানির মুখে পড়তে হয় অসংখ্যা যাত্রীদের। বাস পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল ভাডগাম, মেহসানা, পাটান, হিম্মতনগরের মতো এলাকায়।
নয়ডার একটি টোল প্লাজাতেও আজ ভাঙচুর চালিয়েছে করণী সেনার সদস্যরা। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে খবর ছিল সেক্টর ১৮-র একটি মলে চড়াও হবে সেনা সমর্থকেরা। সেই মতো ওই মলে যাওয়ার রাস্তা অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছতে না পেরে ডিএনডি উড়ালপুলের টোল প্লাজায় হাঙ্গামা বাধায় তারা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ডজনখানেক সেনা সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পদ্মাবতের মুক্তি উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে রাজধানী দিল্লিতেও। ছবি মুক্তির প্রতিবাদে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর রাস্তায় অবরোধ করে করণী সেনা। রাস্তায় পুড়েছে টায়ার। গাড়িতে ছোঁড়া হয়েছে পাথর। যা থেকে আতঙ্ক ছড়ায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরপ্রদেশেও ‘পদ্মাবত’ যাতে মুক্তি না-পায়, তার জন্য আগাম হুমকি দিয়ে রাখছে করণী সেনা-সহ বিভিন্ন সংগঠন। লখনউয়ের যে হলগুলিতে পদ্মাবত চলবে, সেগুলি পোড়ানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে অল ইন্ডিয়া ক্ষত্রিয় মহাসভা।
আরও পড়ুন: ‘পদ্মাবত’ মুক্তি বন্ধ না হলে আত্মহত্যার হুমকি দিলেন রাজপুত মহিলারা
রাজস্থানের চিতোরেও রাজপুত মহিলারা ছবির মুক্তি আটকাতে জহর ব্রত পালনের হুমকি দিয়ে রেখেছেন কাল থেকে। তাঁদের দাবি, রাজপুত রানী পদ্মিনীর চরিত্র হানি করা হয়েছে ছবিটিতে। করণী সেনার বক্তব্য, ছবিটি রাজস্থানে মুক্তি পেলে অন্তত দু’হাজার রাজস্থানি মহিলা আগুনে ঝাঁপ দেবেন বলে অগ্রিম নাম লিখিয়ে রেখেছেন। সংগঠনের এক মুখপাত্রের বক্তব্য, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে সম্মান করেন। সেই সঙ্গে দেশের মানুষের ভাবাবেগকেও সম্মান করা উচিত।
রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত আর হরিয়ানা সরকার জানিয়েছিল তারা তাদের রাজ্যে ছবিটি নিষিদ্ধ করতে চায়। কিন্তু গত ১৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট একটি নির্দেশ জারি করে বলে, শুধু মাত্র আইন-শৃঙ্খলার অবনতির দোহাই দিয়ে কোনও রাজ্য একটি ছবির মুক্তি নিষিদ্ধ করতে পারে না। এ বার শীর্ষ আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান সরকার। তাদের দাবি, সিনেমাটোগ্রাফ আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও বিতর্কিত ছবির প্রদর্শনী ঘিরে হিংসা ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকলে, কোনও রাজ্যের প্রশাসন সেই ছবির মুক্তি আটকাতেই পারে। অভ্যন্তরীণ আবেদনটি আগামী কাল শুনতে রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ। কাল করণী সেনার আলাদা আবেদনও শুনবে শীর্ষ আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy