প্রত্যাঘাতে কি ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’! সূত্রের মতে, ভারতের অভিযানের ভয়ে গত রাত থেকেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চূড়ান্ত সতর্ক রয়েছে পাক বায়ুসেনা। সীমান্ত সংলগ্ন লঞ্চ প্যাড ও জঙ্গি শিবির থেকে জঙ্গিদের পিছিয়ে এসে গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিশে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে চট করে হামলা চালাতে না পারে ভারতীয় সেনা।
অতীতে উরি বা পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরে সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টা হামলার পথ বেছে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার পহেলগামে হামলার পরে কি সেই পথেই হাঁটবে ভারতীয় সেনা? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গোটা ভারত!
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের হামলা তৎক্ষণাৎ হয় না। সব ধরনের প্রস্তুতি সেরেই এমন অভিযান হয়। গত দু’টি ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল। তাই ভারতীয় সেনার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বললেই চলে। এ বারেও সেই প্রোটোকল মেনেই চলা হবে।
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পহেলগাম ঘুরে দিল্লি ফেরার পরেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে শুরু হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক। আড়াই ঘণ্টা চলে সে বৈঠক। আপাতত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছ’দফা কূটনৈতিক বাণ ছোড়ে ভারত। নয়াদিল্লির তরফে জানানো হয়, অবিলম্বে স্থগিত করে দেওয়া হচ্ছে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি। যত দিন না-পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে লাগাম টানবে, তত দিন সেই চুক্তি স্থগিত থাকবে। আটারি-ওয়াঘা সীমান্তও বন্ধ থাকবে। সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিকে ভিসা প্রদান প্রকল্পের আওতায় যে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া হয়েছিল, তা-ও বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। দু’দেশের দূতাবাস পুরোপুরি বন্ধ না করে দিলেও কার্যত গুরুত্বহীন করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিল ভারত। সামগ্রিক কর্মীর সংখ্যা নামিয়ে আনা হল ৫৫ থেকে ৩০-এ। উভয় দূতাবাস থেকেই স্থলসেনা, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর পরামর্শদাতাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সিন্ধু নদী ব্যবস্থা পাকিস্তানের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তি অনুসারে, পাকিস্তান সিন্ধু নদী ব্যবস্থার প্রায় ৮০% জল পায়, যা দেশটির খাদ্য উৎপাদন এবং জনসংখ্যার জীবিকার জন্য অপরিহার্য। ২০১৬ সালে উরি হামলার পরে মোদী বলেছিলেন, “রক্ত ও জল একসঙ্গে বইতে পারে না।’’ আজ কার্যত সেই নীতিরই পুনরাবৃত্তি হল। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, দিল্লির পদক্ষেপের জবাব দিতে আগামিকাল বৈঠক করবেন সে দেশের সামরিক বাহিনী ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব।
অনেকে মনে করছেন, আগামী দিনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো বড় মাপের পদক্ষেপ করতে চলেছে ভারত। যার ইঙ্গিত আজ দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ বলেন, “আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করবে। আমরা শুধুমাত্র এই হামলার অপরাধীদেরই নয়, পর্দার আড়ালে থেকে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করব। তারা শীঘ্রই এর জোরালো এবং স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবে।’’
পাশাপাশি আজ দুপুরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান ছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনাথ। সূত্রের খবর, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠকে সর্বোচ্চ সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য বলা হয়েছে তিন বাহিনীকে। পাশাপাশি জঙ্গিনিধন অভিযানকে আরও জোরদার করার জন্যও বলা হয়েছে।
সূত্রের মতে, এ ক্ষেত্রেও পাল্টা হামলা হিসাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু একটি বিষয় নয়াদিল্লিকে মাথায় রাখতে হচ্ছে যে, ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওই ওষুধ দু’বার প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে পাকিস্তানও যে কালকের পরে সতর্ক, তা বলাই বাহুল্য। আজ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘‘আমার আশা ভারত কোনও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ করবে না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)