Advertisement
E-Paper

কাশ্মীর জুড়তে না পেরে বৈঠক এড়াল পাকিস্তান

সমস্যার মূলে সেই কাশ্মীর। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেল ভারত-পাকিস্তান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক। ফলে কয়েক মাস আগে উফায় যে শান্তি প্রক্রিয়ার নতুন সূচনা করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী, তা বিনষ্ট হয়ে গেল অঙ্কুরেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৭

সমস্যার মূলে সেই কাশ্মীর। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেল ভারত-পাকিস্তান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক। ফলে কয়েক মাস আগে উফায় যে শান্তি প্রক্রিয়ার নতুন সূচনা করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী, তা বিনষ্ট হয়ে গেল অঙ্কুরেই। ভারত বিকেলে সাফ জানাল, সন্ত্রাস বন্ধ না হলে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। রাতে সেই ‘শর্ত মানা সম্ভব নয়’ বলে বৈঠকে যোগ দিতেই অস্বীকার করল পাকিস্তান।

ফলে সেই তিমিরেই রয়ে গেল দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক।

অজিত ডোভাল ও সরতাজ আজিজের বৈঠকে কাশ্মীর নিয়ে কথার দাবি জানিয়েছিল পাকিস্তান। ডোভালের সঙ্গে বৈঠকের আগে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করতে চেয়েছিলেন আজিজ। এই দু’টি বিষয় নিয়েই অনড় অবস্থান নিয়েছিল দিল্লি। দিল্লিতে আসা এক ঝাঁক হুরিয়ত নেতাকে আটকও করা হয়। ফলে, বৈঠক বাতিল হয়েছে। স্নায়ুর যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তাঁদেরই জয় হয়েছে বলে মনে করছেন মোদী সরকারের কর্তারা। ভারতের পক্ষে জানানো হয়েছে, দিল্লি কোনও পূর্বশর্ত দেয়নি। উফা বিবৃতি ও শিমলা চুক্তি মেনে চলার কথা বলেছিল। তা মানতে আগেই রাজি হয়েছিল পাকিস্তান। তাদের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।

এনএসএ বৈঠক নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের চাপ আজ আরও বাড়িয়ে দেয় পাক এনএসএ সরতাজ আজিজ ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সওয়াল-পাল্টা সওয়াল। শব্দের তির ছোড়া শুরু করেন সরতাজ আজিজই। আজ ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ ইসলামাবাদে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। তাঁর দাবি, উফা বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মীর-সহ সব

বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী আসলে চাইছেন, কাশ্মীরের কথা ভুলে যাক পাকিস্তান। সেটা সম্ভব নয়। আজিজের দাবি, কাশ্মীর সবচেয়ে বড় বিষয়। তাঁর আরও বক্তব্য, পাকিস্তান বছরের পর বছর ধরে হুরিয়তের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। তাই হুরিয়তের সঙ্গে কথা না বলার প্রশ্ন নেই। দিল্লিতে সাবির শাহ, বিলাল লোনের মতো হুরিয়ত নেতা আটক হওয়ায় উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।

ভারতের উপরে চাপ বাড়াতে আজিজ বলেন, ‘‘পাকিস্তানে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র-এর কার্যকলাপ নিয়ে আমাদের কাছে তিনটি নথি আছে।’’ তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘এনএসএ বৈঠক না হলে রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনের সময়ে আমরা ভারতকে এই নথিগুলি দেব। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব, কাশ্মীরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সামরিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলিকেও তা দেওয়া হবে।’’ আজিজের দাবি, ভারত বারবার সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি ভাঙছে। পাকিস্তান কেবল আত্মরক্ষা করছে।

এর পরেই পাল্টা আক্রমণে যায় দিল্লি। সুষমা স্বরাজ জবাবি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, উফা বিবৃতির ভূমিকায় সব বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এনএসএ বৈঠকে যে কেবল সন্ত্রাস-সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে, আর সেটাও সেখানে স্পষ্ট বলা আছে। শিমলা চুক্তি মানলে কোনও তৃতীয় পক্ষকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সামিল করার প্রশ্নই নেই। তাই হুরিয়তকে আলোচনায় অংশীদার করা যাবে না।

বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত-পাক বৈঠক মাত্রই ‘পূর্ণাঙ্গ’ (কম্পোজিট) আলোচনা নয়। কাশ্মীর-সহ আটটি বিষয় পূর্ণাঙ্গ আলোচনার সূচিতে রাখা হয়েছে। সন্ত্রাস থামলে তবেই কাশ্মীর নিয়ে কথা হতে পারে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদী শপথগ্রহণের দিন থেকেই আলোচনা চেয়েছেন।’’

র-এর কার্যকলাপ নিয়ে নথিকেও কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ওই নথি টিভিতে দেখানোর জন্য নয়। আলোচনার টেবিলে রাখার জন্য। আমরা তো পাকিস্তান থেকে আসা জীবন্ত জঙ্গিকেও হাজির করতে পারি।’’

বিদেশমন্ত্রীর দাবি, পাকিস্তান গোড়া থেকেই বৈঠক ভন্ডুল করতে চেয়েছে। উফা বৈঠকের পরে মোট ৯১ বার সংঘর্ষবিরতি ভেঙেছে পাক নিরাপত্তাবাহিনী। উধমপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়েছে পাক জঙ্গিরা। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তানের কিছু শক্তি এই বৈঠক হতে দিতে চায় না। ১০ জুলাই পাকিস্তানকে এনএসএ বৈঠকের দিন জানানো হয়েছে। প্রায় এক মাস সেটি ঝুলিয়ে রেখে পাকিস্তান ১৪ অগস্ট তার জবাব দেয়। বিএসএফ ও পাকিস্তান রেঞ্জার্স এবং দু’দেশের সেনার মধ্যে বৈঠক নিয়েও একই টালবাহানা দেখিয়েছে ইসলামাবাদ। তাতেই স্পষ্ট, তারা বৈঠক এড়াতে চাইছে।’’ সুষমার কথায়, ‘‘হুরিয়তের অংশীদারি বা কাশ্মীর নিয়ে কথা সম্ভব নয়। কেবল সন্ত্রাস নিয়েই এনএসএ বৈঠক হতে পারে। এটা বুঝে নিয়ে পাকিস্তান মাঝ রাতের মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানাক।’’ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পাক বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ভারতের শর্ত মেনে নেওয়া সম্ভব নয়, তাই আলোচনায় যোগ দিতে যাবেন না আজিজ।

তাতে কূটনীতির পাশাপাশি ঘরোয়া রাজনীতিতেও তাদের ফয়দা হল বলে মনে করছে মোদী সরকার। সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে না চেয়ে পাকিস্তান যে আসর ছেড়ে পালিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক শিবিরের কাছে এখন প্রচার করতে পারবে দিল্লি। আবার বিরোধীদের যোগ্য জবাব দিয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়াও তুলতে পারবে বিজেপি। নিষ্ফলা হবে জেনেও কেন বৈঠক করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী দল ক‌ংগ্রেস। তাদের দাবি, হুরিয়তকে প্রধানমন্ত্রী মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়াতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সুকৌশলে সন্ত্রাস থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে কাশ্মীর ও হুরিয়তের দিকে। কিন্তু ইসলামাবাদ কেবল সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনায় রাজি না হওয়ায় বিরোধীদের সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করছে মোদী সরকার। কী ভাবে এই ঘটনাকে বিজেপির প্রচারে ব্যবহার করা হবে, তা স্থির করতে আজ মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ।

তবে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে যে চাপানউতোর চলল দুই দেশের মধ্যে, তাকে ব্যাখ্যা করে সেরা মন্তব্যটা আজ কিন্তু করেছেন এক কাশ্মীরিই। তিনি ওমর আবদুল্লা, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এ যেন ঠিক টেনিস ম্যাচ!

Pakistan india kashimir jammu new delhi abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy