অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করেছে পাকিস্তান। ভারত থেকে আর কাউকে তাদের দেশে প্রবেশ করতে দিতে এখনই রাজি নয় ইসলামাবাদ। ফলে সমস্যায় পড়েছেন অনেক পাকিস্তানি। ভারত ভূখণ্ড ছেড়ে গেলেও নিজের দেশে ঢুকতে না পেরে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন অনেকেই। পাক সীমান্তের সামনেই অপেক্ষা করছেন তাঁরা। আর শুধু বার বার সেনা, পুলিশ বা কর্তাদের কাছে আকুতি, পাকিস্তানে ঢুকতে দেওয়া হোক! তেমনই এক মহিলার আর্জি, ‘‘আমার ছোট্ট ছোট্ট সন্তানেরা ওখানে (পাকিস্তান) আছে। তাদের কাছে আমাকে যেতে হবে। আমাদের দোষ কোথায়?’’
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলেছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, বেশ কিছু পদক্ষেপও করেছে। ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে পাকিস্তান প্রথম থেকেই ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের স্পষ্ট দাবি, পহেলগাঁও কাণ্ডের সঙ্গে কোনও যোগ নেই। যদিও ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপও করেছে পাকিস্তান। সেই দেশে থাকা ভারতীয়দের ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদ। বিশেষ কয়েকটি ভিসা ছাড়া প্রায় পাকিস্তানিদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ৩০ এপ্রিলই ছিল ভারত ছাড়ার শেষ দিন। তবে অনেকের অনুরোধের পর ভারত সরকার জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত পর্যাপ্ত কাগজপত্র থাকলে পাকিস্তানিরা ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পার হতে পারবেন! তবে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিপদে পড়েছেন অনেক পাকিস্তানি!
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ ছিল। তবে ভারত সরকার সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। পাক সীমান্ত বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার ভারত-পাকিস্তান, উভয় দেশ থেকেই কেউই এ পার, ও পার হতে পারেননি। ভারত থেকে পাকিস্তানে যেতে চেয়ে অনেকেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওয়াঘা সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুই বিবাহিত মহিলা। সম্পর্কে তাঁরা একে অপরের বোন। দু’জনেই পাকিস্তানে বিয়ে করেছেন। দিন কয়েক আগে ভারতে বাপের বাড়ি এসেছিলেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, দুই দেশের টানাপড়েনে আটকে পড়েছেন সীমান্তে।
ভারত সরকারের নির্দেশে পাকিস্তানে ফিরতে চেয়ে বৃহস্পতিবার ওয়াঘা সীমান্তে এসেছিলেন ওই দুই বোন। ভারত কর্তৃপক্ষ তাঁদের সীমান্ত পেরনোর অনুমতি দিলেও আটকে দেয় পাকিস্তান। কাঁদতে কাঁদতে এক বোন বলেন, ‘‘দয়া করে কেউ আমাদের সীমান্ত পার হতে দিন। আমাকে আমার সন্তানের কাছে যেতে হবে। আমাদের দোষ কী? যাঁরা আমাদের সন্তানদের থেকে আলাদা করছেন, আমি প্রার্থনা করি তাঁরাও যেন তাঁদের সন্তানদের থেকে আলাদা হয়!’’
অন্য বোনেরও চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তাঁর কথায়, ‘‘কোন আইনে বাবা-মাকে তাঁদের সন্তানদের থেকে আলাদা করে? আমাদের বাচ্চারা সেখানে কাঁদছে, আমাদের যেতে হবে।’’ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সীমান্ত অতিক্রম করতে বেশ কিছু ইচ্ছুক পাকিস্তানি নাগরিক জড়ো হয়েছিলেন। তবে সীমান্ত পার হতে না পেরে তাঁরা ভারাক্রান্ত, অসহায়! মহম্মদ শরিক বলেন, ‘‘আমি আমার বোনদের সঙ্গে সেই সাতসকালে সীমান্তে এসেছি। সকাল ১০টায় সীমান্ত খুলে যায়। কিন্তু ১১টার সময় জানানো হয়, ভারত সরকার আমাদের সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান চাইছে না।’’
বুধবার ১২৫ জন পাকিস্তান নাগরিক ভারত থেকে পাকিস্তানে গিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১১ জন। আর ১৫ জন ভারতীয় পাকিস্তান থেকে এ দেশে ফিরেছেন।