‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়ে যে পাকিস্তানই যে সংঘর্ষবিরতির জন্য উদ্যোগী হয়েছিল তা এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন পাক উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। তিনি জানিয়েছেন, ৬ ও ৭ মে পাকিস্তানের হামলার আগেই নুর খান ও শোরকোট বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারত। তার পরেই সৌদি বিদেশমন্ত্রী ফয়সল তাঁকে ফোন করে জানতে চান, ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানের হয়ে কথা বলতে পারেন কি না। সেই প্রস্তাব পাকিস্তান মেনে নেয়।
অন্য দিকে ভারতের সঙ্গে আকাশের লড়াইয়ে বড় ধাক্কা খাওয়ার পরে তাদের হাতে আসতে চলেছে চিনের ৪০টি শেনিয়াং জে-৩৫ যুদ্ধবিমান। যা যুদ্ধবিমানের পরিভাষায় ‘পঞ্চম প্রজন্ম’-এর বিমান হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিমান বর্তমানে ভারতের ভান্ডারে নেই বলে মেনে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। দেশীয় প্রযুক্তিতে এই ধরনের বিমান তৈরির কাজ চলছে। তবে তা ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসতে এখনও এক দশক সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তবে জে-৩৫ নিয়ে ভারতের এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ারকারণ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান খুব কম সংখ্যক দেশের হাতে রয়েছে। এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন রেডার এড়ানোর ক্ষমতা। সামরিক পরিভাষায় যার নাম ‘স্টেলথ’। অনেক পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানেই অস্ত্রশস্ত্রও বিমানের পেটের মধ্যে রাখা থাকে। কারণ, তাতে বিমান থেকে নির্গত তাপের সঙ্কেত (হিট সিগনেচার) কমে যায়। এই হিট সিগনেচার কম থাকলে রেডারের দৃষ্টি এড়ানো সহজ। ‘স্টেলথ’ যুদ্ধবিমান খুব স্বল্প পাল্লার মধ্যে না এলে রেডারে ধরা পড়ে না। ফলে প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনাও কমে যায়।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল ‘সুপারক্রুজ’। অর্থাৎ, দীর্ঘ সময় ধরে শব্দের চেয়ে বেশি গতিবেগে ওড়ার ক্ষমতা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কোনও নতুন বিমান বা যুদ্ধাস্ত্র হাতে এলে তা ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে যে কোনও দেশের বাহিনীরই কিছুটা সময় লাগে। ফলে এখনই এই বিমান নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তা ছাড়া পাকিস্তান যে বিমান হাতে পাচ্ছে তা জে-৩৫-এর রফতানির জন্য তৈরি সংস্করণ হতে পারে।তাতে জে-৩৫-এর সব বৈশিষ্ট্য না-ও থাকতে পারে।
ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন যুদ্ধবিমান চালক অজয় অহলাওয়াতের মতে, ‘‘পাকিস্তানের হাতে এই যুূদ্ধবিমান আসায় বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ, তাদের বিমানচালকদের একটি দল ছ’মাসের বেশি সময় ধরে চিনে প্রশিক্ষণনিচ্ছে। এই ধরনের বিমানেই তাদের প্রশিক্ষণ চলছে।’’
অন্য দিকে, ভবিষ্যতে পাক জঙ্গিঘাঁটিতে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনীর নতুন অস্ত্র হতে চলেছে ‘স্পাইস-২৫০’। ইজ়রায়েলি সংস্থা ‘রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস লিমিটেড’-এর তৈরি এই অস্ত্র নিয়ে আগ্রহী ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, মূলত তিনটি কারণে ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য এই অস্ত্র কেনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে নয়াদিল্লি। প্রথমত, ‘ডুয়েল সিগার’ (চার্জ কাপল্ড ডিভাইস অ্যান্ড ইমেজ়িং ইনফ্রারেড) থাকার কারণে এটি লক্ষ্যবস্তুকে অনেক দূর থেকে শনাক্ত করতে ও সঠিক ভাবে চিহ্নিত করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার এই কঠিন জ্বালানি চালিত বোমায় জিপিএস এবং ‘ইনর্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম’ বা আইএনএস (সেন্সর-যুক্ত পরিচালন ব্যবস্থা)-এর মাধ্যমে এটিলক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত ভাবে আঘাত করতে পারে। তৃতীয়ত, একটি স্পাইস-২৫০ বোমার ‘মাল্টিপল ওয়ারহেড’-এর মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সুবিধা। ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান সহজেই স্পাইস-২৫০ ব্যবহারকরতে পারবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)