রামেশ্বরম এবং মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যে একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে সংযোগ রক্ষা করে আসছিল পম্বন রেল সেতু। ১৯১৪ সালে তৈরি হওয়া ওই সেতু শেষ দিকে রুগ্ন হয়ে পড়ায় ২০২২ সালে সেখানে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এ বার নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি ওই সেতুতে ফের ট্রেন চলবে। রেল সূত্রের খবর, সমুদ্রের উপর নির্মিত নতুন সেতুর উপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন ছুটতে পারবে। প্রায় ৫৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি নতুন পম্বন সেতুর হাত ধরে পর্যটন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলবে বলেও মনে করছে রেল। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে নতুন সেতুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০২২ সালে পুরনো পম্বন সেতু বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মান্নার উপসাগরে পাথর এবং প্রবাল প্রাচীরের উপস্থিতির জন্য বড় আকারের জাহাজ চলতে পারে না। ছোট জাহাজ বঙ্গোপসাগর থেকে আরব সাগরের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে ওই পথে গেলে অনেকখানি দূরত্ব কমে। তাই প্রায় প্রায় ৬৪ মিটার লম্বা বাস্কিউল সেতুর দু’প্রান্ত চাকা ঘুরিয়ে উপরে তুলতে হত। তাতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগত। প্রয়োজন পড়ত ১৬ জন শক্তপোক্ত কর্মীর। নবনির্মিত সেতুর এই অংশের প্রযুক্তিও চমকে দেওয়ার মতো। ওই সেতুর ৭২ মিটার অংশ ভারতের প্রথম ভার্টিকেল লিফট বা উল্লম্বভাবে উত্তোলন করা যায় এমন প্রথম সমুদ্র সেতু। মোটর এবং ক্রেনের সহজে মাত্র সাড়ে পাঁচ মিনিট সময়ে জাহাজ চলাচলের পথ খুলে দেওয়া যাবে।
রেলের খবর, নতুন সেতুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ রাখতে বিশেষ প্রযুক্তি ছাড়াও দিনরাতের কন্ট্রোল রুম থাকছে। জাহাজ যাতে পথ ভুল করে সেতুতে ধাক্কা না-মারে তার জন্য সেতুর নীচে প্রায় ৫ মিটার গভীর জাহাজ চলাচলের পথে দিনরাতের জন্য বিশেষ আলো এবং ইস্পাতের গার্ড বসানো রয়েছে। নতুন সেতু ঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সইতে পারার উপযোগী করেও তৈরি হয়েছে। ওই সেতু নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আর শ্রীনিবাসন বলেন, ‘‘নোনা জল এবং আর্দ্র বাতাসে সেতুর ক্ষয় এড়াতেও বিশেষ সতর্কতা নিতে হয়েছে।’’
রামেশ্বরম পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। তেমনই মাছের উৎপাদনও সেখানে যথেষ্ট। নতুন সেতুর ফলে রেল যোগাযোগ ফের দৃঢ় হলে পর্যটকদের যেমন সুবিধা হবে তেমনই রামেশ্বমের মাছও অন্যত্র সহজে পৌঁছতে পারবে বলে মনে করছেন রেলের কর্তারা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)