Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উত্তপ্ত অসমে সেনা-কার্ফু, ত্রিপুরায় প্রতিরোধ

অসমে যখন এই অবস্থা, তখন  ত্রিপুরায় গত কালের হামলার জেরে আজ বহু জায়গায় অ-জনজাতিরা পাল্টা প্রতিরোধে নামেন। ধলাই জেলার কমলপুরে দু’পক্ষকে হঠাতে পুলিশ ১২ রাউন্ড গুলি চালায়।

নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদ চলাকালীন গুয়াহাটিতে। ছবি:এপি

নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদ চলাকালীন গুয়াহাটিতে। ছবি:এপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি ও আগরতলা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৭
Share: Save:

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-এর প্রতিবাদে গত কাল উত্তপ্ত হয়েছিল ত্রিপুরা। আজ অগ্নিগর্ভ হল অসম।

সিএবি নিয়ে অসমে কোনও সংগঠন আন্দোলনের ডাক দেয়নি। তা সত্ত্বেও হাজার হাজার প্রতিবাদী যুবক এ দিন পথে নেমে পড়েন, যাদের অধিকাংশই ছাত্রছাত্রী। অচল হয়ে যায় গুয়াহাটি। রাজধানী দিসপুরের সচিবালয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ফেলেন প্রতিবাদীরা। এই পরিস্থিতিতে আজ সন্ধ্যা থেকেই গুয়াহাটিতে কার্ফু জারি করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট, এসএমএস পরিষেবা। নামানো হয়েছে দু’কলাম সেনা। বঙাইগাঁও এবং ডিব্রুগড়েও দু’কলাম সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গুয়াহাটিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা অন্যত্র সরানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।

অসমে যখন এই অবস্থা, তখন ত্রিপুরায় গত কালের হামলার জেরে আজ বহু জায়গায় অ-জনজাতিরা পাল্টা প্রতিরোধে নামেন। ধলাই জেলার কমলপুরে দু’পক্ষকে হঠাতে পুলিশ ১২ রাউন্ড গুলি চালায়। মূলত জনজাতি প্রধান জেলাগুলিতে কোথাও লাঠি চালাতে হয়, কোথাও ছুড়তে হয় কাঁদানে গ্যাস। বহু এলাকায় জারি হয় ১৪৪ ধারা। অসম ও ত্রিপুরার জন্য ৫০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী উড়িয়ে আনা হয়েছে। কাশ্মীর থেকেই আনা হয়েছে ২০ কোম্পানি।

অসমের পরিস্থিতি প্রবীণদের আসুর ছাত্র-আন্দোলনের দিনগুলি মনে করিয়ে দিচ্ছে। আজ সকাল থেকেই গুয়াহাটির বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ছাত্র-যুবরা। রাত পর্যন্ত টায়ার জ্বালিয়ে, স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন রাস্তায় অবরোধ চলছে। ফ্যান্সিবাজার, পানবাজার, উলুবাড়ি, গণেশগুড়িতে সকালে দোকানপাট খুললেও পরে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। সব চেয়ে বড় জমায়েত হয় দিসপুরে সচিবালয় তথা ‘জনতা ভবন’-এর সামনে। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়, কটন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ব্যারিকেড ভেঙে জনতা ভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। আক্রান্ত হয় একাধিক বিজেপি নেতার বাড়ি এবং দলীয় দফতরও।

দিসপুর, গণেশগুড়িতে বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশকে শূন্যে গুলি চালায়। এবিসি, ডাউন টাউন, জি এস রোডে ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা হলে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে। কোথাও কাঁদানে গ্যাসের সেল তুলে নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে পাল্টা ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। সন্ধ্যায় দিসপুরে একটি বাসে আগুন লাগানো হয়। এর পরেই গুয়াহাটিতে কার্ফু জারির সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

আন্দোলন ছড়িয়েছে যোরহাট, গোলাঘাট, তিনসুকিয়া, শিবসাগর, বঙাইগাঁও, নগাঁও, শোণিতপুর-সহ বিভিন্ন জেলায়। ডিব্রুগড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হন বহু ছাত্রছাত্রী।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইট করেন, ‘‘উত্তর-পূর্বকে জনজাতিশূন্য করার চক্রান্ত চালাচ্ছেন মোদী-শাহ।’’ যদিও আজ রাজ্যসভায় বিল পেশ করে অমিত শাহ জানান, বিলে উত্তর-পূর্বের স্বার্থ যথাসম্ভব দেখা হয়েছে। জবাবি ভাষণেও তিনি বলেন, ‘‘অসমবাসীদের ভাষাগত ও সাংবিধানিক সব ধরনের অধিকার আমরা সুরক্ষিত রাখব। অসম চুক্তির ষষ্ঠ ধারা আমরা রূপায়ণ করব। এই বিল মোটেই অসম বা উত্তর-পূর্বের ভূমিপুত্রদের স্বার্থহানি করবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE