ছোট আমেরিকান সংস্থা— হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ-এর রিপোর্টের ধাক্কায় কেঁপে গিয়েছিল ১২,০০০ কোটি ডলার মূল্যের আদানি গোষ্ঠীর ভিত। সেই রিপোর্টে একমাত্র ভারতীয় সাংবাদিক হিসাবে নাম ছিল পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার। অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, আদানির বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চকে কি তথ্য জুগিয়েছিলেন তিনিই? বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে পরঞ্জয় জানালেন, রিপোর্টটি প্রকাশ পাওয়ার আগে হিন্ডেনবার্গের নামই জানতেন না তিনি।
তাঁর বিরুদ্ধে আদানি গোষ্ঠীর দায়ের করা মানহানির মামলা চলছে দেশের ছ’টি আদালতে। নিজেই জানালেন, আদালতের নির্দেশে আদানি গোষ্ঠীর সমালোচনা করা বারণ তাঁর। অতএব, প্রেস ক্লাবের লনে আদানি গোষ্ঠী এবং ভারতের বর্তমান শাসন বিষয়ে শুধু কিছু তথ্যের উল্লেখ করলেন পরঞ্জয়। জানালেন, মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে হিরে কেনা-বেচার ছোট ব্যবসা থেকে গত দু’দশকে গৌতম আদানির যে উত্থান ঘটেছে, এর আগে ভারতে কোনও শিল্পপতি বা ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর এত দ্রুত উত্থান হয়নি, এত অল্প সময়ে এত বিবিধ ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক উপস্থিতিও তৈরি হয়নি কারও। ভারতে সবচেয়ে বড় বেসরকারি কয়লা উৎপাদক সংস্থা আদানি, এনটিপিসি-র পরেই বৃহত্তম তাপবিদ্যুৎ উৎপাদকও। সিমেন্ট উৎপাদনেও দেশে দ্বিতীয় স্থানে আদানি গোষ্ঠী। সাতটি বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে, বহু নৌবন্দরও। ভোজ্য তেল থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, সব ক্ষেত্রেই আদানি গোষ্ঠীর উপস্থিতি প্রবল।
কেন, সেই কারণ ব্যাখ্যা করেননি পরঞ্জয়। শুধু মনে করিয়ে দিলেন, ২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রায় কুড়িটি বিদেশ সফরে সঙ্গী ছিলেন গৌতম আদানি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইজ়রায়েলে গিয়েছিলেন মোদী, এবং সেই সফরের পরেই ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংক্রান্ত ব্যবসায়িক বরাত পান আদানি। মনে করিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের এক ভূতপূর্ব বিদ্যুৎকর্তা বলেছিলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বন্ধুকে চটানো সম্ভব নয়। সভার সঞ্চালক অর্ক দেব মনে করিয়ে দিলেন, ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পর এক সর্বভারতীয় বণিক সভা যখন নরেন্দ্র মোদী বিষয়ে নিজেদের সংশয়ের কথা জানিয়েছিল, তখন গুজরাতে পাল্টা মোদীপন্থী বণিকসভা তৈরি হয়। গৌতম আদানি ছিলেন সেই বণিক গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ।
পরঞ্জয় তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্যগুলিকে এক সূত্রে গেঁথে নিলে যে ছবি ফুটে ওঠে, তা দেখার দায় নাগরিকের, মনে করিয়ে দিল সভা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)