অশোক কামতে ও বিনীতা কামতে
আবার সেই আতঙ্কটা ফিরে এল। সে দিনও রাতের দিকেই হঠাৎ এলোপাথাড়ি গুলি। পর পর বিস্ফোরণ। দেশটা বদলে গিয়েছে। আতঙ্কটা না। টিভিতে প্যারিস হামলার চেনা ছবিগুলো দেখে ভয়টা কিছুতেই পিছু হটছে না বিনীতা কামতে, শামিম শেখ, বিষ্ণু জেন্দে। ২৬/১১ মুম্বই হামলায় এঁরা কেউ স্বামী হারিয়েছেন, কারও স্ত্রী এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই আঘাতের চিহ্ন। কেউ বা নিজেই উপস্থিত ছিলেন হামলার জায়গায়।
শার্লি এবদোর স্মৃতি পুরনো হওয়ার আগেই শুক্রবার রাতে প্যারিসের আলাদা আলাদা ছ’টি জায়গায় লাগাতার বিস্ফোরণ। আর হামলার ছক দেখে তাতে ২০০৮-এ মুম্বইয়ের ২৬/১১ হামলার সঙ্গেই এর সব চেয়ে বেশি মিল খুঁজে পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ। জঙ্গিরা মূলত কালাশনিকভ আর গ্রেনেড নিয়েই শুক্রবার রাতে হামলা চালায়। এবং অত্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল মুম্বইয়ের নরিম্যান হাউস, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাল, তাজ হোটেলে। প্যারিসেও সেই চেনা ছক— এক জায়গায় গুলির লড়াই শেষ হয়নি তখনও, কিন্তু তার আগেই অন্য জায়গা থেকে আসতে শুরু করেছে বিস্ফোরণের খবর।
২৬/১১-র রাতে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনালেই ঘোষণা করছিলেন বিষ্ণু জেনডে। ঠিক সে সময় টার্মিনালে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে আজমল কসাব। সঙ্গে বন্ধু আবু ইসমাইল। আজও সেই মুখগুলো স্পষ্ট বিষ্ণুর স্মৃতিতে। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে প্যারিসের ঘটনার কথা জানতে পারার পর মুম্বই হামলার দৃশ্যগুলো ফিরে আসছিল।’’
কিন্তু এই হামলার কারণ কী? হামলাকারীরা নিজেদের ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে সকলের মনে তাদের সম্পর্কেই ভয় জাগিয়ে তুলছে না তো? এই প্রশ্নগুলো তুলেছেন বিনীতা কামতে। মুম্বই হামলার রাতে জঙ্গিদের হাতেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর স্বামী, মুম্বই পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার অশোক কামতের। যদিও জীবনের সঙ্গে এখন মানিয়ে নিয়েছেন তিনি, তবুও এ ধরনের ঘটনা আজও তাঁর দগদগে ঘায়ে আঘাত দেয়। বিনীতা বলেছেন, ‘‘পশ্চিমী দুনিয়া, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জোরদার, সেখানেও এ জাতীয় ঘটনা হওয়ায় আমি বিস্মিত!’’ তবে তিনি মনে করেন, এ পদ্ধতিতে কোনও দিনই ধর্ম প্রচার করা সম্ভব নয়। বরং সেই ধর্মাবলম্বী বাকিদের সম্পর্কেও অন্যদের মনে একটা ভীতি তৈরি হবে।
কৈতন ফ্রান্সিস ডিসুজা। ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের ফোর্ট ফায়ার স্টেশনের দমকলবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ অফিসার ছিলেন তিনি। প্যারিসের ছবি উস্কে দিয়েছে তাঁর স্মৃতিও। ঠিক যেমনটা বলেছেন মধু কপূর। মুম্বই হামলায় তাঁর স্বামীকে হারিয়েছিলেন মধু। প্যারিস আতঙ্কের দিনে হামলার জায়গার কাছেই একটি কাফেতে ছিলেন মধুর এক বন্ধু। মধু বলেন, ‘‘আমি ওর (বন্ধুর) থেকে ফোনে জানতে পারি ঘটনাস্থলের কাছেই একটি কাফেতে ছিল ও। কিন্তু প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি।... এখনও এমন হামলা হয় দেখে খুব রাগ হয়। আমরা যতই নিরাপত্তা আঁটোসাটো করি, ওরা ঠিক কোনও না কোনও ভাবে হামলা চালাবেই।’’
মুম্বই আক্রমণের রাতেই ছ’জন আত্মীয়কে হারিয়েছিলেন শামিম শেখ। তাঁর কথায়, ‘‘যেই শুনলাম প্যারিসেও ঠিক একই রকম আক্রমণ হয়েছে, এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমাদের হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।... ইসলাম তো শান্তির প্রচার করে। সন্ত্রাসবাদী হওয়ার শিক্ষা দেয় না এই ধর্ম।’’
বিনীতা, শামিম, বিষ্ণু— সবারই এক সুর। দেশ বদলালেও বদলায়নি সন্ত্রাসের ছবিটা। বদলায়নি আতঙ্কটা। তাঁদের কথায়, ‘‘আমাদের যন্ত্রণাটা আজ ওঁদেরও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy