Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জয়ধ্বনির লড়াই, সংসদ যেন নাট্যশালা

গত কালই পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরী শপথ নেওয়ার সময় ‘জয় শ্রীরাম’-এর প্রবল তর্জন শোনা গিয়েছিল বিজেপি বেঞ্চ থেকে। অথচ অন্যান্য রাজ্যের মন্ত্রীদের শপথ নেওয়ার সময় কিন্তু রামভক্তির এমন প্রাবল্য দেখা যায়নি।

ছবি সৌজন্য টুইটার।

ছবি সৌজন্য টুইটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

যা ছিল সাম্প্রতিক কালে বাংলায় রাস্তার লড়াই, আজ সেটাই উঠে এল সংসদে। শুধু শ্রীরাম নন, বহু দেবদেবীর জয়ধ্বনিতেই বারবার কেঁপে উঠল লোকসভায় রাজ্যের সাংসদদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। বিজেপির তূণ থেকে তৃণমূলের দিকে নিক্ষেপিত হয়েছে গুরুচাঁদ, হরিচাঁদ এবং জয় শ্রীরাম স্লোগান। পাল্টা প্রতিরোধে তৃণমূলও মাকালী থেকে নারায়ণ, দুর্গা হয়ে বাঙালি এবং বাংলা নিয়ে গর্জন করেছে। সব মিলিয়ে যে অভিনব চিত্রনাট্য আজ অভিনীত হল, যার নজির সংসদের সুদূর অতীত খুঁড়েও পাওয়া যাচ্ছে না।

গত কালই পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরী শপথ নেওয়ার সময় ‘জয় শ্রীরাম’-এর প্রবল তর্জন শোনা গিয়েছিল বিজেপি বেঞ্চ থেকে। অথচ অন্যান্য রাজ্যের মন্ত্রীদের শপথ নেওয়ার সময় কিন্তু রামভক্তির এমন প্রাবল্য দেখা যায়নি। আজ পশ্চিমবঙ্গের সাংসদরা শপথ নেওয়ার আগে চেয়ারে ছিলেন কে সুরেশ। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শপথবাক্য পাঠ করা ছাড়া অন্য কছু বলা বাঞ্ছনীয় নয়। কিছুই রেকর্ডে যাবে না। প্রত্যেকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছে।

কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যত গোল্লায় যায় রাজ্যের শপথ শুরুর পর। প্রথমে শপথ নিতে ওঠেন কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক। সেই শুরু ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। এর পর বিজেপি সাংসদরা যে যেমন স্লোগান দিয়েছেন, সঙ্গীরা চিৎকার করেছেন তার শত গুণ। সঙ্গে টিপ্পনি, যার সারাৎসার— আরও জোরে চিৎকার করা উচিত, তা হলে ‘দিদি’
শুনতে পাবেন!

মতুয়া সম্প্রদায়ের বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ঈশ্বরের নামে শপথ করার পরিবর্তে বারবার পূর্ণব্রহ্ম হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে শপথ নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেটা যে সংবিধান-বিরোধী, সেটা বেশ কয়েক বার জানানোর পর ক্ষান্ত হন শান্তনুবাবু। মালদহ (উত্তর) থেকে জয়ী বিজেপির খগেন মুর্মু ‘জয় শ্রীরাম’-এর পাশাপাশি ‘জয় মারাংবুরু’ স্লোগানও দিয়েছেন। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো দিয়েছেন ‘জয় জঙ্গলমহল’ স্লোগান। বিষ্ণুপুর থেকে বিজেপির টিকিটে জেতা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খান শপথ নিয়েছেন ‘জয় শ্রীরামকৃষ্ণ’ বলে।

তৃণমূলের সাংসদরা এক দিকে জয় শ্রীরামের পাল্টা হিসাবে বাংলা ও বাঙালির জয়ধ্বনি করেছেন, ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনি তুলেছেন, তেমনই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আউড়েছেন দুর্গা, কালী এবং নারায়ণস্তুতি। আবু তাহের খান ‘আল্লা হো আকবর’ বলেছেন। মালা রায় পৌঁছে গিয়েছেন ‘জয় মা মাটি মানুষ’ পর্যন্ত! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ নিতে ওঠার সময় প্রবল চিৎকার শুরু করে বিজেপি। জয় শ্রীরামের পাশাপাশি ছুড়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন টিপ্পনি। অভিষেক ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘‘আপনাদের ভালবাসা সঙ্গে থাকুক! এত ভালবাসা তো মোদীও পাননি!’’ তাঁর স্লোগান ছিল, ‘‘জয় হিন্দ, বাংলার জয় হোক!’’ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বিজেপির প্রবল ‘রাম’ বর্ষণের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ আস্ফালন করতে করতে শপথ গ্রহণ মঞ্চে যান। গলা সপ্তমে চড়িয়ে স্লোগান দেন, ‘জয় বাঙালি, জয় বাঙালি, জয় বাঙালি।’ সনিয়া গাঁধী টেবিল চাপড়ে অভিবাদন জানান তাঁকে। তারকা সাংসদ দেব শপথ নিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘‘পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখলে দেশের সেবা করতে সুবিধা হবে।’’ তাঁকে থামিয়ে স্পিকারের চেয়ার থেকে বলা হয়, এটি শপথ গ্রহণ মঞ্চ। এখানে শপথবাক্য ছাড়া আর কিছু বলার অবকাশ নেই।

তৃণমূলের অধিকাংশ সাংসদ শপথ নিয়েছেন বাংলায়। দিলীপ ঘোষ-সহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অনেককেই দেখা যায় সংস্কৃত এবং বাংলায় শপথ নিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Slogan Parliament BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE