কাছাড়ে শাক-সব্জি উদ্বৃত্ত হলেও আলু ও ডালজাতীয় শস্যের উৎপাদন বড় কম।
টম্যাটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, বেগুন, মুলোর মতো রবি-সবজি চাহিদার তুলনায় অনেকটাই বেশি। গত বছর ১৬ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমিতে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৯৬ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদিত হয়। কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭৬ হাজার মেট্রিক টন সব্জি উদ্বৃত্ত হয়েছিল সেই সময়। বরাক উপত্যকা ছাড়িয়ে কিছুটা মিজোরামে বিক্রি করা হয়।
কিন্তু আলু হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। ৩০ হাজার মেট্রিক টন। মটর, ফ্রান্সবিন, মুসুরির মতো ডালজাতীয় শস্য সব মিলিয়ে হয়েছে ৬ হাজার ৫৪ মেট্রিক টন। ৮ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে তা রোপণ করা হয়েছিল। কৃষি বিভাগ সূত্রে খবর, আরও অন্তত ১৯-২০ হাজার টন উৎপাদন বাড়ানো গেলে এই জায়গায় স্বয়ংস্বম্পূর্ণ হয়ে উঠত কাছাড়।
তেলজাতীয় শস্যের চাষ ও চাহিদায় ফারাক আরও বেশি। ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় মাত্র ১ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন। চাহিদা ২০ হাজার টনের বেশি।
জেলা কৃষি অফিসার জাকির হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, কাছাড়ে অর্ধেকের বেশি জমিতে বছরে এক বারই ফসল ফলানো হয়। এর দরুন ফসলের চাহিদা ও উৎপাদনে ফারাক ক্রমে বাড়ছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বছরে অন্তত দু’বার ফসল ফলানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। সে জন্য ৫ বছরের কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে নিয়েছে সেচ, মৃত্তিকা সংরক্ষণ, গ্রামোন্নয়ন প্রভৃতি বিভাগকেও। মোট ৭৩২ কোটি টাকার প্রকল্প-প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনায় এই অর্থ চেয়েছেন তাঁরা।
তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে চৌধুরীবাবু জানান, জেলায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লক্ষ ২৫ হাজার হেক্টর। বছরে দু’বার ফসল ফলানো গেলে ২ লক্ষ ৫০ হেক্টর জমির সমান ফসল হতো। কিন্তু এই সময় হচ্ছে মাত্র ১ লক্ষ ৮৬ হাজার হেক্টর। বিভাগীয় পরিভাষায় একে বলা হয় ‘গ্রস ক্রপিং এরিয়া’। জেলা কৃষি বিভাগের লক্ষ্য, চলতি বছরে আরও ৩ হাজার হেক্টর জমিকে দু-ফসলি করে তোলা। সে জন্য শাইল ধান কাটার পর বহু জমিতে মটর বীজ লাগাতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। সহজ পদ্ধতিও শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। ধান কাটার পর মাঠে ন্যাড়া (গাছের যে অংশ খেতে থেকে যায়) থাকা অবস্থায় জোরে ঢিল ছুঁড়লেই বীজ পোতার কাজ শেষ। কারণ তখন মাঠ এমনিতে ভেজা থাকে। আলাদা ভাবে মাঠ তৈরির প্রয়োজন পড়ে না। ফলে খরচ বেচে যায় অনেকটা। গত বছর এই পদ্ধতিতে শালচাপড়ায় সাফল্য মেলে বলে চৌধুরীবাবু জানান।
তাঁর কথায়, ‘‘একটু উদ্যোগী হলে জমিতে অনেক কিছুই করতে পারেন কৃষকরা।’’ তিনি জানান, রাজমা, কচু, মাসকলাই ফলন বেশ লাভজনক। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা ও জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশনেও এই জায়গায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই দুই প্রকল্পে কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৫৬২ কুইন্টাল মটর, ১৬৫ কুইন্টাল সর্ষে, ১৩৫ কুইন্টাল মুসুরি ও ৬০০ কুইন্টাল আলুর বীজ পাঠানো হচ্ছে।
কর্মীস্বল্পতা দূর করা গেলে বিভাগীয় তরফে যে আরও সহযোগিতা করা যেত, তাও উল্লেখ করেন তিনি। জেলা কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, ১৯টি ব্লক কৃষি অফিসারের পদ রয়েছে এখানে। ১৩টিই ফাঁকা। ভিএলইডব্লু নামে পঞ্চায়েত স্তরের কর্মী থাকার কথা ১৫০ জন। রয়েছেন মাত্র ৬১ জন।
অধিক জমি দু-ফসলি করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে জলসেচেরও। কারণ টিউবওয়েল বসাতে ১৫০ ফুট নীচে না গেলে জল মেলে না। এত গভীরতায় পাইপ পৌঁছনোর খরচে আবার কৃষি লাভজনক হয় না। তাই বৃষ্টিই ভরসা এখানকার কৃষকদের। তবে প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনায় এই সঙ্কটও মিটবে বলে আশা কৃষিকর্তার। কারণ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বিত এই প্রকল্পে মূল কাজের দায়িত্ব সেচ বিভাগের।
গ্রামীণ কৃষি বিকাশ কেন্দ্রের প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর আর শাহরিয়াও জানান, সেচের অভাবেই রবিশস্য কম হচ্ছে। বৈরাগীবাজারে ২০ বছর ধরে শাকসব্জি হচ্ছে না। সেখানকার সেচ প্রকল্প বন্ধ বলেই এই অবস্থা। অধিকাংশ এলাকায় একই সমস্যা। জেলার ১ লক্ষ ৮৬ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে মাত্র ৩৯৮ হেক্টরে সেচব্যবস্থা রয়েছে।
কৃষি বিকাশ কেন্দ্রের সমীক্ষায় প্রকাশ, জেলায় বর্তমানে ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৫০৯জন কৃষক রয়েছেন। কৃষি-শ্রমিক রয়েছেন আরও ৪৮ হাজার ১৫৩ জন।