নৈশক্লাবের দোতলায় তখন চলছিল ‘শোলে’ ছবির ‘মেহবুবা ও মেহবুবা’ গানটি। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচ চলছিল। সঙ্গীতশিল্পীরা ছিলেন। গানের আসর বেশ জমে উঠেছে। তালে তালে নাচও। যেখানে মঞ্চে নাচ হচ্ছিল, তার ঠিক পিছনেই সিলিংয়ে আগুনের শিখা দেখা গেল। তবে সে দিকে তখনও কারও নজর পড়েনি। গান আর নাচে সকলে মশগুল। আগুন একটু বাড়ল। তার সঙ্গে ধোঁয়াও। মঞ্চের উল্টো দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরই প্রথমে নজরে যায়। তত ক্ষণে সকলের চোখ আটকে গিয়েছিল ওই আগুনের দিকে।
ব্যান্ড, গিটার নিয়ে শিল্পীরা ছোটাছুটি শুরু করে দিলেন। নাচ, গানের সুর তাল থেমে গিয়ে চিৎকারে ভরে উঠল নৈশক্লাবের দোতলা। সেখানে তখন ১০০ জনের মতো ছিলেন। তার মধ্যেই এক জন নর্তকীর প্রশংসা করে বলে ওঠেন, ‘‘আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন তো আপনি!’’ তখনও কেউ আন্দাজ করতে পারেনি আগুনের গ্রাসে চলে যাবে গোটা নৈশক্লাব। ছোটখাটো আগুন ভেবেই প্রথমে সেটিকে নেবানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মঞ্চের সাজসজ্জায় থাকা সামগ্রী সেই আগুনকে নিমেষে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘ডিজে চলছিল। সকলে নাচছিলেন গানের তালে। সেই সময় ক্লাবেরই কয়েক জন কর্মকর্তা আতশবাজি পোড়ান। আর সেই আতশবাজির ফুলকি হোটেলের অন্দরসজ্জার সংস্পর্শে আসে। যেগুলি মূলত, তালপাতা, বাঁশ, ফাইবার এবং ঘাসের মতো জিনিস দিয়ে সাজানো হয়েছিল। সিলিংয়ে আগুন ধরে যায় প্রথমে। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।’’ আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, ওই মুহূর্তে ক্লাবের আলো নিবে গিয়েছিল। অন্ধকারে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তার পরই কিছু একটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল গোটা পরিসর। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।’’
কয়েক মিনিটের মধ্যে গোটা নাইটক্লাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পর্যটকেরা দোতলা দিয়ে নীচে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিসর ছোট থাকায় অনেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারেননি। অনেকে আবার বাঁচার জন্য একতলায় থাকা একটি রান্নাঘরে আশ্রয় নেন। সেখানে হোটেলের কর্মীরাও ছিলেন। তাঁরাও আটকে পড়েন। আগুন তো ছিলই, তার সঙ্গে হোটেলের বিভিন্ন জায়গায় সজ্জার জন্য যে সব জিনিস ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলি ছিল আরও দাহ্য। তালপাতা দিয়ে হোটেলের বিভিন্ন অংশে কাঠামো বানানো হয়েছিল। ফলে সব মিলিয়ে আগুনকে দ্রুত ছড়াতে সাহায্য করেছিল এই জিনিসগুলিই। এমনটাই মনে করছে দমকল। মুহূর্তে ভস্মীভূত হয়ে যায় নৈশক্লাবটি। আগুন ধরার মুহূর্তের একটি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে (যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। শনিবার রাতে উত্তর গোয়ার বির্চ নৈশক্লাবের আগুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৫। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগেরই ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।