ভাটিন্ডার সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার। ছবি: পি টি আই।
সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল উরি হামলার পরেই। গুঞ্জন উঠেছিল পাকিস্তানের সঙ্গে এই চুক্তি বাতিল করতে পারে ভারত। এ বার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার প়ঞ্জাবের ভাটিন্ডার জনসভা থেকে তাঁর হুঁশিয়ারি, শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতী নদীর এক ফোঁটা জলও পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না। এই তিনটি নদীর জল থেকে ভারতীয় কৃষকরা যাতে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করবে সরকার।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় হওয়া সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, ঝিলম, শতদ্রু, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা এবং সিন্ধুর ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানকে দেবে ভারত। কিন্তু শতদ্রু, বিপাশা ইরাবতী এবং তাদের শাখা নদীগুলির উপর পূর্ণ অধিকার থাকবে ভারতের। অর্থাৎ এই তিনটি নদীতে পরিবহণ, সেচ এবং বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে দিল্লির। একই রকম পাকিস্তানের পূর্ণ অধিকার সিন্ধু, ঝিলম, চন্দ্রভাগা এবং তাদের শাখা নদীগুলির উপর।
ভাটিন্ডায় এইমসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে আজ মোদী বলেন, ‘‘শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতী নদীর জল ভারত এবং আমাদের কৃষকদের প্রাপ্য। আমি এর প্রতিটি বিন্দু পঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর এবং দেশের অন্যান্য জায়গার কৃষকদের দেব। পাকিস্তানের মধ্যে বইতে দিয়ে এই জল নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘পাকিস্তানের চাষে এই তিনটি নদীর জল ব্যবহৃত হয় না। সমুদ্রে নষ্ট হয়।’’
গোটা বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি টাস্ক ফোর্সও গঠন করেছে কেন্দ্র। ইসলামাবাদকে চাপে ফেলতে মোদী জানান, এই টাস্ক ফোর্স সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা করবে। শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতীর জলের প্রতিটি বিন্দু যাতে পঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরের চাষিরা পান, তা-ও নিশ্চিত করবে টাস্ক ফোর্স। মোদীর কথায়, ‘‘এই বিষয়ে (নদীর জল) নিজেদের অধিকার ছেড়ে দেওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ তবে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী মাসেই ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিতে অমৃতসরে আসছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিদেশনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। তাঁর এই ভারত সফরের আগে এ দিন পাক পার্লামেন্টে আজিজও জানিয়েছে, পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। কিন্তু আলোচনার তালিকায় কাশ্মীর সমস্যার বিষয়টি রাখতে হবে।
ভৌগোলিক ভাবেই শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতী নদী বয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের উপর দিয়ে। তাদের জল পাকিস্তানে যাওয়া আটকাতে কি তবে নদী তিনটির উপর বাঁধ দেওয়া হবে? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মেলেনি।
তবে বিষয়টি নিয়ে আগের ইউপিএ সরকারকে এক হাত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নদীর জল পাকিস্তানে বয়ে গেল আর কেন্দ্রের সরকার ঘুমিয়ে রইল। আর আমার কৃষক ভাইরা জলের জন্য চোখের জল ফেলতে লাগলেন।’’
উরি হামলার জবাবে কূটনৈতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারত। এ দিন ভাটিন্ডার জনসভা থেকে এই অভিযানের প্রশংসা করলেন মোদী। তাঁর দাবি, ‘‘পাকিস্তান এখনও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। এর আগে ভারতীয় সেনা নিজেদের শক্তি দেখাতে পারেনি। কিন্তু এখন পাকিস্তান বুঝতে পেরেছে ভারতীয় সেনার শক্তি কতটা।’’
এ দিন পাক জনতার মন জয়েরও চেষ্টা করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘পেশোয়ারে স্কুলে বাচ্চাদের খুনের ঘটনায় ১২৫ কোটি ভারতবাসীর চোখও জলে ভিজে গিয়েছিল। প্রতিটি ভারতবাসী পাকিস্তানের যন্ত্রণাকে অনুভর করেছিলেন।’’ প্রধানমন্ত্রীর মতে, কোনও দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করার বদলে দেশের কালো টাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাসকদের লড়াই করতে বলুক পাকিস্তানের জনতা। ‘‘কিন্তু ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তান নিজেদের ক্ষতি করছে এবং নিরীহ মানুষদের মারছে’’, মন্তব্য মোদীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy