Advertisement
E-Paper

দ্বিমুখী কৌশলে কট্টর লাইন অমিতের, উন্নয়নবাদী মোদী

মোহন ভাগবত সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার দাবি তুলেছিলেন। আর আজ খোদ প্রধানমন্ত্রী সেই সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়ে বললেন, আমি যখন আছি, তখন সংরক্ষণ নীতিতে কোনও বদল হবে না। এমনকী, তিনি নিজেকে অম্বেডকরের ভক্ত বলেই অভিহিত করেছেন।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ২০:৫৪

মোহন ভাগবত সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার দাবি তুলেছিলেন। আর আজ খোদ প্রধানমন্ত্রী সেই সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়ে বললেন, আমি যখন আছি, তখন সংরক্ষণ নীতিতে কোনও বদল হবে না। এমনকী, তিনি নিজেকে অম্বেডকরের ভক্ত বলেই অভিহিত করেছেন।

গতকাল দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে অরুণ জেটলি দেশভক্তির কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বলেছেন, তাঁর অগ্রাধিকার: উন্নয়ন, উন্নয়ন এবং উন্নয়ন।

জেএনইউ কাণ্ডে কানহাইয়া বিরোধী দলীয় অভিযান, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনায় স্মৃতি ইরানির পাল্টা উগ্র জাতীয়তাবাদ আর আজ প্রধানমন্ত্রী? মেলাবেন তিনি মেলাবেন।

আরও পড়ুন: সংরক্ষণ নিয়ে ফের মোদীকে চাপ ভাগবতের

বিজেপি সূত্র বলছে, কানহাইয়া কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেছিলেন, আরও বেশি উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক লাইন নিয়ে এগোনো প্রয়োজন। তাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়বে, কিন্তু লাভ হবে বিজেপির। তখনই অবশ্য লালকৃষ্ণ আডবাণী শুধু নন, মোদী ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু নেতাও আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, বিহার নির্বাচনে হিন্দুত্বের যে মেরুকরণ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে, তা এখন সফল হবে কী করে? অমিত শাহের পাল্টা যুক্তি ছিল, বিহারে হিন্দুত্ব যে কাজ করেনি, তা নয়। তার চেয়েও বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল জাতপাতের লালু-নীতীশ সমীকরণ। তাই এই মেরুকরণের রাজনীতিকে বর্জন করা অনুচিত।

সংসদের বাজেট অধিবেশনে স্মৃতি ইরানি সোচ্চার হয়েছিলেন। আর তাই দেখে দলের বহু নেতাই স্মৃতিকে অনুসরণ করে একই ভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে মোদী-অমিত শাহের ‘অনুগত সৈনিক’ সাজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, স্মৃতি ইরানি সংসদে দাঁড়িয়ে যা বলেছেন, সেটিই যথেষ্ট। এই নিয়ে আর প্রচার প্রয়োজন নেই। বিশেষত ২৫ এপ্রিল থেকে আবার সংসদের অধিবেশন বসবে। সেখানে মোদী চাইছেন, যাতে অন্তত কিছু বিল পাশ হোক। অতএব উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কৌশলে এ বারে এসেছে ‘ধীরে চলো’ নীতি।

মোদী লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন উন্নয়নের স্লোগান তুলে। আর এখন আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার যে ভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদকে মূলধন করতে চাইছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি তবে দ্বৈত রণকৌশল? এক দিকে দল জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে জাতীয়তাবাদের জয়ধ্বনি দিচ্ছে। অন্য দিকে মোদী বলছেন, উন্নয়নই তার প্রধান আলোচ্যসূচি। তবে কি নির্বাচনের জন্য দল ব্যবহার করবে জাতীয়তাবাদ বিতর্ককে? আর মোদী সুষ্ঠু প্রশাসন দেখানোর জন্য উন্নয়নের স্লোগান দেবেন? প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, বিজেপি সর্বদাই মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরে হিন্দুত্ববাদী শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের মুখপাত্র। কিন্তু কানহাইয়া কাণ্ডের পর এটি স্পষ্ট, ভারতের মতো বহুত্ববাদী সমাজে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সরকার সঙ্কীর্ণতাবাদী, এই প্রতিচ্ছবি নরেন্দ্র মোদী শুধু নন, সামগ্রিক ভাবে বিজেপির জন্য ভাল নয়।

অবশ্য এ ব্যাপারে হুট করে লাইন বদলে রাজনৈতিক ডিগবাজিতেও রাজি নন নরেন্দ্র মোদী। তাতে প্রতিপক্ষের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে মোদীকে। তাই এক দিকে অমিত শাহ বলছেন, বাক-স্বাধীনতার নামে জাতীয়তাবাদ বিরোধিতাকে সহ্য করা যায় না। আবার নরেন্দ্র মোদী ক্রমশ ধীর গতিতে উন্নয়নের পথে হাঁটতে চাইছেন। বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে রামমন্দির আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু বাজপেয়ী তা থেকে নিজেকে দূরে রেখে ‘দ্বিতীয় নেহরু’ সাজার চেষ্টা করেছেন। গোধরা কণ্টকিত নরেন্দ্র মোদীর প্রথম থেকেই সেই সুযোগ ছিল কম। কিন্তু তিনিও আপাতত সেই পথেই চলতে চাইছেন। তা পাকিস্তানের সঙ্গে মৈত্রীই হোক, দলিত সংরক্ষণ হোক অথবা উন্নয়নের বিষয় হোক।

বিজেপির এক শীর্ষনেতা বললেন, সিপিএমে নভেম্বর বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, এ কথা এখনও প্রস্তাবে লেখা হয়। রামমন্দির আন্দোলন কার্যত মৃত বাবরি মসজিদ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে। কিন্তু এখনও রামমন্দির নির্মাণের কথা বিজেপির লিখিত কর্মসূচি। তাই জাতীয়তাবাদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এবং কিছু চিৎকার থাকলেও ধীরে ধীরে উন্নয়নের স্লোগানে ফিরতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী।

national news amit shah narendra modi reservation PM Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy