Advertisement
০১ মে ২০২৪

স্বামীকে দুরমুশ করে জেটলির পাশে মোদী

প্রথম রাউন্ডে জিতলেন অরুণ জেটলি। নিজের অর্থমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে তুলোধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্টই বললেন, কেউ যদি নিজেকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার থেকে বড় বলে মনে করেন, তা হলে তিনি ভুল করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০৪:০৭
Share: Save:

প্রথম রাউন্ডে জিতলেন অরুণ জেটলি। নিজের অর্থমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে তুলোধোনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্টই বললেন, কেউ যদি নিজেকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার থেকে বড় বলে মনে করেন, তা হলে তিনি ভুল করেছেন।

সঙ্ঘ পরিবারের পছন্দের স্বামীকে সম্প্রতি মনোনীত সদস্য হিসেবে রাজ্যসভায় এনেছে বিজেপি। কিন্তু তার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে নাজেহাল শাসক দল। স্বামী তাঁর জেহাদ শুরু করেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনকে আক্রমণ করে। স্বামীর অভিযোগ, রাজন ভারতের অর্থনীতিকে ‘ধ্বংস’ করছেন, কারণ তাঁর দায়বদ্ধতা ভারতের থেকে আমেরিকার প্রতি বেশি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হওয়া সত্ত্বেও রাজন কেন আমেরিকার গ্রিন কার্ড নবীকরণ করেছেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। স্বামীর দাবি ছিল, রাজনকে অবিলম্বে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। ঘটনাচক্রে, এই টানাপড়েনের মাঝেই রাজন জানিয়ে দিয়েছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তিনি আর গভর্নর পদে থাকবেন না। যদিও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্য পদে পাঁচ বছর বহাল থাকাই দস্তুর, রাজন বিদায় নিচ্ছেন তিন বছরের মাথায়।

রাজন-যুদ্ধ জয় করার পরে লক্ষ্য পাল্টে স্বামী আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়নকে। অভিযোগ একই। ভারতের নয়, আমেরিকার স্বার্থ দেখছেন অরবিন্দ। সুতরাং তাঁকেও বরখাস্ত করা উচিত। এ বার আর্থিক উপদেষ্টার হয়ে আসরে নামেন জেটলি। জানিয়ে দেন, অরবিন্দের প্রতি সরকারের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। স্বামীর তোপের মুখে পড়েন কেন্দ্রের অর্থ বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাসও। আবার সরব হন জেটলি। সংযত হয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার পরামর্শ দেন স্বামীকে।

ফলে এত দিন আড়ালে আবডালে যে লড়াই চলছিল, সেটা চলে আসে খোলা ময়দানে। বিজেপির অনেকেরই মতে, স্বামীর আসল লক্ষ্য অর্থমন্ত্রীর কুর্সি। তিনি মন্ত্রী হলে অর্থনীতির হাল যে ম্যাজিকের মতো পাল্টে দেবেন, সেটা রাখঢাক না রেখেই বলছেন স্বামী। দাবি করছেন, দায়িত্ব পেলে মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে ফেলবেন দু’মাসেই। ফলে জেটলির পরামর্শ পেয়েই ফোঁস করে ওঠেন স্বামী। বলেন, যাঁরা তাঁকে সংযম ও শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলছেন, তাঁদের জানা উচিত যে তিনি শৃঙ্খলা ভাঙলে রক্তপাত হবে। জেটলির কথায় যে তাঁর কিছুই যায়-আসে না দাবি করে স্বামী জানিয়ে দেন, তিনি কথা বলবেন শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে।

কিন্তু মোদী এবং‌ শাহ দু’জনেরই মুখে কুলুপ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনা তৈরি হচ্ছিল, তা হলে কি স্বামীর প্রতি শীর্ষ নেতৃত্বের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে? তাঁকে সামনে রেখেই কি জেটলিকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে চান মোদী? আজ সেই জল্পনায় আপাতত ইতি পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘টাইমস নাউ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক বারও স্বামীর নাম না-করে তাঁকে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, ‘‘আমাদের কারও থেকে রাজনের দেশপ্রেম কম নয়। কোনও পদে থাকলেই তিনি দেশের সেবা করবেন, এটা বললে অবিচার করা হবে। আমি রাজনকে যতটা জানি, তাতে যে পদেই থাকুন না কেন, দেশের সেবা করেন। দেশকে উনি ভালবাসেন। যাঁরা ওই সব ভাষা ব্যবহার করছেন, তাঁরা ওঁর প্রতি অবিচার করছেন।’’

প্রধানমন্ত্রীর মতে, যিনি (পড়ুন স্বামী) এই কাজ করছেন, তাঁর উদ্দেশ্য প্রচারে থাকা। মোদীর কথায়, ‘‘আমার দলের কেউ হোন বা না হোন, আমি বিশ্বাস করি এই ধরনের কাজ অনুচিত। প্রচারে থাকতে এই সব কাজে দেশের কোনও লাভ হবে না। আচরণের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। কেউ নিজেকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে ভাবলে তা ভুল হবে।’’ এটা যথেষ্ট স্পষ্ট বার্তা,—প্রশ্নকর্তা মন্তব্য করতেই মোদীর চটজলদি প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি স্পষ্ট বার্তাই দিই। কোনও ধন্দ রাখি না।’’

কিন্তু রাজন তো উপলক্ষ মাত্র— বলছেন বিজেপি নেতারা। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কে তাঁর আয়ু আর তিন মাস। এখন মূল লড়াই জেটলির সঙ্গে স্বামীর। প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পেয়ে আপাতত অ্যাডভান্টেজ জেটলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subramanian Swamy Modi jaitley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE