আড়াই দশক আগে দূরের আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নিতে চিঠিপত্রই ছিল একমাত্র ভরসা। ফোন থাকলেও খরচের ভয়ে কেউ সে পথ মাড়াতেন না। অভ্যাসটা বদলে দিয়েছিলেন রাজীব গাঁধী। স্যাম পিত্রোদাকে সঙ্গে নিয়ে টেলিফোনের জগতে যে বিপ্লব তিনি ঘটিয়েছিলেন, তাতে পাড়ায় পাড়ায় খুলে গিয়েছিল এসটিডি-আইএসডি বুথ।
একইরকম ভাবে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচের অভ্যাস বদলে দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দাবি, মোদী সরকার চায়, বাড়ির পরিচারিকাকে বেতন দিতে হলেও মানুষ যেন নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। চিকিৎসকের ভিজিট মেটান চেকে। মুদির দোকানে ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করেন। অটো বা ট্যাক্সির ভাড়া মেটান মোবাইল-ওয়ালেটের মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হবে ৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট বাতিল করে দেওয়া।
এই আর্থ-সামাজিক সংস্কারের পুরোধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে বড় মাপের ঝুঁকি নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। নোট বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। সব থেকে সমস্যায় পড়েছেন বয়স্ক মানুষরা। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ জাপানে পৌঁছে ট্যুইট করেছেন, ‘‘মানুষ ধৈর্য ধরে, শৃঙ্খলা মেনে নোট বদল করছেন দেখে আমি খুব খুশি। বয়স্কদের সাহায্য করা হচ্ছে দেখেও ভাল লাগছে। বড় কিছুর জন্য কিছুটা অসুবিধা সহ্য করার এই উৎসাহ খুবই আনন্দের।’’
মোদী এ কথা বললেও আমজনতার মধ্যে কিছু ক্ষোভ রয়েছেই। আর উত্তরপ্রদেশ-পঞ্জাবের ভোটের আগে সেটাকে কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লেগেছে কংগ্রেস থেকে শুরু করে সপা, বিএসপি, তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলি। তাদের প্রশ্ন, গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত ব্যাঙ্ক পরিকাঠামো বা নেট যোগাযোগ কোথায়? সেখানকার মানুষ তো অথৈ জলে পড়েছেন।
জেটলি এ দিন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ঝুঁকি সত্ত্বেও সরকার এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে লাভের কথা ভেবে সাময়িক ভোগান্তির জন্য তৈরি থাকতে হবে।’’ কী সেই দীর্ঘমেয়াদি লাভ? জেটলির যুক্তি, মোদীর এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু যে জমিয়ে রাখা কালো টাকার উপরে আঘাত আসবে তা-ই নয়, ভবিষ্যতে কালো টাকা জমানোর সম্ভাবনাও কমে আসবে। এখন গোটা দেশের ৭৮ শতাংশ লেনদেনই নগদে হয়। তার বদলে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, চেক বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন বাড়লে তা সরকারের নজরদারির আওতায় চলে আসবে। তখন আরও বেশি সংখ্যক ব্যবসায়িক লেনদেনের উপরে কর আরোপ করা যাবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।
নতুন নোট
• শীঘ্রই বাজারে আসবে নতুন ১০০০ টাকার নোট
• তার রং, নকশা ও মাপ আগের থেকে আলাদা
• নয়া নকশার ১০০, ৫০ এবং অন্যান্য নোটও আসছে
• তবে বাতিল হচ্ছে না ১০০ ও তার নীচের পুরনো নোট
ভোগান্তি কমাতে
• শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জল, পুরকর মেটানো যাবে পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকায়
• কেনা যাবে মেট্রো রেলের টিকিট, ওষুধ, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার
কর আদায় কত বাড়বে, তা নিয়ে অবশ্য এখনই মুখ খুলতে রাজি নন অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতরের কর্তারা। তাঁদের যুক্তি, তিন দিক থেকে এর প্রভাব পড়বে। প্রথমত, এখন দেশের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ আয়কর মেটান। নোট বাতিলের পরে ডাক্তার, আইনজীবীদের মতো অনেক পেশাদার, যাঁরা নগদে ফি নেন এবং যথাযথ আয়কর দেন না বলে অভিযোগ, তাঁরা ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে নোট বদলাতে বাধ্য হবেন। ফলে চলে আসবেন আয়কর নজরদারির আওতায়। দ্বিতীয়ত, জমা দেওয়া নোট ঘোষিত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে আয়কর এবং তার উপরে ২০০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। তৃতীয়ত, নগদে লেনদেন হলে সরকার কোনও কর পায় না। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেন হলে রাজস্ব আয় বাড়বে।
রাজস্ব কর্তাদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, আয়কর দফতরের নজরদারিতে পড়া ও ২০০ শতাংশ জরিমানার ভয়ে অনেকেই পুরনো নোট বদলের পথে হাঁটবেন না। তাঁরা ওই সব নোট পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলবেন। যদিও তাতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি নেই।
ডিজিটাল লেনদেনে আরও গতি আনতে মোদী সরকার নীতি আয়োগের উপদেষ্টা রতন ওয়াটালের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেছে। সেই কমিটির সদস্য, নাসকমের প্রেসিডেন্ট আর চন্দ্রশেখরের বক্তব্য, অধিকাংশ কালো টাকা করের আওতায় চলে এলে, নগদে লেনদেনের আর কোনও কারণ থাকবে না। নগদ-মুক্ত অর্থনীতি তৈরি করতে ডেবিট কার্ড, অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনে কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে কমিটির কাছে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৫-’১৬-য় মোবাইল অ্যাপে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-এ যা ২০০০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy