E-Paper

জনবিন্যাস মিশন মোদীর, অনুপ্রবেশ রুখতে কেন্দ্রের পদক্ষেপ

বিরোধীদের অভিযোগ, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে বেআইনি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের জুজু দেখিয়ে ভোট লড়বে, সেই প্রচারের সুরই ফের বেঁধে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৭
রাজভবনে ঢুকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

রাজভবনে ঢুকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকার জনবিন্যাস পাল্টে দেওয়ার একটি ‘ষড়যন্ত্র’ চালু রয়েছে এবং তা দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় বিপদ বলে দাবি করে দেশ জুড়ে ‘জনবিন্যাস মিশন’ শুরু করতে চলেছে সরকার। এ বছরের স্বাধীনতা দিবসের পরে ফের আজ অসমের জনসভা থেকে জনবিন্যাস মিশন শুরু করার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বিরোধীদের অভিযোগ, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে বেআইনি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের জুজু দেখিয়ে ভোট লড়বে, সেই প্রচারের সুরই ফের বেঁধে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, এগারো বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার পরে অনুপ্রবেশের বিপদ নিয়ে এখন সুর চড়াচ্ছেন মোদী। কিন্তু অনুপ্রবেশ রোখার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। তা হলে মোদী কি পরোক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতাই তুলে ধরলেন না!

অসমে গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্য সরকার বিদেশি শনাক্তকরণ, অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ধরপাকড়়, পুশব্যাক, উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। তা নিয়ে চলছে প্রতিবাদও। সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার অমান্য করার অভিযোগ জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু রবিবার অসম সফরে এসে রাজ্য সরকারের অভিযানেই সিলমোহর দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় জনবিন্যাস বদলে দিতে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বিরাট হুমকি। তা রুখতেই দেশে ডেমোগ্রাফি মিশন শুরু করা হচ্ছে।’’

এ বছর স্বাধীনতা দিবসের দিনেও লালকেল্লা থেকে সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের মাধ্যমে জনসংখ্যার চরিত্র বদলের ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে মন্তব্য করেছিলেন মোদী। তবে কারা এই অনুপ্রবেশকারী, কারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, তাঁর তোলা অভিযোগের ভিত্তি কী— তা নিয়ে বিশদে কোনও ব্যাখ্যা সে দিনও মোদী দেননি, আজও দিলেন না। তবে কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, এই জনবিন্যাস মিশন যে হতে চলেছে সেই ইঙ্গিত ছিল ২০২৪ সালের মোদী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সেখানে জানিয়েছিলেন, বিকশিত ভারত গড়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনবিন্যাসগত পরিবর্তন। এর ফলে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সেগুলি বিস্তারিত ভাবে বিবেচনা করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। উদ্ভূত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য কী পন্থা নেওয়া হবে, ওই কমিটি তা সুপারিশ করবে বলেও বলা ছিল বাজেট নথিতে। সূত্রের মতে, তারই ভিত্তিতে জনবিন্যাস মিশন শুরু করার কথা জানালেন মোদী।

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা কিংবা পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপদ বলে দাবি করে এসেছেন। মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজেও হাত দিতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। এই আবহে হিন্দু মেরুকরণের হাওয়া আরও তীব্র করতে অনুপ্রবেশকারীদের কোনও ভাবেই রেয়াত করা হবে না বলে বুঝিয়ে দিলেন মোদী। তিনি অনুপ্রবেশকারীদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে মন্তব্য না করলেও রাজনীতিকদের মতে, মোদীর নিশানায় যে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা রয়েছেন, তা স্পষ্ট। মোদীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, আগামী বছর দু’রাজ্যের ভোটে অনুপ্রবেশকেই প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করার কৌশল নিয়ে এগোতে চাইছে বিজেপি। যে কারণে মোদী থেকে অমিত শাহ-সকলেই সুর চড়াতে শুরু করেছেন অনুপ্রবেশ নিয়ে। যদিও তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন, অনুপ্রবেশ রোখার দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফ। তা সত্ত্বেও যদি অনুপ্রবেশ হয়ে থাকে, তা হলে মোদীর উচিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে জবাবদিহি চাওয়া।

আজকের সভায় মোদী স্পষ্ট করে দেন, অনুপ্রবেশকারীদের দেশের সম্পদের উপর কখনই নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে দেবে না কেন্দ্র। মোদী বলেন, ভারতের কৃষক, যুবক এবং জনজাতি সম্প্রদায়ের অধিকারের সঙ্গে কোনও ভাবেই আপস করা হবে না। তিনি মা, বোন এবং কন্যাদের উপর অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা এবং ভারতীয় মাটি থেকে তাদের সম্পূর্ণ অপসারণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেসকে ‘অনুপ্রবেশকারীদের পৃষ্ঠপোষক’ ও ‘পাকিস্তানের সমর্থক’ হিসেবে দাগিয়ে দেন তিনি। মোদীর কথায়, “কংগ্রেস চায় অনুপ্রবেশকারীরা ভারতেই থেকে যাক এবং দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করুক। কিন্তু আমরা অনুপ্রবেশকারীদের দেশের জমি ও সম্পদ অধিকার করতে দেব না। ওরা আমাদের মা-বোনেদের উপরে অত্যাচার চালায়। তা সহ্য করা হবে না।” তাঁর বক্তব্য, “আমি কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ করছি, অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে ওরা কতটা চেষ্টা করতে পারে আর আমরা অনুপ্রবেশকারীদের উৎখাত করতে কত দূর লড়তে পারি— তার মোকাবিলা হয়ে যাক। অনুপ্রবেশকারীদের যারা বাঁচাতে চাইছে, দেশ তাদের ক্ষমা করবে না।” মোদীর অভিযোগ, কংগ্রেস আমলে স্থানীয় কৃষক, জনজাতি ও ধর্মীয় স্থানের জমি দখলদারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অসমে আন্দোলন হলে কংগ্রেস উল্টে আন্দোলনকারীদের সাজা দিয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi Illegal Immigrants Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy