জাতীয় গান বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার তিনি মন্তব্য করেন, কংগ্রেস জমানায় বন্দে মাতরমের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্তবক বাদ দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, ১৯৩৭ সালে দেশভাগের বীজ বপন করেছিল ওই কাজ। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ‘‘এমন বিভাজনমূলক মানসিকতা এখনও দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।’’ অন্য দিকে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বিজেপি এবং আরএসএসকে কটাক্ষ করে বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ওদের কোনও ভূমিকা নেই। স্বাধীনতার ৫২ বছর ওরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি। আর কংগ্রেসের কোনও ব্লকের মিটিংয়েও বন্দে মাতরম গাওয়া হয়।
শুক্রবার বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর পূর্তিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন মোদী। তিনি জানান, বন্দে মাতরমের সার্ধ শতবর্ষকে স্মরণ করে সারা বছর নানা অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হবে। এ দিন বন্দেমাতরমের স্মারক স্ট্যাম্প এবং কয়েন প্রকাশ করেছেন। দেশবাসীর উদ্দেশে মোদীর বার্তা, বন্দে মাতরমের প্রতিটি শব্দ ভারতকে বিশ্বাস যোগায়। এই গান জানান দেয়, কোনও কিছুই অসাধ্য নয়। ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বন্দে মাতরম গানও করেন মোদী। তাঁর কথায়, “বন্দে মাতরম স্রেফ গান নয়, এটা মন্ত্র। এ গানের আবেগ ভারতমাতাকে ঘিরে। এই গান ভারতের মধ্যে বিশ্বাস জোগায়, আমাদের লক্ষ্য যতই কঠিন হোক না কেন, তা ভারতবাসীর পক্ষে অসাধ্য কিছু নয়। এক সুরে যখন গোটা দেশ এই গান গেয়ে ওঠে, তখন ভারতের একতার ছবি ফুটে ওঠে। একের পর এক প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছে বন্দে মাতরম।”
মোদী জানান, ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বন্দে মাতরম রচনা করেছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে দেশ জুড়ে উদ্যাপন অনুষ্ঠান হবে। এর পরেই কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন, ‘‘কিন্তু দুর্ভাগ্য হল, ১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরমের গুরুত্বপূর্ণ স্তবক, যা গানটির প্রাণ, সেগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বন্দে মাতরমের ওই বিভাজন দেশভাগের বীজ বপন করেছিল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আজকের প্রজন্মের জানা উচিত, জাতি গঠনের এই ‘মহামন্ত্র’-এর সঙ্গে কেন এই অবিচার করা হয়েছিল। এই বিভাজনমূলক মানসিকতা এখনও দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।’’
বন্দে মাতরম গানটি প্রত্যেক যুগে দেশের জন্য প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘যখন শত্রুরা সন্ত্রাসবাদ দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের উপর আক্রমণ করার সাহস করে, তখন বিশ্ব দেখেছে ভারতমাতা দুর্গার রূপ ধারণ করতে জানে।’’ বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষ আলাদা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের পরিকল্পনা করেছে বিজেপিও।
অন্য দিকে, বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষে আরএসএস এবং বিজেপিকে এক পঙ্ক্তিতে ফেলে আক্রমণ করে কংগ্রেস বলেছে, ‘‘যারা সংবিধানকে আক্রমণ করে, বাপু মহাত্মা গান্ধী এবং বাবাসাহেব অম্বেডকরের কুশপুতুল পোড়ায় এবং সর্দার পটেলের মতে গান্ধীজির হত্যায় জড়িত, তারাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়েছিল।’’ খড়্গের কথায়, ‘‘১৯৮৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত, কংগ্রেসের ছোট-বড় প্রত্যেকটি বৈঠকে আমরা গর্বের সঙ্গে বন্দে মাতরম গাই। এই গান আমাদের দেশমাতৃকার গান। মানুষের মধ্যে একতা এবং প্রত্যেক ভারতবাসীর প্রাণের গান বন্দে মাতরম।’’