Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Narendra Modi

পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছিনিয়ে আনতে হবে, আগামী লোকসভা ভোটে এই আবেগ হতে পারে মোদীর অস্ত্র

বিরোধীদের একটি বড় অংশের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভোটের আগে তাঁর প্রিয় অস্ত্র উগ্র জাতীয়তাবাদের আবেগকে উস্কে দিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধের জিগির তুলতে পারেন।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায়, অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:১৬
Share: Save:

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বালাকোট। ২০২৪-এর লোকসভার আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনর্দখলের জিগির সামনে চলে আসবে কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে রাজধানীর রাজনৈতিক পরিসরে!

বিরোধীদের একটি বড় অংশের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভোটের আগে তাঁর প্রিয় অস্ত্র উগ্র জাতীয়তাবাদের আবেগকে উস্কে দিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধের জিগির তুলতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে তিনি বেছে নিতে পারেন এমন একটি বিষয়কে, যা নিয়ে বেসুরো গাইতে পারবে না কোনও বিরোধী দল। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে ছিনিয়ে আনার জিগির হতে পারে সেই আয়ুধ, যা মোদীকে তৃতীয় বার মসনদে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে বিজেপি।

অতীতে কার্গিল যুদ্ধকে হাতিয়ার করে ভোটে জিতে এসেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু ভারতীয় সেনা সেই সময়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়নি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনা যদি নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে অধিকৃত কাশ্মীরে পা দেয়, সেই ক্ষেত্রে দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যে সম্পূর্ণ যুদ্ধ বেধে যেতে পারে— তা বিলক্ষণ বোঝেন শাসক দলের নেতৃত্ব। তবে যুদ্ধ না হলেও যুদ্ধের হাওয়াও অনেক সময়ে কাঙ্ক্ষিত ফল দেয়। তাই লোকসভার আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে দেশব্যাপী প্রচারে নামা গেলে ভোটের বাক্সে ইতিবাচক ফল মিলতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দেশের মানুষের বড় অংশের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে।

তাই আসন্ন সংসদের বিশেষ অধিবেশনে যখন ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত আইন আনার জল্পনা প্রবল, তখন বিজেপির একটি অংশের দাবি, হয়তো সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষ অধিবেশনটি ডাকা হয়েছে। হতে পারে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে মুক্ত করা নিয়ে সর্বদলীয় প্রস্তাব আনতে পারে সরকার। যা আনলে বিরোধিতার করার জায়গা থাকবে না প্রতিপক্ষের। উল্টো দিকে দেশবাসীকে এই বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে, নরেন্দ্র মোদী এমন এক জন প্রধানমন্ত্রী যিনি এত বছর ধরে অধিকৃত হয়ে থাকা ভূখণ্ড ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে অন্তত প্রাথমিক পদক্ষেপটুকু নিয়েছেন। ফিরবে কি ফিরবে না তা পরের ব্যাপার, কিন্তু তা নিয়ে আলোচনার সাহস দেখিয়েছেন।

মোদীর একটি অস্ত্র হিন্দুত্বের রাজনীতি হলে, অন্যটি অবশ্যই জাতীয়তাবাদ। যা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতি, নয় বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, কোভিডের পর থেকে অর্থনীতি এখনও কোমর ভাঙ্গা অবস্থায়। এই আবহে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়, বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’ তৈরিতে সাফল্য চিন্তায় রেখেছে বিজেপি সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকেই মোদী যে অস্ত্র করতে চাইবেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত অনেকে। যেমনটি তিনি করেছিলেন গত লোকসভা নির্বাচনের আগে। তা ছাড়া বর্তমানে ভূকৌশলগত পরিস্থিতিতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে একই সঙ্গে রাশিয়া ও আমেরিকার সঙ্গে দর কষাকষির জায়গায় রয়েছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে পাকিস্তানের কাছ থেকে নতুন কোনও প্রাপ্তির আশা নেই ভারতের। দু’দেশের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়েছে মোদী দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। ফলে অনেকের মতে, লোকসভার আগে এটিই উপযুক্ত সময় পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ানোর।

যদিও বিরোধীরা বলেছেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল তো সময়সাপেক্ষ বিষয়। আর এক প্রতিবেশী দেশ চিনের সেনারা লাদাখের পূর্ব প্রান্তে গত তিন বছর ঘাঁটি গেড়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে বসে রয়েছে। ফলে নিজেদের এলাকায় টহলদারির অধিকার হারিয়েছে ভারত। আগে সেই জমি ফেরানো হোক। তার পরে না হয় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পা বাড়াবে ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Jammu and Kashmir BJP Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE