Advertisement
E-Paper

আপনাদের অপেক্ষায় থাকতাম এক দিন, আজও আমি কৃতজ্ঞ

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর সচিবালয়ে মিডিয়া উপদেষ্টা পদটিই অবলুপ্ত করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের বিদেশযাত্রার পরম্পরাকেও পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। গত পাঁচ মাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে সরাসরি কথাবার্তা কার্যত বলেননি। ইচ্ছে হলে দূরদর্শন ও কিছু সংবাদ সংস্থাকে ‘বাইট’ দিয়েছেন। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং সংবাদমাধ্যমের প্রধান যোগসূত্র হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। টুইটার, ফেসবুক, ব্লগ এতদিন এ সবই ছিল নরেন্দ্র মোদীর মাধ্যম।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৪
প্রধানমন্ত্রী যখন আলোকচিত্রী। শনিবার নয়াদিল্লিতে।  ছবি: পিটিআই

প্রধানমন্ত্রী যখন আলোকচিত্রী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর সচিবালয়ে মিডিয়া উপদেষ্টা পদটিই অবলুপ্ত করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের বিদেশযাত্রার পরম্পরাকেও পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। গত পাঁচ মাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে সরাসরি কথাবার্তা কার্যত বলেননি। ইচ্ছে হলে দূরদর্শন ও কিছু সংবাদ সংস্থাকে ‘বাইট’ দিয়েছেন। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং সংবাদমাধ্যমের প্রধান যোগসূত্র হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। টুইটার, ফেসবুক, ব্লগ এতদিন এ সবই ছিল নরেন্দ্র মোদীর মাধ্যম।

দীপাবলিকে উপলক্ষ করে সেই মোদীই এ বার মুখোমুখি হলেন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের। প্রধানমন্ত্রীর নিবাস সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে নয়। অশোক রোডের সুপ্রাচীন বিজেপি দফতরের সবুজ লনে। ভাইফোঁটার সকাল কাটালেন ‘খবরের’ লোকেদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আর ছবি তুলে। সাংবাদিকদের সঙ্গে মোবাইলে নিজস্বী তুললেন। এমনকী ক্যামেরা হাতে নিয়ে চিত্রসাংবাদিকদের ছবি তুললেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

সব মিলিয়ে অন্য মোদী।

মঞ্চে খুব সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাই দিলেন। সাংবাদিকদের ‘ভাই-বোন’ বলে সম্বোধন করে মোদী জানালেন, সরকারের কাজ আর সংবাদমাধ্যমের কাজ দুইয়ের মধ্যে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়তে চান তিনি। অতীতেও মোদী বারবার বলেছেন, উন্নয়ন একটি আন্দোলন। আজ সেই আন্দোলনে সংবাদমাধ্যমকেও শরিক করার কথা বললেন তিনি। ভূয়সী প্রশংসা করলেন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের লাগাতার প্রচারের। মোদীর বক্তব্য, সরকারের এই কাজ নিয়ে গত কয়েক মাসে সংবাদমাধ্যম যে ভাবে লেখালেখি করেছে, তা প্রশংসনীয়। তিনি কৃতজ্ঞ। এই সমস্ত লেখাই যে সরকারের পক্ষে, এমন নয়। কিন্তু এই সব প্রতিবেদনই সাহায্য করবে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

শুধু তা-ই নয়, অতীতের কথা স্মরণ করে মোদী বলেছেন, “এই পার্টি অফিসেই এমন একটা সময় ছিল, যখন আপনাদের প্রতীক্ষায় বসে থাকতাম কথা বলব বলে।” মোদী-বিশেষজ্ঞদের মত, আজ ঘণ্টাখানেকের আলাপচারিতায় অনেকগুলি বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমত, বোঝালেন, তিনি সংবাদমাধ্যমের বিরোধী নন। অতীতেও তিনি সংবাদমাধ্যমের বন্ধু ছিলেন, আজও আছেন। দ্বিতীয়ত, মোদী সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের একটি অংশের যে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে, তাকেও নির্মূল করতে চাইলেন। গোধরা কাণ্ডে তাঁকেই প্রধান খলনায়ক করেছিল সর্বভারতীয় গণমাধ্যম (যে প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, “গোটা সংবাদমাধ্যম নয়। সংবাদমাধ্যমের একাংশ নিজেদের আধুনিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে। তারাই নরেন্দ্র মোদীকে সাম্প্রদায়িক তকমা দিয়েছে।”)। আজ মোদী সাংবাদিকদের বার্তা দিতে চাইলেন, তিনি আধুনিক ও সংবাদমাধ্যম-প্রেমী। সাম্প্রদায়িক নন। তৃতীয়ত, মোদী এ কথাও বোঝাতে চাইলেন, মিডিয়া উপদেষ্টা তিনি না-ই রাখতে পারেন। সাংবাদিকদের বিমানে করে বিদেশে না-ই নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তা বলে তিনি সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব অনুধাবন করেন না, এমন নয়। তাই সরকারের কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে রূপায়ণে সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজনীতার বিষয়ে জোর দিলেন। চতুর্থত ও সর্বোপরি, মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও বার্তা দিলেন, যেন সংবাদমাধ্যমকে অচ্ছুৎ করা না হয়।

মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এত স্বচ্ছন্দ হতে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে এত বার বিদেশে গিয়েছি, কখনও সাংবাদিকদের সঙ্গে খোশগল্পে মনমোহনকে ততটা স্বচ্ছন্দ দেখিনি, আপনাদের অপেক্ষায় থাকতাম এক দিন যতটা তিনি অমর্ত্য সেনদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী জমি থেকে উঠে আসা আপাদমস্তক এক রাজনৈতিক কর্মী। বরাবরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসতেন। সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব তিনি জানেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কৌশলগত কিছু পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। ঠিক যেমন কৌশল নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। জ্যোতিবাবুও সংবাদমাধ্যমকে ভালবাসতেন। কিন্তু একই সঙ্গে দূরত্বও বজায় রাখতেন। তার মানে এই নয়, জ্যোতিবাবু সংবাদমাধ্যমকে গুরুত্ব দিতেন না।

সমালোচকরা কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিকে মোদী একটা ‘ডোন্ট-কেয়ার’ মনোভাব নিয়েছিলেন। কিন্তু ক্রমশ তিনি বুঝতে পারছেন, সংবাদমাধ্যমকে এতটা দূরে রাখা ভুল। তাই তিনি এখন কৌশল বদলাচ্ছেন। কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নিবাসে এই প্রতিবেদক মোদীকে ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, “আপনার কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে?” একগাল হেসে মোদী জবাব দিয়েছিলেন, “আমার কোনও পরিবর্তন হয়নি। যদি কিছু পরিবর্তন নজরে আসে, সেটা আপনার চোখের ব্যামো। আপনি বরং চোখের ডাক্তার দেখান।” আজ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেখা করেও মোদী একই কথা বোঝাতে চাইলেন তিনি আদৌ বদলে যাননি।

ব্যাখ্যা দিলেন মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্য। বললেন, কোনও জুনিয়র এগ্জিকিউটিভ যখন সংস্থার সিইও হয়ে যান, তখন অনেক সময় আর ধাবায় বসে চা খেতে পারেন না। কিন্তু তা বলে যে ধাবায় চা খেতে ইচ্ছে করে না, এমন নয়। মোদীর ব্যাপারটাও অনেকটা সে রকম। তিনি সরকার ও দলের মধ্যে যেমন যোগসূত্র বজায় রাখতে চান, তেমনই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পুরনো সুসম্পর্কও ঝালিয়ে নিতে চাইছেন। সরকারের সঙ্গে তাদের সমন্বয় গড়ে তুলতে চাইছেন। সে কারণে আজ শুধু সংবাদমাধ্যমের মালিক বা সম্পাদকেরা নন, সাংবাদিক, চিত্রসাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করে খোশগল্প করেছেন তিনি। পরিবারের খবর নিয়েছেন। এই যোগাযোগ শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, সমাজের নানা স্তরের সঙ্গেই বজায় রাখতে চান মোদী। তাই তিনি যেমন চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেন, তেমন মুম্বইয়ে গিয়ে দেখা করেন শিল্পপতিদের সঙ্গেও।

তবে কারও কারও আক্ষেপ যে, আজকের সাক্ষাৎ শুধু ব্যক্তিগত আলাপচারিতাতেই আটকে রইল। সরকারের নানা নীতি ও পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মিলল না। এই প্রসঙ্গে বিজেপির সচিব শ্রীকান্ত শর্মা বলেন, “এ তো সবে শুরু। এর পরেও কথোপকথন হবে।” মোদী বক্তৃতায় বলেন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কী ভাবে আরও যোগাযোগ বাড়ানো যায়, তার পথ খুঁজছেন তিনি। শীঘ্রই কোনও পথ বেরিয়ে আসবে।

অতীতের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা অনেক সময়ে অনেক কিছু লেখেন না, কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনেক তথ্যই মেলে তাঁদের কাছে। শুধু তথ্য নয়, নানা বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও বেরোয়। সেই লক্ষ্যে ভবিষ্যতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকারই করে গেলেন নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদী।

modi press jayanta ghoshal new delhi media national news online national news narendra modi BJP pm narendra modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy