Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Police Brutality

ফের পুলিশের বেধড়ক মার, জামিয়ায় আহত বহু পড়ুয়া

মিছিলে পুলিশি বাধার পরে অসুস্থ হয়ে পড়া অনেককে নিয়ে যেতে হল হাসপাতালে।

সংঘর্ষ: পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বিক্ষোভকারীদের। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।

সংঘর্ষ: পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বিক্ষোভকারীদের। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৮
Share: Save:

ফের পড়ুয়াদের মিছিল। তা আটকাতে পুলিশের ব্যারিকেড। পড়ুয়া-পুলিশ-স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আবার ধস্তাধস্তি। সোমবার দিনভর ফের উত্তপ্ত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার সামনের রাস্তা।

মিছিলে পুলিশি বাধার পরে অসুস্থ হয়ে পড়া অনেককে নিয়ে যেতে হল হাসপাতালে। যাঁদের মধ্যে পড়ুয়ার সংখ্যা জনা চল্লিশেরও বেশি বলে দাবি। হাসপাতালে যেতে হওয়া পড়ুয়াদের অভিযোগ, ঘিরে ধরা পুলিশের চাপে দম বন্ধ হয়ে আসছিল তাঁদের। সঙ্গে পেটে-পিঠে-বুকে-গোপনাঙ্গে চোরাগোপ্তা লাঠি। বাদ যাননি ছাত্রীরাও। উল্টো দিকে পুলিশ সূত্রে দাবি, ব্যারিকেড ডিঙিয়ে এগোতে চাওয়া মিছিলকে বাধা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তা বলে লাঠিপেটা করা হয়নি। এক পুলিশ অফিসারের প্রশ্ন, ‘‘সত্যিই লাঠি চললে, তার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যেত না কি?’’

এমনিতে এখন জামিয়ায় ক্লাস চলছে পুরোদমে। হচ্ছে কিছু পরীক্ষাও। তারই মধ্যে এ দিন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনগণনা পঞ্জির (এনপিআর) বিরোধিতায় জামিয়ার ৭ নম্বর গেটের সামনে থেকে ‘সংসদ চলো’র ডাক দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের অনেক প্রতিনিধি এবং বহু স্থানীয় মানুষও। কিন্তু মিছিল শুরুর জায়গা থেকে শ’খানেক মিটার দূরেই হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে তা থামানোর ব্যারিকেড করে রেখেছিল দিল্লি পুলিশ।

আরও পড়ুন: ওমর কেন বন্দি, সুপ্রিম কোর্টে বোন

সেই ব্যারিকেড ডিঙিয়ে মিছিল সামনে দিকে এগোতে চাওয়াতেই পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি বাঁধে। ব্যারিকেডের গার্ড-রেল নিয়ে দু’পক্ষের এক প্রস্ত টানাটানির পরে অনেকে উঠে পড়েন ব্যারিকেডের উপরে। নাগাড়ে চলতে থাকে স্লোগান।

ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সফুরার অভিযোগ, ‘‘কাউকে খোলাখুলি লাঠিপেটা হয়তো করা হয়নি। কিন্তু সামনের পুলিশেরা যখন প্রতিবাদীদের রুখছিলেন, তখন পিছন থেকে লম্বা লাঠি দিয়ে ক্রমাগত পেটে, পিঠে এমনকি গোপনাঙ্গে খুঁচিয়ে যাচ্ছিলেন পিছনের পুলিশ কর্মীরা। যে কারণে অনেকে গুরুতর চোট পেয়েছেন। তাঁদের নিয়ে যেতে হয়েছে হাসপাতালে।’’ তাঁদের দাবি, আহত পড়ুয়াদের প্রথমে আনসারি হেল্থ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলেও, বড়সড় চোটের কারণেই আল শিফা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে অনেককে। পুলিশ ঘিরে ধরে দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি করছিল বলেও অভিযোগ অনেকের।

পুলিশের হাতে আটক হওয়া শাহিন আবদুল্লার দাবি, হাত পিছমোড়া করে মারধর করা হয়েছে। চলেছে লাথি, চড়, ঘুষি। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ে কিছু পড়ুয়া সেখানে সংজ্ঞাহীন হয়েও পড়েন।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে দাবি, এ দিন মিছিলে পড়ুয়াদের তুলনায় স্থানীয় মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। ভিড়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। পড়ুয়াদের বার বার পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে না-জড়ানোর আর্জি জানানো হচ্ছিল বলেও জানাচ্ছে তারা।

এ দিকে, জেএনইউ ক্যাম্পাসে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের এক মাস পরেও তদন্তে অগ্রগতি না-হওয়ার অভিযোগ পুলিশের কাছে জানিয়ে এলেন শিক্ষক সংগঠন জেএনইউটিএ-র প্রতিনিধিরা। সোমবার দিল্লি পুলিশের সদর দফতরে স্পেশ্যাল সিপি (তদন্ত) প্রবীর রঞ্জনের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তাঁরা। জেএনইউটিএ-র সম্পাদক সুরজিৎ মজুমদার জানান, ‘‘৫ জানুয়ারি ওই ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন অধ্যাপক ও তাঁদের পরিবার। কিন্তু এখনও কেউ গ্রেফতার হননি। খান ষাটেক অভিযোগ জমা পড়লেও, তার কোনওটিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। রেকর্ড করা হয়নি অভিযোগকারীদের বয়ানও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE