Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
National News

বয়স ৬২, অপরাধ ১১২, দিল্লির মহিলা ডন ‘মাম্মি’ অবশেষে জালে

গ্যাংস্টার বসিরণ, ওরফে ‘মাম্মি’।

গ্যাংস্টার বসিরণ, ওরফে ‘মাম্মি’।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ১০:২৯
Share: Save:

ছোটা শাকিল, ছোটা রাজন, অরুণ গাউলিদের চেয়ে কোনও অংশে কম যান না তিনি। সুপারি নিয়ে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, অস্ত্র-মদের কারবার, তোলাবাজির মতো শতাধিক ঘটনায় অভিযুক্ত। তিনি দিল্লির মহিলা ‘ডন’। আসল নাম বসিরণ। অন্ধকার জগতে পরিচিতি ‘মাম্মি’ নামে। পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড। দেশের ভয়ঙ্করতম পাঁচ মহিলার অন্যতম ‘মাম্মি’র খাসতালুক সঙ্গম বিহার। এহেন লেডি ডনই অবশেষে পুলিশের জালে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্যাং চালানোর পর ৬২ বছর বয়সে গ্রেফতার হলেন তিনি।

কী ভাবে পুলিশের হাতে এলেন এই লেডি ডন?

বারবার আদালতে হাজিরার নির্দেশ অমান্য করা ‘প্রক্লেমড অফেন্ডার’ বসিরণের সম্পত্তি সম্প্রতি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সঙ্গম বিহার থানায় গোপন সূত্রে একটি খবর আসে, সেই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে সঙ্গম বিহারে নিজের আট ছেলের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। দিল্লি পুলিশের ডিসি সাউথ রোমিল বানিয়া জানিয়েছেন, খবর পেয়েই অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়। সঙ্গম বিহারের পুলিশ অফিসার উপেন্দর সিংহের নেতৃত্বে গোপনে অভিযান চালানো হয়। সূত্রের খবর সত্যি ছিল। জালে ধরা পড়েন বসিরণ ওরফে মাম্মি। পুলিশকর্তা বলেন, আশা করা যায় এ বার মাম্মির গ্যাংয়ের অন্য সদস্যরাও জালে পড়বেন।

জালে ফেলার চেষ্টা এর আগেও করেছে দিল্লি পুলিশ। খুন, অপহরণ, মারধর-সহ সব মিলিয়ে পুলিশের খাতায় ১১২টি অভিযোগ রয়েছে এই লেডি ডনের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রতিবারই আইনের জাল কেটে আর পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছেন তিনি। অবশেষে মাস সাতেক আগে একটি খুনের পর থেকেই কার্যত হাত ধুয়ে বসিরণের পিছনে পড়ে পুলিশ।

পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর ডন মাম্মি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মিরাজ নামে এক ব্যক্তিকে খুনের সুপারি নেয় মাম্মি গ্যাং। তাঁকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সাত দিন পর উদ্ধার হয় দেহ। সাক্ষ্য প্রমাণ হাতে আসায় মাম্মির বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় পুলিশ। কিন্তু বারবার ডাকা সত্ত্বেও হাজিরা না দেওয়ায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয় আদালত। আর সেই চাপেই শেষ পর্যন্ত লেডি ডনকে জালে ফেলা গেল বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।

আরও পডু়ন: কওসরদের নিয়ে বুদ্ধগয়ায় এনআইএ-র দল

কী ভাবে লেডি ডন হয়ে উঠলেন বসিরণ? পুলিশ সূত্রে খবর, বসিরণের আদি বাড়ি রাজস্থানে। রুজি-রুটির টানে সাদামাটা এই গৃহবধূ আটের দশকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে চলে আসেন দিল্লিতে। খাবার, আশ্রয়ের জোগান নিশ্চিত করতে প্রবেশ করেন অন্ধকার জগতে। ছোটখাটো ছিঁচকে চুরি দিয়ে অপরাধে হাতে খড়ি। বাকিটা আর পাঁচটা ডনের মতোই গ্যাং তৈরি করে নাটের গুরু হয়ে ওঠা।

আর বর্তমানে? বাঘে-মহিষে না হোক, তাঁর দাপটে অন্তত কয়েক হাজার মানুষ একই ঘাটে জল খান। কারণ এলাকায় থাকতে গেলে তাঁর কাছ থেকেই জল কিনে খেতে হবে। সঙ্গম বিহার এলাকায় একাধিক সরকারি জলের কুয়ো তাঁর দখলে। সেখান থেকে চলে জলের ব্যবসা। সঙ্গম বিহার তো বটেই, লাগোয়া আরও কিছু এলাকাতেও একছত্র জলের কারবার ডন মাম্মির।

আরও পড়ুন: মহিলাকে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ছিনতাই

বসিরণের আট ছেলে। সুপারি নিয়ে খুন, অপহরণ, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটের মতো একাধিক অপরাধে পুলিশের খাতায় নাম উঠেছে তাদেরও। ছেলেদের মধ্যে শামিম ৪২, শাকিল ১৫, ওয়াকিল ১৩, রাহুল ৩, ফইজল ৯, সানি ৯, এবং সলমন দু’টি ঘটনায় অভিযুক্ত। ফলে সংবাদ মাধ্যমে পুলিশ দাবি করলেও বসিরণ গ্রেফতারের পরই যে মাম্মি গ্যাং নির্মূল হবে, বুকে হাত দিয়ে এমনটা বলতে পারছেন না অনেক পুলিশ কর্তাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Don Mummy Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE