‘তন্ত্রসাধনা’-র জন্য সৌরভ রাজপুতকে খুন করা হয়নি। মেরঠ পুলিশ জানাল, প্রেমিক সাহিল শুক্লের সঙ্গে ছক কষে ঠান্ডা মাথায় স্বামী সৌরভকে খুন করেছিলেন মুস্কান রস্তোগী। এই খুনের ঘটনায় ১৫০০ পাতার চার্জশিট তৈরি করেছে পুলিশ। সোম থেকে বুধবারের মধ্যে তা মেরঠের আদালতে জমা করা হবে। সেই চার্জশিটেই এই কথা জানিয়েছে পুলিশ। তারা এ-ও জানিয়েছে, সাহিল এবং মুস্কানের সম্পর্কে সৌরভ বাধা হয়ে উঠেছিলেন বলেই তাঁকে সরানো হয়েছিল।
মেরঠ পুলিশের অতিরিক্ত সুপার অন্তরীক্ষ জৈন বলেন, ‘‘কালোজাদু বা তন্ত্রসাধনার সঙ্গে এই খুনের কোনও যোগ নেই। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, প্রতারণা রয়েছে এই অপরাধের নেপথ্যে। অবাঞ্ছিত স্বামীকে সরাতে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করেছিলেন মুস্কান।’’ পুলিশ তদন্তে জেনেছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন সাহিল এবং মুস্কান। এর পরে দু’জনে ভিন্ন স্কুলে ভর্তি হন। সৌরভের সঙ্গে মুস্কানের বিয়ে হয়। চাকরিসূত্রে সৌরভ বিদেশে গেলে তখন আবার সাহিলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। জেরায় মুস্কান স্বীকার করেছেন যে, সাহিলকে ছাড়া থাকতে পারছিলেন না তিনি। সৌরভ দেশে ফিরে এলে বিপাকে পড়েন তিনি। তখনই খুনের সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্রের খবর, চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, ৩ মার্চ রাতে সৌরভকে প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলেন মুস্কান। তার পরে তাঁর বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিলেন বার বার। এর পরে দু’জনে সেই দেহ শৌচালয়ে টেনে নিয়ে যান। পুলিশ জানিয়েছে, শৌচালয়ে সৌরভের মাথা কেটে দেন তাঁরা। কব্জি কেটে নেন। এর পরে তাঁর দেহ সুটকেসে ভরার চেষ্টা করেন সাহিল এবং মুস্কান। কিন্তু সেটি ছোট মাপের হওয়ায় সৌরভের দেহ ভরতে ব্যর্থ হন দু’জনে। ওই সুটকেসটি মেরঠে নিজের বাড়ির খাটের নীচে রেখেছিলেন মুস্কান। সেখানে রক্তের দাগ এবং হাড়ের অংশ খুঁজে পায় পুলিশ। সেগুলি যে সৌরভের, তা নিশ্চিত করে ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট। ওই রিপোর্ট পুলিশের হাতে মুস্কানদের বিরুদ্ধে বড় প্রমাণ তুলে দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সুটকেসে সৌরভের দেহ ঢোকাতে না পেরে তা প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে সিমেন্ট ঢেলে দিয়েছিলেন মুস্কান এবং সৌরভ।
চার্জশিটে পুলিশ জানিয়েছে, ফল কাটার ছুরি দিয়ে সৌরভকে খুন করা হয়েছিল। মেরঠে সেই ছুরির দোকানের মালিক মুস্কানকে চিহ্নিত করেছেন। শহরের ঘণ্টাঘর এলাকার একটি দোকান থেকে কেনা হয়েছিল প্লাস্টিকের ড্রাম। সেই দোকানের মালিকও মু্স্কানকে চিহ্নিত করেছেন। সৌরভকে খুনের পরে সিমলা, মানালি, কাসোলের যে হোটেলে ছিলেন মুস্কান এবং সাহিল, তার মালিকদেরও জবানবন্দি রয়েছে চার্জশিটে। তা ছাড়া মুস্কানের বাবা প্রমোদ রস্তোগী, মা কবিতা রস্তোগী, সৌরভের ভাই রাহুল রাজপুত, বাবা, মা, মেরঠের যে ভাড়া বাড়িতে খুন হয়েছিল, তার মালিকের বয়ানও রয়েছে চার্জশিটে।