Advertisement
E-Paper

মেয়ে পাচার রুখতে স্কুলে ক্লাস পুলিশের

স্কুলঘর। সারি সারি বেঞ্চে হাজির কয়েকশো ছাত্রী। তবে যিনি তাদের পড়াচ্ছেন, তিনি স্কুলের কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা নন।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৫

স্কুলঘর। সারি সারি বেঞ্চে হাজির কয়েকশো ছাত্রী। তবে যিনি তাদের পড়াচ্ছেন, তিনি স্কুলের কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা নন। তাঁর পরনে পুলিশের উর্দি। ব্ল্যাকবোর্ডের পাশে সাদা পর্দায় একের পর এক ছবি দেখিয়ে কিছু বুঝিয়ে চলেছেন ওই মহিলা পুলিশ আধিকারিক। ছাত্রীদের দিকে মাঝেমধ্যে ছুড়ে দিচ্ছেন ছোট ছোট প্রশ্ন। কখনও উত্তর পাচ্ছেন, কখনও কখনও ক্লাসঘর নিরুত্তর।

ছবিটি ডায়মন্ড হারবার থানা এলাকার সংগ্রামপুর তাবারকিয়া বাই মাদ্রাসা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের। স্কুলের রোজকার পাঠ নয়। নারী পাচার রুখতে সচেতনতার পাঠ দিতে স্কুলে-মাদ্রাসায় হাজির হচ্ছে পুলিশ। ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্পে প্রতি সপ্তাহে স্কুল ও মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্লাস নিচ্ছেন পুলিশ অফিসারেরা। মাঝেমধ্যে থাকছেন পদস্থ পুলিশকর্তারাও।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র রিপোর্ট বলছে, গত কয়েক বছরে কিশোরী-তরুণী পাচারে পশ্চিমবঙ্গের স্থান কখনও শীর্ষে, কখনও দু’নম্বরে। তার মধ্যে বেশির ভাগ পাচারই হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে। কখনও বিয়ের নামে, কখনও বা কাজের টোপ দিয়ে চলছে নারী পাচার। কিশোরী আয়েশাকে ডায়মন্ড হারবার থেকেই তুলে নিয়ে গিয়ে এক বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্য ঘুরিয়ে অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে দিল্লির এক হাসপাতালের সামনে ফেলে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার জেলা থেকেই নারী পাচার নিয়ে তৃণমূল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) অজেয় রানাডে জানান, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ আর মালদহের মতো স্পর্শকাতর আরও চারটি জেলাকে এই সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাছাই করা হয়েছে।

২০১৫-র ডিসেম্বরে দিল্লির হাসপাতালে ফেলে যাওয়া আয়েশার দুর্দশাই টনক নাড়িয়ে দেয় পুলিশ-প্রশাসনের। সেই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশে। মেয়েটিকে উদ্ধার করলেও তাকে বাঁচানোর আশা ছিল খুব কম। তার নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে গিয়েছিল। শরীরে বাসা বেঁধেছে এইচআইভি পজিটিভ।

তার পরেই নারী পাচারের মোকাবিলায় কোমর বাঁধে পুলিশ। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় কী ভাবে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হয়। সাহায্য আর পরামর্শের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিরও দ্বারস্থ হয় পুলিশ। জুলাইয়ে শুরু হয় প্রকল্প ‘স্বয়ংসিদ্ধা’।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য কী?

জেলার সব স্কুল-মাদ্রাসা ও গ্রাম পঞ্চায়েতে পৌঁছে নারী পাচারের ব্যাপারে বাসিন্দাদের সচেতন করাই স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্পের লক্ষ্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক পদস্থ পুলিশকর্তা জানান, ওই জেলায় স্কুলের সংখ্যা ১০৭৭ আর গ্রাম পঞ্চায়েত আছে ৩১২টি। সর্বত্রই চলছে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ। প্রতিটি স্কুলে তিন জন ছাত্রী ও দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি কমিটি। তাদের সঙ্গে যোগ থাকছে পুলিশের। স্কুলে রাখা হচ্ছে অভিযোগের বাক্সও।

কী করবে কমিটি?

ওই পুলিশকর্তা জানান, তাঁরা ক্লাসে মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দিচ্ছেন। ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেওয়া হচ্ছে কিছু কিছু পরামর্শ। বাড়ি-স্কুল যাতায়াতের পথে কেউ কোনও ছাত্রীকে কিছু বললে বা পিছু নিলে তা জানাতে বলা হচ্ছে ওই কমিটিকে। কারও মোবাইলে কোনও অপরিচিত ব্যক্তি আলাপ জমাতে চাইলে সে-কথা ‘শেয়ার’ করে দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। কেউ চাইলে নিজের সমস্যার কথা লিখে স্কুলের অভিযোগ বাক্সে জমা দিতে পারবে। কোনও ছাত্রী কয়েক দিন স্কুলে না-এলে কমিটিই তা জানাবে পুলিশকে। একই ধরনের কমিটি তৈরি হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতেও। তা ছাড়াও আশাকর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্পে। অন্যেরা করবে সাহায্য। সদাজাগ্রত থেকে মেয়েরা নিজেদের রক্ষা করতে হয়ে উঠবে সিদ্ধহস্ত, হয়ে উঠবে স্বয়ংসিদ্ধা— এটাই লক্ষ্য প্রকল্পের।

Women Trafficking Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy