বিহারে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই আনন্দে আটখানা মেরঠের বলবিন্দর সিংহ সেখো। এক ধাক্কায় হাতে তাঁর অনেক কাজ এসে গিয়েছে। সেই কাজ সামাল দিতে সানন্দেই পটনায় নিজের কোম্পানির কর্পোরেট অফিস পর্যন্ত খুলে দিয়েছেন বলবিন্দর। খুবই ব্যস্ত তাঁর সেলস ম্যানেজাররাও।
বলবিন্দর সিংহ ‘বুলেটপ্রুফ সিস্টেম লিমিটেড’-এর মালিক। আর ভোট আসতেই নিজেদের ‘প্রিয়’ স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেইকল বা এসইউভি-কে বুলেটপ্রুফ করানোর জন্য বিহার রাজনীতির নেতাজিরা লাইন দিচ্ছেন তাঁর কারখানায়। শুধু বুলেটপ্রুফ বললেও ভুল হবে। গাড়িকে বুলেটপ্রুফ করানোর পাশাপাশি তাতে বিস্ফোরক নিরোধক ব্যবস্থা বসানোর কাজ করানোর জন্যও যেন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে বিহারিবাবুদের।
উত্তরপ্রদেশের মেরঠে সেই ১৯৯৪ সাল থেকে গাড়িকে বুলেটপ্রুফ করার সংস্থাটি চালাচ্ছেন বলবিন্দর। তিনি জানিয়েছেন, বিহার থেকে কম করে এ বারে পাঁচশো গাড়ি তাঁর সংস্থায় এসেছে। ইতিমধ্যেই ২০০ গাড়ির কাজ শেষ করে কোম্পানি তা গাড়ি মালিকদের ডেলিভারিও দিয়ে দিয়েছে। সংস্থার হিসেবে, একটি গাড়িকে বুলেটপ্রুফ করতে ১৬ থেকে ২৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়। স্করপিও থেকে ইনোভা, সাফারি থেকে পাজেরো, সব ধরনের গাড়িই বুলেটপ্রুফ করাতে আসছে ওই কারখানায়। স্করপিও এবং সাফারির বুলেটপ্রুফ করাতে খরচ হচ্ছে ১৫ লক্ষ। ফরচুনার এবং পাজেরো বুলেটপ্রুফ করাতে খরচ ১৭ লক্ষ। তার সঙ্গে অতিরিক্ত ৭ লক্ষ দিলে গাড়িকে বিস্ফোরক নিরোধকও করে দেবেন তাঁরা। ব্যবসার চাপ এতটাই যে পরিষেবা দিতে পটনায় শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট অফিস খুলতে হয়েছে বলবিন্দরজিকে। সেখানেই গাড়ির মালিকরা টাকা দিয়ে বুকিং করাচ্ছেন। তবে ব্যবসায়িক নীতি মেনে কাস্টমারদের নাম গোপনই রাখা হচ্ছে।
কীভাবে গাড়িকে বুলেটপ্রুফ করা হয়? সংস্থার এক কর্তার কথায়, একটি গাড়ির টায়ার থেকে মাথার ছাদ, সব কিছুকেই নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে বুলেট-নিরোধক হিসেবে তৈরি করা হয়। প্রথমে টায়ারের ভিতরে ব্যালাস্টিক ফাইবার ব্যবহার করে তা বুলেটপ্রুফ করা হয়। জ্বালানি ট্যাঙ্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ ধরনের কোটেড ইস্পাত ব্যবহার করে তাকেও সুরক্ষিত করা হয়। জানলা এবং উইন্ডস্ক্রিনকে চারটি স্তরে কাঁচ ও পলিকার্বনেট দিয়ে বুলেট নিরোধক করা হয়। ব্যাটারি ব্যাকআপ রেখে রেডিয়েটরের অতিরিক্ত সুরক্ষা, ছাদে এবং গাড়ির নীচেও উন্নতমানের ইস্পাত ব্যবহার করে গোটা গাড়িকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত করা হয়।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন বিহারের নেতারাই বুলেট এবং বিস্ফোরক রোধক গাড়ি করাতে এত উৎসাহী? জবাব দিয়েছেন বলবিন্দর সিংহ। মেরঠ থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘শুধু নেতারা অর্ডার দিচ্ছেন বললে ভুল হবে। নেতারা তো আছেনই, বিহারের ব্যবসায়ীরাও অনেকেই নতুন গাড়ি কিনে আমাদের কাছে পাঠাচ্ছেন। একটু টাকা খরচ করে যদি সুরক্ষিত থাকা যায়, তাহলে ক্ষতি কী!’’ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘শুধু নির্বাচনের সময়ে নয়, বছরের অন্য সময়েও বিহার থেকে অনেক অর্ডার আসে। কেন না বিহারে অপরাধের হার সব সময়েই বেশি। তাই সকলেই একটু অতিরিক্ত সুরক্ষা চান।’’ বিহার ছাড়াও বলবিন্দরজির কাছে অর্ডার আসে ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তীসগঢ় থেকেও।
তবে এই বুলেটপ্রুফিংয়ের মধ্যেও চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন বিহারের শাসক জেডিইউ। দলের নেতাদের মতে, বিহারে আইন-শৃঙ্খলা মোটেও খারাপ নয়। আসলে নিজেদের আর্থিক ক্ষমতা দেখানো এবং সামাজিক মর্যাদা অর্জনের জন্য লোকে বুলেটপ্রুফিং করছেন। দলের রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহের কথায়, ‘‘বিহারকে বদনাম করার চক্রান্তও এটা হতে পারে। ভাল করে বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। যদি অপরাধীরা গাড়ি বুলেটপ্রুফ করায় তাহলে কী হবে, সেটা ভেবেছেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy