E-Paper

বিপুল ভোটের পিছনে কারা, শুরু বিশ্লেষণ

কাদের ভোটের কারণে গত কাল প্রথম পর্বে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়েছে তা বিশ্লেষণে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। সাধারণ প্রবণতা হল, প্রচুর পরিমাণে ভোট যদি পড়ে সে ক্ষেত্রে তা ক্ষমতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:০৮

—ফাইল চিত্র।

মহিলা না পরিযায়ী শ্রমিক!

কাদের ভোটের কারণে গত কাল প্রথম পর্বে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পড়েছে তা বিশ্লেষণে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। সাধারণ প্রবণতা হল, প্রচুর পরিমাণে ভোট যদি পড়ে সে ক্ষেত্রে তা ক্ষমতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। কিন্তু রাজনীতিকদের মতে, বিহারে যদি মহিলাদের কারণে ভোটের হার বাড়ে তাহলে তা এনডিএ-র জন্য শুভ সঙ্কেত। আর যদি পরিযায়ী শ্রমিকের কারণে রেকর্ড সংখ্যক ভোটের সাক্ষী থাকে বিহার, তাহলে এনডিএ-র পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, প্রথম পর্বের যে ভোটের হার জানা গিয়েছে তা প্রাথমিক। চূড়ান্ত ভোট পড়ার হার এখনও জানায়নি নির্বাচন কমিশন। এখনও দ্বিতীয় পর্বের ভোট বাকি রয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে কার পক্ষে কেমন ভোট পড়ে তার উপরে ভোটের ফলাফল নির্ভর করছে।

গত কাল বিহারের প্রথম পর্বের ১২১টি কেন্দ্রে প্রায় ৬৪.৬৯% শতাংশ ভোট পড়ে। যাকে ঐতিহাসিক বলে ব্যাখ্যা করেছে নির্বাচন কমিশন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গত কালের হওয়া ১২১টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ২,০৭,০৯,২১৯টি। সেখানে এ বারে পড়েছে ২,৪২,৬৭,৩৫৫টি ভোট। ব্যবধান প্রায় ৩৫,৫৮,৫১৬টি ভোটের। অর্থাৎ প্রতি বিধানসভা পিছু প্রায় ২৯,৪০৬টি বেশি ভোট পড়েছে। তেমনই পরিসংখ্যান বলছে ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ২০২০ সালে প্রতি বিধানসভা পিছু গড়ে ১৪,৯১২টি ভোট বেড়েছিল। এ বার যে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়েছে।

প্রশ্ন হল কারা এই বাড়তি ভোটার? বাড়ির মহিলারা দলে দলে বেরিয়ে আসাতেই এ বারে কি ভোটের হার বেড়েছে, না কি যুব সমাজ ভোট না দেওয়ার অনীহা কাটিয়ে এ বার ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিল। নাকি এই ভোটারেরা পরিযায়ী শ্রমিক। যাঁরা ছটের ছুটিতে এসে বাড়তি আরও এক সপ্তাহ ভোট দেওয়ার জন্য রয়ে যান। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে রাজনৈতিক দলগুলি। এ দিকে আজ রাত পর্যন্ত বিহারে প্রথম দফায় সরকারি ভাবে মহিলা ও পুরুষের ভোট দেওয়ার শতকরা হার জানায়নি কমিশন। কিংবা নতুন ভোটার কত ভোট দিয়েছে তাও জানানো হয়নি। তবে বিহারের গত কয়েক বছরের ভোট দেওয়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০১৯ সালের লোকসভা কিংবা ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। এনডিএ শিবিরের বক্তব্য, গত কালের ভোটেও সেই চিত্র লক্ষ্য করা গিয়েছে। মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বুথে বুথে মহিলাদের ভিড়ে রীতিমতো আশ্বস্ত নীতীশ শিবিরের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে মহিলাদের বিপুল জনসর্থন পেয়েছিল নীতীশ তথা এনডিএ জোট। মহিলাদের হাতে অর্থ তুলে দেওয়া, বিভিন্ন রোজগারধর্মী প্রকল্প, বিনামূল্যে আনাজ, মহিলাদের নিরাপত্তা, ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার মতো প্রকল্পের সাফল্যেই মহিলারা দলবদ্ধ হয়ে এনডিএ-কে সমর্থন করেছেন বলে মত রাজনীতিকদের। এ বারও বাড়তি ভোটের পিছনে যদি মহিলারা থাকেন তাহলে প্রথম পর্বের ভোটে রেকর্ড সংখ্যক আসনে জিততে চলেছে এনডিএ প্রার্থীরা বলে দাবি গেরুয়া নেতৃত্বের।

বিরোধীদের মতে, বাড়তি ওই ভোটের পিছনে রয়েছে ছটের পরে রয়ে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা। ওই রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের পরে এটিই ছিল প্রথম নির্বাচন। বিরোধী শিবিরের মতে, তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অনেক পরিযায়ী শ্রমিকই তালিকা সংশোধনের পরে হওয়া প্রথম ভোটটি এ যাত্রায় দিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। আরজেডি-র দাবি সত্যিই যদি পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভোট দেওয়ার জন্য থেকে যান, তাহলে সেই ভোট অবশ্যই এনডিএ শিবিরের বিপক্ষে যাওয়ার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ উপার্জনের খোঁজে বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাইরে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের তীব্র ক্ষোভ রয়েছে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে। সেই পরিস্থিতিতে ভাল ফল করতে চলেছে আরজেডি-কংগ্রেস। তৃতীয় সম্ভাবনা হল, নতুন প্রজন্ম। তালিকা সংশোধনের পরে প্রায় ২১ লক্ষ নতুন ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। যাদের সিংহভাগই হল প্রথম বারের ভোটার। যাঁরা গত দু’দশক ধরে বড় হয়েছেন নীতীশ শাসনে। আবার যাঁদের লালুপ্রসাদ জমানার জঙ্গলরাজ সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। ফলে ওই নতুন প্রজন্মের ভোট কোন পক্ষে যায় তার উপরেও বিহারের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar Assembly Election 2025 Bihar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy