ভোর রাতে এলাকায় হাজির হয়েছিল পেল্লায় আকারের চারটি মাটি খোঁড়ার যন্ত্র। শীতের রাতে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলি সম্ভবত কল্পনাও করতে পারেননি, আগামী কয়েক ঘণ্টায় তাঁদের মাথার ছাদ ছিনিয়ে নিতে চলেছে ওই যন্ত্রগুলি। এর পরের সময়টা কার্যত সামনে দাঁড়িয়ে এলাকার ২০০টি বাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়া দেখেছিলেন তাঁরা। চিত্রটা কর্নাটকের কোগিলু গ্রামের ফকির কলোনি এবং ওয়াসিম লে-আউটের। মূলতমুসলিম প্রধান ওই এলাকার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযোগ, ওই এলাকায় সরকারি জমিতে বাড়িগুলি তৈরি করা হয়েছিল। কর্নাটক সরকারের সাম্প্রতিক এমন অভিযান ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। সামনে এসেছে উত্তরপ্রদেশে যোগী রাজ্যের বুলডোজ়ার-মডেলের তত্ত্বও।
গত ২২ ডিসেম্বর ভোরের এই ঘটনাকে সামনে রেখে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারকে বিঁধেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সিদ্দারামাইয়ার সরকারের এমন পদক্ষেপকে সংখ্যালঘুদের প্রতি হানা বলেও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে পিনারাই বিজয়ন লিখেছেন, ‘‘...কোনও সরকার যখন ত্রাসকে হাতিয়ার করে শাসন চালায়, তখন সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং পারস্পরিক মর্যাদার মতো বিষয়গুলি সহজেই হারিয়ে যায়।’’ প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমাজমাধ্যমের এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার। তিনি বলছেন, ‘‘আমরা কারও উপর বুলডোজ়ার চালাইনি। সরকারের তরফে ওই মানুষগুলিকে অন্যত্র সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।’’ পাশাপাশি তিনি আরও জুড়ছেন, যে এলাকায় এই অভিযান চলেছে সেটি আদতে বর্জ্য ফেলার জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থান। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে ওই এলাকায় বস্তি তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছিল।
এ দিকে, কোগিলু গ্রামের ফকির কলোনি এবং ওয়াসিম লে-আউট এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কর্নাটক প্রশাসনের তরফে এমন পদক্ষেপ করা হতে চলেছে কিংবা বাড়ি খালি করার বিষয়ে তাঁদের কোনও আগাম বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়নি। ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিগত প্রায় ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা ওই এলাকার বাসিন্দা। এমনকি তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে আধার এবং ভোটার কার্ডও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)