প্রভাত পট্টনায়েক। —ফাইল চিত্র।
ত্রিপুরার ভোটে সিপিএমের হার এমনিতেই দলের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে বিতর্কে নতুন মোড় এনেছে। সেই প্রশ্নে এ বার নতুন ইন্ধন জোগালেন বামপন্থী অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক।
প্রকাশ কারাটের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রভাত কার্যত সীতারাম ইয়েচুরির রাজনৈতিক লাইনের পক্ষেই সওয়াল করে যুক্তি দিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে সব ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দলগুলিকে ‘অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি’র ভিত্তিতে ফ্রন্ট তৈরি করতে হবে। সেখানে অনুঘটকের ভূমিকা নিতে হবে বামেদেরই। বস্তুত, অতীতে হরকিষেণ সিংহ সুরজিত যে ভূমিকা নিতেন, ইয়েচুরিকে সেই ভূমিকাতেই দেখতে চাইছেন প্রভাত।
পার্টি কংগ্রেসের আগে রাজনৈতিক লাইন নিয়ে বিতর্কে ঠিক এই প্রস্তাবই দিয়েছিলেন ইয়েচুরি। কিন্তু জাতীয় স্তরে কংগ্রেস বা অন্য দলগুলির সঙ্গে কোনও রকম জোট না করার কারাটের তত্ত্বেই পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সিলমোহর বসান। সাধারণ সম্পাদক হলেও ইয়েচুরির খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে গিয়েছিল।
ইয়েচুরি এখনও রণে ভঙ্গ না দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রন্টের পক্ষে সওয়াল করছেন। ত্রিপুরার হারের পর নতুন করে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে রুখে দাঁড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন কেরলের প্রবীণ নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনও। আর পট্টনায়ক এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘বামেদের হিন্দুত্ব শক্তির বিরুদ্ধে বিকল্প নীতিতে তৈরি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় বিজেপির আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া বামেদেরও নিজেদের রক্ষা করতে হবে।’
ইয়েচুরিও একই ভাবে কর্মসূচি তৈরি করে মোদী সরকারের পাল্টা রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরির পক্ষে কথা বলছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সম্মেলনের মধ্যে প্রভাতের এই যুক্তিতে মনোবল পেয়েছেন বাংলার সিপিএম নেতারাও। সম্মেলনে এমনিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে সরব হচ্ছেন। সম্মেলনে দ্বিতীয় দিনের আলোচনার অবসরে মঙ্গলবার ইয়েচুরিও বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরার পরিস্থিতি দেখিয়ে দিচ্ছে, আরএসএস কী ভাবে ফ্যাসিস্ত কর্মসূচি রূপায়ণে নেমেছে। বিজেপি তাদেরই রাজনৈতিক ফ্রন্ট। এই বিভাজনের শক্তির মোকাবিলায় যারা এগিয়ে আসবে, সকলকে নিয়েই গণ-আন্দোলন গড়তে হবে।’’ নির্বাচনী আঁতাঁতের কথা যে তিনি এখন বলছেন না, তা-ও অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইয়েচুরি।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক পট্টনায়কের যুক্তি, যেমন-তেমন ভাবে পার্টিগুলি একসঙ্গে এলেই হবে না। চাই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি। না হলে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও তাতে মানুষের কোনও লাভ হবে না। খুব শীঘ্রই মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে। তাঁর মতে, ত্রিপুরার হার থেকে শিক্ষা নিয়ে বামেদের রাজনৈতিক লাইন বদলাতে হবে। কারাট শিবির অবশ্য এখনও বলছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতামতের গণসংগঠনগুলিকে মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে আন্দোলন করতে হবে। সেখান থেকেই বিপরীত ভাষ্য তৈরি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy