একই সঙ্গে ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ায় ভুগছেন ক্রিকেটার যুজবেন্দ্র চহল। অসুস্থতার কথা নিজেই জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দুই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায়, তাঁকে অনেক বেশি সাবধানে থাকতে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ভারতীয় দলের এই ডানহাতি স্পিনার। আপাতত বিশ্রামেই রয়েছেন তিনি। ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া, দুই-ই মশাবাহিত রোগ। দু’টিই হয় ভাইরাসের সংক্রমণে। এখন কথা হল, একই সঙ্গে দুই ভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়া কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?
করোনার সময়ে কোভিড ও ডেঙ্গির সংক্রমণ একই সঙ্গে হতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের বক্তব্য, মশার উৎপাত যেখানে বেশি, সেখানে ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ একই সঙ্গে হতে পারে। যে হেতু একই মশা অর্থাৎ, এডিস ইজিপ্টাই দুই ভাইরাসেরই বাহক হতে পারে, তাই অনেক সময় একজন মানুষের শরীরে একসঙ্গে দু’টি সংক্রমণই দেখা দিতে পারে। একে বলা হয় 'কো-ইনফেকশন'।
আরও পড়ুন:
গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা দেশেরই প্রবল মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ডেঙ্গি। সেই সঙ্গেই হানা দিয়েছে চিকুনগুনিয়াও। ভয়ের কারণ একটাই, ডেঙ্গির মতো চিকুনগুনিয়ার জন্যও দায়ী এডিস ইজিপ্টাই মশা। একই মশা দুই ভাইরাস বহন করতে পারে। তাই এডিস মশা কামড়ালে একই সঙ্গে দুই ভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়া অস্বাভাবিক নয়। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল, ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া দুই ক্ষেত্রেই জ্বর ঘুরেফিরে আসবে, সেই সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা হবে। ডেঙ্গিতে চোখের পিছনে ব্যথা হতে পারে, গায়ে র্যাশ বেরোতে পারে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি আরও বেশি। তাই ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া একসঙ্গে হলে, উপসর্গের তীব্রতা আরও বেশি হবে।
দুই ভাইরাসের সংক্রমণে কী কী লক্ষণ তীব্র হবে?
জ্বর ১০৪ ডিগ্রি অবধি উঠতে পারে। জ্বর ঘুরেফিরে আসবে।
হাঁটু ও শরীরের অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা হবে। অস্থিসন্ধি ও তার আশপাশের এলাকা ফুলে উঠবে। রোগ সেরে যাওয়ার পরে এই ব্যথা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরেও থাকতে পারে।
জ্বর আসার পরে গায়ে, হাতে-পায়ে ফুস্কুড়ি বেরোবে। ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাবে।
পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হবে, কিছু খেলেই বমি হয়ে যাবে। সারা ক্ষণ বমি ভাব থাকবে।
শ্বাসকষ্ট হতে পারে রোগীর, ক্লান্তি বহুগুণে বেড়ে যাবে। সপ্তাহখানেক এই ক্লান্তি, ঝিমুনি থাকবে।
ডেঙ্গির তুলনায় চিকুনগুনিয়ায় রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কম, তবে দুই ভাইরাস একসঙ্গে শরীরে ঢুকলে গ্রন্থিগুলি ফুলে উঠবে। রোগীর চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। নাক, মাড়ি থেকে রক্ত বার হতে পারে।
কোন কোন টেস্ট করিয়ে নেওয়া জরুরি?
ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস দমনে কিন্তু কোনও ওষুধই নেই। টিকাও নেই। ভাইরাসের হামলায় যে ক্ষতি হয়, তার মেরামত আর উপসর্গের মোকাবিলা করাটাই চিকিৎসা। মশার লালাবাহিত হয়ে ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকে। আর এদের যত রোষ যেন হাড়ের উপরেই। তাই অস্থিসন্ধির ব্যথা মারাত্মক হয়। এ রোগে জ্বরের দেড়-দু’বছর বাদেও চলতে পারে ব্যথার প্রকোপ।
ডেঙ্গিতে এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হয়। আর চিকুনগুনিয়ায় আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট করা জরুরি। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসই শরীরে ঢুকেছে কি না, তা শনাক্ত করতে পিসিআর টেস্টও করা হয়। জ্বর আসার প্রথম তিন দিনের পর এনএস১ টেস্ট ও চিকুনগুনিয়ার জন্য পিসিআর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। জ্বর সাত দিনের বেশি থাকলে আইজিএম বা আইজিজি পরীক্ষা করাতেই হবে।