Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রপতি শাসনে উত্তরাখণ্ড, হুলে বিদ্ধ সরকার বরখাস্ত

আস্থা ভোটে কাল জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল হরীশ রাওয়ত সরকারের। তার এক দিন আগেই আজ নাটকীয় ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হল উত্তরাখণ্ডে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল উত্তরের এই সীমান্ত-রাজ্যে। যদিও এতে অনুঘটকের কাজ করল একটি স্টিং অপারেশন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৪:২০
তখনও মুখ্যমন্ত্রী। সরকার খোয়াচ্ছেন আঁচ পেয়েই রবিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে ‘গণতন্ত্র হত্যা’র অভিযোগ জানাচ্ছেন হরীশ রাওয়ত। দেহরাদূনে। ছবি: পিটিআই

তখনও মুখ্যমন্ত্রী। সরকার খোয়াচ্ছেন আঁচ পেয়েই রবিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে ‘গণতন্ত্র হত্যা’র অভিযোগ জানাচ্ছেন হরীশ রাওয়ত। দেহরাদূনে। ছবি: পিটিআই

আস্থা ভোটে কাল জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল হরীশ রাওয়ত সরকারের। তার এক দিন আগেই আজ নাটকীয় ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হল উত্তরাখণ্ডে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল উত্তরের এই সীমান্ত-রাজ্যে। যদিও এতে অনুঘটকের কাজ করল একটি স্টিং অপারেশন।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মুখে যে ভাবে তৃণমূলকে বেগ দিচ্ছে নারদ-নিউজের স্টিং অপারেশন, তেমনই উত্তরাখণ্ডে গোপন ক্যামেরার আর একটি হুল গত কাল বেজায় বেকায়দায় ফেলে দেয় মুখ্যমন্ত্রী রাওয়ত ও তাঁর সরকারকে। যাতে দেখা যায়, বিধায়কদের কোটি কোটি টাকায় কিনতে চাইছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেসের ন’জন বিধায়ক বিদ্রোহ করে বিজেপি শিবিরে চলে যাওয়ায় গত কিছু দিন ধরে টালমাটাল অবস্থাতেই ছিল তাঁর সরকার। কিন্তু বিধানসভার স্পিকার গত কাল ওই ন’জন বিদ্রোহী বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়ায়, আস্থা ভোটে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের বিষয়টি প্রায় সামলেই এনেছিলেন রাওয়ত। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁকে নতুন সঙ্কটে ফেলে দেয় ওই স্টিং অপারেশন। আর সেটিকে শেষ হাতিয়ার করেই উত্তরাখণ্ডে আজ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে গত কাল রাতেই অসম সফর কাটছাঁট করে দিল্লি আসেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশও পাঠানো হয়। আজ তাতে সিলমোহর বসার পর বিজেপির তরফে জানানো হয়, রাজ্যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত। কংগ্রেসের বক্তব্য, সোমবার আস্থা ভোটে জিতে রাওয়ত সরকার এ যাত্রা টিকে যাবে বুঝতে পেরেই গণতন্ত্রকে হত্যা করল মোদী সরকার। রাষ্ট্রপতি শাসনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাবে কংগ্রেস।

রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে সরকারে মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি বলেন, এ মাসের ১৮ তারিখে বাজেট পেশের আগেই বিজেপি ও কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ বিধায়করা স্পিকারের কাছে লিখিত ভাবে ভোটাভুটির দাবি করেন। বাজেট পেশের সময়ও তাঁরা একই দাবি জানান। সে সময় রাওয়ত সরকার সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও স্পিকার তা উপেক্ষা করেন। যার ফলে বাজেট পেশই হয়নি বিধানসভায়। এর ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, ১ এপ্রিল থেকে কোনও সরকারি কাজে টাকা আসবে না। কর্মীরা বেতনও পাবেন না। এখন কেন্দ্রকেই সে কাজ করতে হবে। জেটলি ছুঁয়ে যান স্টিং অপারেশনের প্রসঙ্গও। বলেন, ওই অপারেশনেই স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিধায়ক কেনাবেচায় নেমেছেন। সব মিলিয়ে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হওয়ায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারিই উপযুক্ত পদক্ষেপ।

তবে সূত্রের খবর, এই ক্ষেত্রে রাজ্যপাল কৃষ্ণকান্ত পল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশই করেননি। তা সত্ত্বেও কেন কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসনের পথেই হাঁটল?

জেটলির ব্যাখ্যা, সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপালের সুপারিশে কিংবা তাঁর সুপারিশ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যায়। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে। তবে বিজেপি নেতৃত্ব যে রাজ্যপালের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ, সেটা স্পষ্ট। রাজ্যের বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্যপাল তাঁর ভূমিকা পালন করেননি। বাজেট পাশ না হওয়া সত্ত্বেও স্পিকার সেটি ধ্বনিভোটে পাশ হয়েছে বলে মেনে নেন। রাজ্যপালও তার স্বীকৃতি দেন। আস্থা ভোটের জন্যও দীর্ঘ দশ দিন সময় দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এতেই বিধায়ক কেনাবেচার সুযোগ পেয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সঙ্গে সঙ্গে আজই রাজ্যপালের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা হয়েছে সিআরপিএফের প্রাক্তন ডিজি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সচিব রবীন্দ্র সিংহকে।

হরীশ রাওয়ত অবশ্য আজ সকালেই রাষ্ট্রপতি শাসনের আঁচ পেয়েছিলেন। তাই সকালেই সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেকে ‘শহিদ’ হিসেবে তুলে আবেগ-তাস খেলেন। বলেন, ‘‘আমি জনতার দরবারে যাব।’’ কংগ্রেস নেতৃত্ব আসরে নামেন রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর। তাঁদের বক্তব্য, বরখাস্ত হওয়া ন’জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ক কাল আস্থা ভোটে অংশ নিতে না পারলে রাওয়ত অনায়াসে সরকার বাঁচিয়ে নিতেন। কপিল সিব্বলের বক্তব্য, আসলে মোদী সরকার কংগ্রেস-মুক্ত দেশ চান। তাই বেছে বেছে কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি
করছে। অরুণাচলের পর এখন উত্তরাখণ্ড। এ বার অন্যান্য কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যেও কোপ পড়তে পারে। বিজেপির হাজারো স্টিং বাজারে রয়েছে। মোদী সরকার তো এর জন্য বিজেপি-শাসিত কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চাপিয়ে দেয় না!

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার এই সুযোগ ছাড়েননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এরা গোটা দেশেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চায়।’’

President’s Rule imposed Uttarakhand
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy