Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তেল মহার্ঘই

গত ১৬ জুন থেকে রোজই দাম বদলাচ্ছে পেট্রোল ও ডিজেলের। কখনও অল্প কমছে। বেশিরভাগ দিনই কয়েক পয়সা করে বাড়ছে। হিসেব বলছে, ১৬ জুন থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পেট্রোলের দাম ৭ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। আর ডিজেলের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদী যে কথা বলতেন, এখন সে কথাই বলছেন কংগ্রেস নেতারা। আর মনমোহন সিংহের আমলে তাঁর মন্ত্রীরা যে কথা বলতেন, মোদীর মন্ত্রীদের মুখে এখন ঠিক সেই বুলি।

পেট্রোল ও ডিজেলের দাম নিয়ে রাজনীতিতে এখন এমনই প্রহসন!

গত ১৬ জুন থেকে রোজই দাম বদলাচ্ছে পেট্রোল ও ডিজেলের। কখনও অল্প কমছে। বেশিরভাগ দিনই কয়েক পয়সা করে বাড়ছে। হিসেব বলছে, ১৬ জুন থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পেট্রোলের দাম ৭ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। আর ডিজেলের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি। সোমবার কলকাতায় পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৭৩.০৫ টাকা। ১৬ জুন যা ছিল ৬৮.০৬ টাকা। অর্থাৎ লিটারে প্রায় ৫ টাকা দাম বেড়েছে। ডিজেলেও একই সময়ে ৪.৫৮ টাকা দাম বেড়েছে।

রাজনৈতিক লড়াইয়ের সুরও চড়েছে। তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী থেকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর যুক্তি, পেট্রোল বা ডিজেল, কোনওটারই দাম এখন আর সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। তেল সংস্থাগুলিই আন্তর্জাতিক বাজারদরের নিরিখে দাম ঠিক করে। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির কটাক্ষ, ‘‘পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ানোর জন্যই ধর্মেন্দ্রর পদোন্নতি হল।’’

ইউপিএ আমলেও মন্ত্রীদের যুক্তি আর বিরোধীদের কটাক্ষের বয়ান ছিল বিলকুল এক। ২০১০ সালের ২৫ জুন তেলের দামের উপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে যায়। তার পর তেলের দাম বাড়লেই মনমোহন সরকারের মন্ত্রীরা বলতেন, সরকারের হাতে আর কিছু নেই। আর পাল্টা সরব হতেন বিরোধীরা। ২০১২-র মে মাসে একবার পেট্রোলের দামবৃদ্ধির পর তদানীন্তন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্যুইট করেছিলেন, ‘পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি কংগ্রেসের ইউপিএ-সরকারের ব্যর্থতার নমুনা।’ ২০১১-এ আরেকবার পেট্রোলের দাম বাড়ার পর স্মৃতি ইরানি অভিযোগ তোলেন, ‘ইউপিএ সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের যন্ত্রণার কথা ভাবে না।’ অথচ মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে ইউপিএ-র পথে হেঁটেই তেলে ভর্তুকি কমাতে পেট্রোলের মতো ডিজেলের দামেও সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়।


আগাম বাজারে ব্যারেল পিছু ইউরোপীয়ান অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড)দর ডলারে | তথ্যসূত্র: ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কলকাতায় ১ লিটার পেট্রোলের দর টাকায় | তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান অয়েল

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অবশ্য আরও একটা অভিযোগ রয়েছে। তা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমলেও মোদী সরকার তার ফায়দা আমজনতাকে দেয়নি। বরং উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে তেলের দাম প্রায় আগের জায়গাতেই ধরে রেখেছে। ২০১৪-র ২ জুন যখন অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ১০৯.৩৪ ডলার, তখন কলকাতায় পেট্রোলের দাম ছিল ৮০ টাকার কাছাকাছি। এর পর ২০১৬-র ১০ মার্চ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩৮.৬৩ ডলারে নামলেও পেট্রোলের দাম কমে লিটারে মাত্র ২০ টাকার মতো। কারণ, মোদী জমানায় পাঁচ দফায় পেট্রোলে উৎপাদন শুল্ক লিটারে ১১.৭৭ টাকা এবং ডিজেলে ১৩.৪৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আমজনতাকে সুরাহা দিতে এ বার কি করের বোঝা কমাবে মোদী সরকার? ধর্মেন্দ্র প্রধানের বক্তব্য, তেমন পরিস্থিতি এখনও আসেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE