অমেঠীতে রোড শোয়ে প্রিয়ঙ্কা ও রাহুল। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে। ফাইল চিত্র
দুবাই থেকে আমেরিকায় উড়ে গিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। বোনকে বোঝাতে যে, রাজনীতিতে পা রাখার এটাই মোক্ষম সময়। প্রিয়ঙ্কা বঢরা এখনও দেশে ফেরেননি। কিন্তু তাঁকে রাজি করিয়ে আজই রাহুল ঘোষণা করে দিলেন, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হবেন প্রিয়ঙ্কা। ভোটের আগে সামলাবেন পূর্ব উত্তরপ্রদেশ। যা কিনা নরেন্দ্র মোদী আর যোগী আদিত্যনাথের গড়।
এত দিন পিছনে থেকে রাহুলের হাত শক্ত করছিলেন প্রিয়ঙ্কা। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে পা দিলেন রাজনীতিতে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মোদীকে কুপোকাত করতে এটি রাহুলের ব্রহ্মাস্ত্র।
আজই অমেঠী থেকে ভোট সফর শুরু করেন রাহুল। যাওয়ার কথা ছিল সনিয়া গাঁধীরও। কিন্তু তিনি যাননি। কংগ্রেস সূত্র দাবি করছে, অঙ্ক কষেই এই সিদ্ধান্ত। যাতে প্রিয়ঙ্কাকে ঘিরে ঘোষণা আরও গুরুত্ব পায়। রাহুল লখনউতে পা রাখার পরেই খবরটি প্রকাশ করল এআইসিসি। সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ— উল্লাসে ভেসে গেল কংগ্রেস শিবির। বাজি ফাটল, ঢোল বাজল, লাড্ডু বিতরণ হল, আর স্লোগান উঠল, ‘দহন করেগি মোদী কা লঙ্কা, প্রিয়ঙ্কা প্রিয়ঙ্কা’।
আরও পড়ুন: বাজেটে অনিশ্চিত জেটলি, অর্থ ফের পীযূষেরই
অমেঠী পৌঁছে রাহুলও হাসিমুখে বললেন, ‘‘আমার বোন যোগ্য ও কঠোর পরিশ্রমী। আমার সঙ্গে ও কাজ করবে বলে খুব খুশি। শুধু দু’মাসের জন্য আমি ওকে উত্তরপ্রদেশে পাঠাচ্ছি না। গরিব, যুবক, কৃষকদের জন্য লড়াই করে ও আমাদের বিচারধারা প্রসারিত করবে।’’ প্রিয়ঙ্কাকে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়ে রাজ্যের পশ্চিমাংশের ভার রাহুল দিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে। মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী পদ না দিয়ে প্রতিশ্রুতিমাফিক তাঁকেও এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলের সংগঠনের দায়িত্ব থেকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতকে সরিয়ে ভার দেওয়া হয়েছে কে সি বেণুগোপালকে।
ক’দিন আগেই রাহুল বলেছিলেন উত্তরপ্রদেশে ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা দেবেন। কংগ্রেসের একাধিক নেতা বলেন, আজ প্রথম ধাপ হল। কে বলতে পারে এর পর হয়তো বরুণ গাঁধীও কংগ্রেসে যোগ দেবেন!
পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব কেন দেওয়া হল প্রিয়ঙ্কাকে? কংগ্রেস সূত্রের মতে, তিনি এত দিন অমেঠী-রায়বরেলীতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। তাতেই ঘুম ছুটেছিল বিজেপির। এ বার মোদী-যোগীর গড়ে ঘুরলে তাঁদের সেখানেই বেঁধে রাখতে পারবেন। তাতে রাজ্যের অন্যত্র কংগ্রেসের যেমন লাভ হবে, তেমনই প্রভাব পড়বে জাতীয় রাজনীতিতে।
সনিয়া অসুস্থ। তা হলে কি এ বার রায়বরেলী থেকে লড়বেন প্রিয়ঙ্কা? প্রশ্নটি আজ করা হয়েছিল রাহুলকেও। তিনি সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে বলেন, ‘‘সেটা প্রিয়ঙ্কাই স্থির করবে।’’ কিন্তু কংগ্রেস নেতারা আরও বড় সম্ভাবনার কথা বলছেন। এআইসিসি দফতরে আলোচনা, মায়া-অখিলেশের সঙ্গে কথা বলে যদি বারাণসীতে মোদীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো যায় প্রিয়ঙ্কাকে, তা হলে কেমন হয়?
প্রিয়ঙ্কার রাজনীতিতে অভিষেকের জন্য এই সময়টা বাছা হল কেন? গত লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরেই দলে দাবি ওঠে, ‘প্রিয়ঙ্কা লাও, কংগ্রেস বাঁচাও’। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা রাজি হননি। তিনি ব্যস্ত ছিলেন পরিবার নিয়ে। আর রাহুলকে সামনে এগিয়ে দিয়ে সনিয়াও বুঝিয়ে দেন তাঁর প্রথম পছন্দ।
এর পর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের সময়েও প্রিয়ঙ্কাকে রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব দেন কংগ্রেসের তৎকালীন পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর। তখনও রাজি হননি সনিয়া-কন্যা। নীতীশ কুমারের দলে গেলেও প্রিয়ঙ্কার অভিষেককে আজ স্বাগত জানান প্রশান্ত। বিরোধী জোটের নেতা ফারুক আবদুল্লার মন্তব্য, বিরোধী শিবিরে নতুন শক্তি এল।
কংগ্রেসের সূত্রের মতে, প্রিয়ঙ্কা যে এখনও রাজি ছিলেন, এমন নয়। কিন্তু রাহুল তাঁকে বোঝান, এটাই আসল সময়। উত্তরপ্রদেশে যদি এসপি-বিএসপির সঙ্গে কংগ্রেসের ঠিকমতো জোট হত, তা হলে হয়তো প্রিয়ঙ্কার অভিষেক আরও পরে হত। কিন্তু সেটি না হওয়ায় গোবলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যে প্রিয়ঙ্কাকে এনে কংগ্রেসের জমি উদ্ধার করতে চাইছেন রাহুল।
বিজেপির কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, প্রিয়ঙ্কা আসার ফলে দলের মধ্যে আদতে রাহুলের জোর কমবে। কংগ্রেস নেতারা কিন্তু সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, ভাই-বোনের সম্পর্কের বন্ধন খুবই গভীর। খোদ প্রিয়ঙ্কাই একাধিকবার বলেছেন, রাহুলই তাঁর ‘বস’। তাঁর থেকেই নির্দেশ নেবেন তিনি। আর তিন রাজ্যে জয়ের পর রাহুলের পায়ের তলার জমিও এখন শক্ত। দলের পুরো রাশও তাঁর হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy