Advertisement
E-Paper

প্রশ্ন কেন, আবার নিশানায় বিরোধীরা

সে কারণেই বিরোধীদের ‘দেশদ্রোহী’ বলে দেগে দেওয়ার কৌশল নিচ্ছেন মোদী-শাহেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৭
নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

সীমান্ত উত্তেজনা কিছুটা কমার পরেই বালাকোটে সাড়ে তিনশো জঙ্গি মৃত্যুর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদবের মতো বিরোধী নেতারা। আজ সেই প্রশ্ন তোলার জন্যই বিরোধীদের উদ্দেশে তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এবং তাঁরাই স্পষ্ট করে দিলেন, বেকারি-মূল্যবৃদ্ধি-দুর্নীতি-গোরক্ষার নামে খুন-কৃষকের আত্মহত্যার মতো বিষয়কে পিছনে ফেলে ভোটে ‘দেশপ্রেম’ নিয়েই আসর মাত করতে চায় বিজেপি। এবং সে কারণেই বিরোধীদের ‘দেশদ্রোহী’ বলে দেগে দেওয়ার কৌশল নিচ্ছেন মোদী-শাহেরা।

আজ একটি সংবাদমাধ্যমের আলোচনা চক্রে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাঁর বক্তব্যে দেশের বেকারি-অর্থনীতি-কৃষি সঙ্কটের মতো বিষয়গুলি চলে গেল পিছনের সারিতে। শুরুতেই মোদীর আক্রমণের মুখে পড়লেন বিরোধী নেতারা। মোদীর কথায়, ‘‘আজ যখন গোটা দেশ সেনার পাশে দাঁড়াচ্ছে, তখন কিছু লোক সেনার পরাক্রম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। এরা আসলে মোদী-বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশ-বিরোধিতায় নেমে পড়েছেন।’’ মোদীর দাবি, বিরোধী নেতাদের বক্তব্যকে পাকিস্তান কাজে লাগাচ্ছে। বিরোধীদের উদ্দেশে মোদীর প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের ভারতীয় সেনাদের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, না কি যারা সন্ত্রাস ছড়ায় তাদের উপরে বেশি ভরসা করেন?’’ সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, ‘‘আগে সেনা মারা গেলে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হত না। এখন কেউ আমাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস পায় না।’’

বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, দেশের সেনাদের কৃতিত্ব বা ক্ষমতা নিয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ করা হয়নি। উল্টে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সেনাদের নিয়ে নিচু স্তরের রাজনীতি করছেন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, কিছু প্রশ্ন উঠেছে। মোদী এবং তাঁর সঙ্গীদের উচিত, দেশের সম্মানের কথা মাথায় রেখে গত পাঁচ বছরের মতো না করে অন্তত এই বিষয়টি নিয়ে সত্য কথা বলা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরোধী শিবির বা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম যা-ই বলুক, বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান এবং জঙ্গি মৃত্যু নিয়েই ভোটের ময়দানে নামবে বিজেপি। বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযানে সাড়ে তিনশো জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে সরকার দাবি করার পরেই এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা, অখিলেশ যাদব-সহ একাধিক বিরোধী নেতানেত্রী। মমতার কথায়, ‘‘বালাকোটে কী হয়েছে, তা জানার অধিকার রয়েছে দেশবাসীর। কারণ বালাকোটে নিহত জঙ্গির সংখ্যা নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য সামনে আসছে। কার্যত একই দাবি তোলেন সপা নেতা অখিলেশও।
বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পুরোদস্তুর আসরে নেমেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। অমিত শাহ থেকে অরুণ জেটলি— সকলেই এক সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীদের। অমিত শাহের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন সেনা মৃত্যুর বদলা নিতে পদক্ষেপ করেছেন, তখন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসলে রাহুল-মমতা-অখিলেশ সস্তা রাজনীতি করছেন।’’
প্রত্যাঘাতের দিন হামলাস্থল নিয়েও এক প্রস্থ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানের বালাকোটে না কি কাশ্মীরের পুঞ্চ সেক্টরের বালা কোটে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা? জেটলির কথায়, ‘‘নিজেদের দেশের মধ্যে কেনই বা হামলা চালাতে যাব! এগুলি সবই আসলে শাসক দলের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা।’’
দিল্লিতে মোদী-অমিত শাহ-জেটলিদের সুরেই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। বাবুলের বক্তব্য, মমতার প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানিদের মতো! তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছে বিজেপি-বিরোধী দলগুলি। কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, ‘‘রাজনীতিতে দু’দিন আসা অ্যামেচার রাজনীতিকের এমন ঔদ্ধত্য দেখে অবাক হতে হয়।’’
শনিবার আসানসোলে বাবুল বলেন, ‘‘পাকিস্তান যে ভাষা বলছে, মমতাদিদির কথার সঙ্গে তার কোনও ফারাক নেই। দেশের জাতীয়তাবাদ, সেনা নিয়ে উনি প্রশ্ন তুলছেন। ওঁর জন্য কি কেন্দ্রীয় সরকারকে গোপন নথি প্রকাশ্যে আনতে হবে?’’ বস্তুত, এর আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও একই অভিযোগ করেছিলেন।
এ দিন ফিরহাদ বলেন, ‘‘আন্দোলন করে রাজনীতিতে উঠে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যাঁর বিন্দুমাত্র জ্ঞানগম্যি আছে, এমন কথা বলার সাহসও দেখাবেন না তিনি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মন্তব্য, ‘‘জাতীয়তাবাদ আর জাতীয়তাবাদ-বিরোধী অর্থাৎ, অ্যান্টি ন্যাশনাল শব্দের অর্থ কী, বাবুল তা জানেন না। আগে জানুন, তার পর কথা বলবেন।’’
কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘উদ্ভট বুলি না দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সত্যের আশেপাশে থাকা এবং তথ্য সামনে আনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছে, তা থেকে এই সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে। কেন্দ্র ঠিক মতো জবাব না দিলে প্রশ্ন আরও বাড়বে।’’

Pulwama Attack পুলওয়ামা পুলওয়ামা হামলা Terrorism Terror Attack Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy