Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
National News

হামলার আগে ৩ মাসের ট্রেনিং, আদিলের ছদ্মনাম ছিল মৃত জইশ কমান্ডারের নামে

আদিলই হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় ২০১৮ সালের মার্চ মাসে। ১৯ মার্চ স্থানীয় থানায় নিখোঁজের অভিযোগ জানান আদিলের বাবা। তার ক’দিন পরেই সোশ্যাল মিডিয়াতে হাতে একে-৪৭ নিয়ে ওয়াকাস কমান্ডার নামে আত্মপ্রকাশ করেন আদিল।

জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি আদিল। —ফাইল চিত্র

জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি আদিল। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৯:৫০
Share: Save:

প্রায় তিন মাস ধরে গাড়ি নিয়ে কনভয়ে ঢুকে আত্মঘাতী হামলা চালানোর অনুশীলন করেছিল ২০ বছরের আদিল আহমেদ দার। লেথপোরায় জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কের উপর যে জায়গায় রাস্তার ভুল দিক দিয়ে এসে বিস্ফোরক বোঝাই স্করপিও নিয়ে কনভয়ে হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদের ফিদায়েঁ জঙ্গি আদিল, সেখান থেকে তাঁর নিজের গ্রাম গাঁধীবাগের দূরত্ব বড়জোর ১০ কিলোমিটার।

শ্রীনগর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কাশ্মীরের লেথপোরা এলাকা জঙ্গি আন্দোলনের খাস তালুক হিসাবেই পরিচিত। সেই আবহতেই বড় হয়ে ওঠা আদিলের। বাবা গোলাম হাসান দারের ছোটখাটো ব্যবসা। একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে স্কুল ছেড়ে গ্রামেরই একটি কাঠচেরাই কলে কাজ করত আদিল। কিন্তু জঙ্গি আন্দোলনের প্রতি অনেক আগে থেকেই ছিল তাঁর আকর্ষণ। ঘটনার একদিন পর আদিলের গ্রামের বাসিন্দারা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে দাবি করেছেন, ২০১৬ সালে হরকত উল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানির সেনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে যে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার আঁচ পড়েছিল পুলওয়ামাতেও। অনেকের সঙ্গে সেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল আদিলও। সেই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি লাগে আদিলের পায়ে এমনটাই দাবি তাঁর গ্রামের বাসিন্দাদের। বুরহানের মৃত্যুর পর মসজিদে বুরহানের জন্য বিশেষ নমাজের ব্যবস্থাও করেছিল আদিল।

সেই আদিলই হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় ২০১৮ সালের মার্চ মাসে। ১৯ মার্চ স্থানীয় থানায় নিখোঁজের অভিযোগ জানান আদিলের বাবা। তার ক’দিন পরেই সোশ্যাল মিডিয়াতে হাতে একে-৪৭ নিয়ে ওয়াকাস কমান্ডার নামে আত্মপ্রকাশ করেন আদিল।

আরও পড়ুন: ‘প্রতিশোধ চাই’! পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে অগ্নিগর্ভ জম্মু, জারি কারফিউ

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, আদিলের জইশে যোগ দেওয়ার কিছু দিন আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান জইশের কাশ্মীর প্রধান মুফতি ওয়াকাস। গোয়েন্দাদের দাবি, আগের কমান্ডার নূর মহম্মদ তান্ত্রের মৃত্যুর পর পাক নাগরিক মুফতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলে যোগ দিয়ে সেই সদ্য মৃত ওয়াকাসের নামই গ্রহণ করে সে। গোয়েন্দাদের দাবি, গাঁধীবাগ এবং আশপাশের গ্রাম থেকে আদিলের মতোবেশ কিছু কিশোর এবং সদ্য যুবারা গত বছর থেকে নিঁখোজ। তাঁরা সবাই যোগ দিয়েছেন জইশ বা হরকতের মত জঙ্গি সংগঠনে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন আদিলের কয়েক জন বন্ধুও। গোয়েন্দারা দাবি করছেন, তৌসিফ, ওয়াসিম এবং সামির আহমেদ নামে আদিলের অন্তত তিনজন বন্ধুর হদিশ পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা আদিলের সঙ্গেই যোগ দিয়েছেন জইশ-ই মহম্মদ সংগঠনে। এঁদের মধ্যে একজন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজির ছাত্র। তৌসিফের এক দাদা মঞ্জুর আহমেদ দারও যোগ দিয়েছিলেন জইশ শিবিরে। কিন্তু যোগ দেওয়ার ১১ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় তাঁর।

আরও পডু়ন: চার বছরে তিন বার অন্তঃসত্ত্বা, এ বার দেশে ফিরতে চায় জঙ্গি শামিমা

আরও পড়ুন: সিরিয়ার কায়দায় পুলওয়ামায় হামলা হতে পারে, আগাম জেনেও নেওয়া যায়নি ব্যবস্থা!

গোয়েন্দাদের দাবি, প্রায় তিনমাস ধরে চলে অনুশীলন। তাই নিজের সঙ্গীদের কাছে আদিলের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘আদিল গাড়িসে টকরানেওয়ালা’। হামলা চালানোর আগে আদিল যে ভিডিয়ো রেকর্ড করেছেন তাতে তিনি মধ্য এবং উত্তর কাশ্মীরের যুবকদেরও দক্ষিণ কাশ্মীরের মতো সেনা, আধা সেনার সঙ্গে ‘লড়াই’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

কিন্তু প্রশ্ন, এত কিছুর পরও গোটা এক বছরে কাশ্মীরে সক্রিয় সেই রাজ্যের বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে ওই প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে হামলার আগাম কোনও খবর কেন পৌঁছল না? ঘটনার এক দিন পর সেটাই সবচেয়ে চিন্তার কারণ শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pulwama Terror Attack Jaish-e-Mohammed Adil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE