Advertisement
E-Paper

চূড়ান্ত মুহূর্তের জন্য সময় গোনা শুরু

সেই মাঘ মাসের বসন্তপঞ্চমীতে রথের কাঠ আহরণ থেকে শুরু হয়েছিল কৃচ্ছ্রসাধন। এখনও বিরাম নেই রথকারদের। মাছটাছের স্বাদ ভুলে টানা হবিষ্যান্ন খেয়ে রথের সেবকরা তাঁদের কাজ করে চলেছেন। পরম্পরাগত সেবার শরিক, প্রাচীন রথকারদের সঙ্গে একেলে ইঞ্জিনিয়াররাও সামিল হয়েছেন।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৫
সেজে উঠছে পুরীর রথ। রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

সেজে উঠছে পুরীর রথ। রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

সেই মাঘ মাসের বসন্তপঞ্চমীতে রথের কাঠ আহরণ থেকে শুরু হয়েছিল কৃচ্ছ্রসাধন। এখনও বিরাম নেই রথকারদের। মাছটাছের স্বাদ ভুলে টানা হবিষ্যান্ন খেয়ে রথের সেবকরা তাঁদের কাজ করে চলেছেন। পরম্পরাগত সেবার শরিক, প্রাচীন রথকারদের সঙ্গে একেলে ইঞ্জিনিয়াররাও সামিল হয়েছেন।

জগন্নাথের রথের গঠনশৈলীর উদ্ভাবনী ভাবনা এত নিখুঁত বলেই বেশির ভাগের ধারণা, রথ গড়ায় ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা কীসের! আজ ভরদুপুরের চড়া রোদেও কিন্তু দেখা গেল, রথ থামানোর উপকরণ বা রথের ‘ব্রেক’ আরও কার্যকর করা নিয়ে ইঞ্জিনিয়াররাই মাথা ঘামাচ্ছেন।

রথের ব্রেক ব্যাপারটা কী?

বিষয়টা বোঝালেন, জগন্নাথদেবের প্রধান সেবক তথা পুরীর গজপতি রাজার কুলগুরু পরিবারের উত্তরাধিকারী, মধ্য তিরিশের যুবক দেবী রাজগুরু। ‘‘রথ সে কালের হলেও রথযাত্রা তো এ কালের! তাই পুরনো পরম্পরা বাঁচিয়েও প্রযুক্তিতে কিছু বদল আনতে হয়েছে।’’ মোদ্দা কথা, গ্র্যান্ড রোড এখন আর মাটি-বালির কাঁচা রাস্তা নয়। গুন্ডিচা মন্দির তথা জগন্নাথের মাসির বাড়ির তিন কিলোমিটার পথে আগের মতো নদী পেরোতে গিয়ে রথকে আর নৌকোয় তুলতে হয় না। তবে নিয়মমাফিক কিছুৃ নির্দিষ্ট জায়গায় এখনও রথকে থামাতে হয়। কংক্রিটের পাকা রাস্তায় রথকে থামাতে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

মান্ধাতার আমল থেকে সাধারণত একটি কাঠের গুঁড়ি রথের সামনে ফেলে রথকে থামানো হতো। পুলি-পদ্ধতিতে লোহার শিকলে বেঁধেই সামনের চাকার সামনে কাঠের গুঁড়ি ফেলা বা তোলা হতো। কিন্তু কংক্রিটের রাস্তায় রথের গতি ইদানীং অনেক বেড়ে গিয়েছে। তরতরিয়ে এগোনোর সময়ে সামনে ফেলা কাঠের গুঁড়ি গড়িয়ে গড়িয়ে আরও এগিয়ে যায়। তাতে রথের ক্ষতি হওয়ার বা রথ থেকে কারও হুমড়ি খেয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কাঠের গুঁড়িতে তাই গত ৭-৮ বছর ধরে এক ধরনের নাইলনের মোড়ক বা বেল্ট পরানোর কৌশল চালু হয়েছে। এই বেল্ট পরানোর ভারপ্রাপ্ত দু’জন ইঞ্জিনিয়ার এ দিন দুপুরে মাপজোখ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন। মহানদী কোল প্রজেক্ট লিমিটেড-এর দুই ইঞ্জিনিয়ার অশ্বিনীকুমার মিশ্র ও জগু লোহার বলছিলেন, ‘‘রথযাত্রা মসৃণ করতে প্রতিবারই কিছু না কিছু বদল হয়।’’ এ বার যেমন বেল্ট আর একটু মোটা অর্থাত্ আরও ১৫ মিলিমিটার পুরু হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারদের আশা, রথ থামানোর কাজটা এ বার আরও পোক্ত হবে। তবে বরাবরই যারা গুঁড়ি ফেলে বা ব্রেক দিয়ে রথকে থামাতেন সেই পরম্পরাগত ‘রথভই’রাও আগের মতোই রথে থাকবেন।

এখনও রথের রং করা, কিছু-কিছু পার্শ্বদেবতা খোদাইয়ের কাজ চলছে। ব্যস্ত মহারথকার (ছুতোর), রূপকার (খোদাইশিল্পী), চিত্রকর সকলেই। মন্দিরের অফিসে রথের কাপড়ে রং করছেন সূচিকরেরাও। আর চার দিন বাদে, শনিবার রথযাত্রা। নবকলেবরের বছরে জগন্নাথদেবের নতুন বিগ্রহ দর্শন দেওয়ার আগে হাজারো গুপ্তসেবারও শেষ নেই। গত কাল, সোম-সন্ধ্যায় জগন্নাথদেব জ্বর ছেড়ে উঠেছেন। এত দিন ধরে গুপ্ত থাকা তাঁর প্রসাদ ও অসুস্থ শরীরের পথ্যি-পাঁচনও আজ সকাল থেকেই ভক্তদের জন্য মন্দিরের বাইরে বেরিয়েছে। ভক্তরা মহানন্দে দুধের সর ফেলা মিষ্টি পাঁচন খাচ্ছেন আর পিছু-গণনা শুরু করেছেন, ১০,৯,৮,৭,৬,৫...।

puri ratha yatra riju basu jagannath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy