Advertisement
E-Paper

তৃতীয় শক্তির জায়গা নেই, প্রশ্ন আপের লড়াই নিয়ে

আমদাবাদের রাজনীতিকেরা বলছেন, গুজরাতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে তৃতীয় ফ্রন্ট বা দলের কোনও পরিসর নেই। তাই চেষ্টা করলেও আপ এ বার দাগ বসাতে পারবে না গুজরাতে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৫
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ফাইল চিত্র।

সুরাতের পুরভোটে সাফল্য মিলেছে। তারপরেই দক্ষিণ গুজরাতের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে এবার প্রচারের ঢেউ তুলেছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। দিল্লি এবং পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে আপ সরকার গড়েছে ঠিকই। তবে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের গড় গুজরাতে তাদের এই প্রবল লড়াকু মনোভাবের পিছনে অন্য ধরনের রাজনৈতিক অঙ্ক সামনে আসছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেজরীওয়ালের দল বিজেপিরই বি-টিম হয়ে কংগ্রেসের ভোট ভাগ করে দিয়ে মোদীর দলকেই সুবিধা করে দিতে চাইছে কি না।

এই ধরনের অভিযোগের পিছনে আসলে একটা যুক্তি রয়েছে। সেটা হল, গুজরাতে তৃতীয় ফ্রন্ট বা এই ধরনের কোনও দলের সাফল্যের ইতিহাস না থাকা। আমদাবাদের রাজনীতিকেরা বলছেন, গুজরাতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে তৃতীয় ফ্রন্ট বা দলের কোনও পরিসর নেই। তাই চেষ্টা করলেও আপ এ বার দাগ বসাতে পারবে না গুজরাতে। লড়াইটা সেই বিজেপি বনাম কংগ্রেসেই আটকে থাকবে।

এমন বক্তব্যের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের নতুন দল গড়ে ব্যর্থ হওয়ার ইতিহাস। যেমন ২০১৭ সালে শঙ্কর সিন বাঘেলা ‘জন বিকল্প পার্টি’ গড়ে ভোটে লড়েছিলেন। বড় গলা করে বলেছিলেন, ‘গুজরাতে ত্রিমুখী লড়াই হয় না, এটা একটা ধারণা মাত্র।’ কিন্তু সেবার বাঘেলার ভাগ্যে একটি আসনও জোটেনি। এমনকি, তাঁর দল ভোট পেয়েছিল ০.৫ শতাংশেরও কম। তা সত্ত্বেও এবারও ভোটের হাওয়া উঠতেই গত অগস্ট মাসে বাঘেলা গড়ে তোলেন একটি নতুন দল— ‘প্রজাতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পার্টি’। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর দল বিধানসভায় লড়বে। কিন্তু মাস তিনেক চেষ্টা করার পরেই রণে ভঙ্গ দিয়েছেন বাঘেলা। তিনি এখন বলছেন, “গুজরাতে লড়াই হবে বিজেপি বনাম কংগ্রেসের। কোনও তৃতীয় দল বা ফ্রন্ট তৈরি করতে হলে ভোটের আগে উদয় হলে চলে না, প্রয়োজন রাজ্যে দীর্ঘ পরিকল্পনা মাফিক গড়ে তোলা সংগঠন এবং অর্থের। অদূর ভবিষ্যতে তার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।”

ব্যর্থতা শুধু বাঘেলার দলেরই নয়। ২০১২ সালে আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই পটেলের তৈরি ‘গুজরাত পরিবর্তন পার্টিও’ মুখ থুবড়ে পড়েছিল প্রায় জন্মলগ্নেই। সে সময় পাতিদার গোষ্ঠীর সংখ্যাগুরু লেওভা সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েও মাত্র ২টি আসন জোটে কেশুভাইয়ের দলের। দু’বছর পর দলটি বিজেপির সঙ্গে মিশে যায়। এখানকার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলা, বিহার কিংবা উত্তরপ্রদেশের মতো অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি আঞ্চলিক দলের উত্থান গুজরাতের মাটিতে গত চার দশকে ঘটেনি।

গুজরাতের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তথা তথা সমীক্ষক জয় ম্রুগের কথায়, “এই রাজ্যে শেষ ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিল ১৯৯০ সালে। লড়েছিল জনতা দল, বিজেপি ও কংগ্রেস। সেবার জনতা দল ২৯.৬ শতাংশ, কংগ্রেস ৩০.৬ শতাংশ এবং বিজেপি ২৬.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। তবে মনে হয় না এবার কোনও ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে। আপ সামান্য কয়েকটি আসন পাবে, এই মাত্র।” ষাটের দশকে স্বতন্ত্র পার্টি ছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল, যারা নব্বইয়ের গোড়ায় জনতা দলের সঙ্গে মিশে যায়। পরবর্তীকালে বিজেপি হয়ে ওঠে প্রধান বিরোধী দল। এ বার প্রচারে নেমে অমিত শাহ বারবার বলছেন, “গুজরাতে লড়াই বিজেপি-র সঙ্গে সরাসরি কংগ্রেসের। অতীতে চিমনভাই পটেল থেকে কেশুভাই পটেল, শঙ্কর সিন বাঘেলা দল গড়ার চেষ্টা করেছেন, ভোটের পরে সব দলই উঠে যায়।” তিনি রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা করছেন না। কিন্তু আমদাবাদের অনেকেই মনে করছেন, বারবার আপ-এর নাম করে তাকে গুরুত্বহীন বলে দাগিয়ে দিয়ে আসলে কেজরীওয়ালকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন শাহ। কারণ, তাহলে কযেকটি পোক্ত বিরোধী আসনে ভোট ভাগ হয়ে বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে। গোটা রাজ্যে পুরোদস্তুর ত্রিপাক্ষিক লড়াই না হলেও ওই কয়েকটি আসনে কংগ্রেসের সম্ভাবনায় কাঁটা বিছিয়ে দেওয়া যাবে।

Gujarat BJP AAP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy