দেড় বছর আগে সিকিমে চুংথাংয়ে তিস্তার ‘স্টেজ থ্রি’ বাঁধ মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হিমবাগ হ্রদের বন্যার তোড়ে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তার জেরে পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পংয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কও নীচের দিকে বসে যায়। জাতীয় সড়কের বহু জায়গায় ধস নামে। গত ১০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি চুংথাং বাঁধের জায়গায় নতুন কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করে ১২০০ মেগাওয়াট ‘স্টেজ থ্রি’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছে। এর যৌক্তিকতা নিয়ে এ বার বিজেপির মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠছে।
সিকিমের বিজেপি সভাপতি ডি আর থাপা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিস্তা বাঁধে পরিবেশগত ছাড়পত্র স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন। তিনি চলতি মাসেই দিল্লি এসে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানান। কংগ্রেসের অভিযোগ, পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি নিজেরাই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তার পরেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সিকিমের বিজেপি সভাপতির দাবি, ২০২৩-এর অক্টোবরে সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হ্রদের হিমবাহ বন্যায় চুংথাং বাঁধ ভেসে গিয়েছিল। নতুন বাঁধ তৈরি হলে বন্যার সম্ভাবনা-সহ সমস্ত রকম বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত ছাড়পত্র স্থগিত রাখা হোক। থাপার যুক্তি, এখনও সিকিম ২০২৩-এর বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ওই ঘটনায় ৪০-৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হাজার খানেক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। সিকিমের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটন এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী, কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের অভিযোগ, কোনও রকম চিন্তাভাবনা না করেই ‘স্টেজ থ্রি’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০২৩-এ মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হিমবাহ হ্রদের বন্যায় তিস্তার ওই বাঁধ ভেসে গিয়েছিল। এখনও সেখানে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। বাঁধের নীচের এলাকায় জনবসতির উপরেও ভয়ঙ্কর বিপদ নেমে আসতে পারে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গত লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিংয়ের কংগ্রেস প্রার্থী মুনীশ তামাং বলেন, ‘‘শুধু চিন্তাভাবনা না করেই নয়, তাড়াহুড়ো করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটিই গত ১০ জানুয়ারির বৈঠকে ওই বাঁধের স্থায়িত্ব ও সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তার পরেও এই প্রকল্প ছাড়পত্র পেয়েছে। যার ব্যাখ্যা নেই। বাধ্যতামূলক জনশুনানি হয়নি। কেন্দ্রীয় জল কমিশনের থেকেও ছাড়পত্র মেলেনি।’’ মুনীশের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্তে সিকিম, উত্তরবঙ্গের পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। তিস্তা বাঁধের নীচের এলাকায় মানুষের জীবন বিপদের মুখে পড়তে পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)