E-Paper

বিএলও-র অপমৃত্যু, আত্মহত্যায় ক্ষোভ বাড়ছে দেশ জুড়ে

বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি থেকে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ আত্মহত্যার চিঠি লোপাট করেছে বা আত্মহত্যার অভিযোগ নথিভুক্ত করতে চায়নি। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাতেও পরিবারের অভিযোগ উড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৪২

—প্রতীকী চিত্র।

‘এত চাপ আর নিতে পারছিলাম না। অনলাইনে নাম তুলতে পারছিলাম না, ফলে কাজ এগোচ্ছিল না। তার মধ্যে চাকরি যাওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন সুপারভাইজ়ার..আর এই চাপ নিতে পারছি না...’

‘‘একটু বিশ্রাম নিতে পারতেন না। স্কুলের কাজ সেরেই ভোটার তালিকা নিয়ে বেরনো, তার পরে বাড়ি ফিরেই সেগুলো মিলিয়ে মোবাইলে তোলা...ক’দিন ধরেই বলছিলেন, শরীর ভাল যাচ্ছে না। এত চাপ নিতে পারছিলেন না...’’

প্রথমটা চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করা রাজস্থানের মুকেশ চাঁদ জাঙ্গিরের পকেট থেকে মেলা সুইসাইড নোটের অংশ।

দ্বিতীয়টা গুজরাতের উদয়ভান সিহারের পরিবারের লোকেদের অভিযোগ। স্কুলের শৌচালয়ের ভিতরে গলায় দড়ি দিয়ে উদয়ভান আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিজনদের অভিযোগ।

এর বাইরেও এসআইআরের কাজে যুক্ত থাকা রাজস্থানের ঢোলপুরের অনুজ গর্গ বা মধ্যপ্রদেশের মণিরাম নাপিত, রমাকান্ত পাণ্ডেদের মতো অনেকের হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারিএকটি হিসাব বলছে, গত ৪ নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ১২টি রাজ্যে এসআইআর-২ শুরুহওয়ার পরে গত ২৬ দিনেঅন্তত ২৮ জন বিএলও-র মৃত্যুহয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণের দুই অ-বিজেপি রাজ্য কেরল এবং তামিলনাড়ুতে এক জন করে বিএলও মারা গিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর মিলেছে বিজেপি-শাসিত গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থান থেকে। পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই চার জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা রোজই বাড়ছে।

এই রাজ্যগুলিতে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই কমিশন কার্যত হুমকির সুরে ‘সতর্ক’ করতে থাকে বিএলও-দের। তালিকায় ভুলচুক হলে জেল পর্যন্ত হতে পারে—এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। তার উপর সরকারি ভাবে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক তালিকা জমা দিতে বলা হলেও বিএলও-র উপরে অনেক নির্বাচনী কর্তাই আগে কাজ শেষ করতে চাপ দিতে থাকেন। কমিশনের অ্যাপটি অনেক জায়গায় ধীরে চলায় বা মাঝেমধ্যেই বসে যাওয়ায় বহু বিএলও সময় মতো তথ্যআপলোড করতে পারছিলেননা। অনেক বিএলও আবারমোবাইলে এই নতুন ধরনের কাজ করার ব্যাপারে তত সড়গড়ও নন। কয়েকটি ক্ষেত্রে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের চাপ এবং সর্বোপরি কয়েকটি রাজ্যে বিএলও-দের বিরুদ্ধে এফআইআর করার হুমকি।

ক্রমাগত এই চাপের মুখেই কেউ অসুস্থ হয়েছেন, কেউ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, কেউ বা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি।বিরোধী দলগুলি এই নিয়ে বার বার সরব হলেও কমিশন তাতে গা লাগায়নি। উল্টে বিরোধীরা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে। কিন্তু কমিশনের তরফে একবারও বিএলও-দের আস্বস্ত করা হয়নি। এখনও পর্যন্ত যে ২৮ জন বিএলও-র মৃত্যুর খবর মিলেছে, তাঁদের প্রত্যেকের পরিবারই আঙুল তুলেছে কমিশনের ক্রমাগত চাপ দেওয়ার নীতির দিকে।

বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি থেকে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ আত্মহত্যার চিঠি লোপাট করেছে বা আত্মহত্যার অভিযোগ নথিভুক্ত করতে চায়নি। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাতেও পরিবারের অভিযোগ উড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসন। রেলের চাকায় গলা দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন রাজস্থানের প্রাথমিক শিক্ষক মুকেশ চাঁদ জাঙ্গির। তাঁর দশ বছরের ছেলে এবং পরিবারের লোকেদের সামনেই পকেট থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছিল। সেখানে মুকেশ ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের নাম করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করেছিলেন। পরিবারের দাবি, সেই নোটের প্রতিলিপি দিচ্ছে না পুলিশ। গুজরাতেও এসআইআরের কাজ করা এক শিক্ষক আত্মহত্যা করার পরে পুলিশ অভিযোগ নথিভুক্ত করতে চায়নি বলে দাবি পরিবারের! বহু ক্ষেত্রে পুলিশ এবং প্রশাসন চাপের অভিযোগ মানতেই নারাজ বলেও ক্ষোভ জানিয়েছেনপরিবারের সদস্যেরা।

এই অবস্থায় এসআইআর নিয়ে বাড়তি সময় দেওয়ার কথা রবিবার ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মৃত, আত্মঘাতী বিএলও-দের পরিজনদের প্রশ্ন, ঘোষণা এত দেরিতে হল কেন?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BLO Death Case Special Intensive Revision SIR Election Commission Work Pressure

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy