লাদাখে বিজেপির সমস্যার শুরু হয়েছিল গত বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই। সে সময় থেকেই লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের তকমা দেওয়া এবং ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিজেপি কথা রাখেনি বলে অভিযোগ ওঠে। তার জেরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ধারণা হয়, লাদাখের বিজেপি সাংসদ জামইয়াং শেরিং নামগিয়াল এই বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে পারেননি।
এই কারণেই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আর নবীন নেতা নামগিয়ালকে প্রার্থী করেনি। অথচ ২০১৯-এ জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে, রাজ্য ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির সিদ্ধান্ত পরে নামগিয়াল সংসদে তার পক্ষে বক্তৃতা করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। লাদাখে বিজেপি নামগিয়ালকে সরিয়ে মহম্মদ হানিফাকে প্রার্থী করে সাংসদ হিসেবে লোকসভায় জিতিয়ে এনেছিল। তাতে লাদাখের আন্দোলন ধামাচাপা দেওয়া যায়নি। উল্টে এখন স্থানীয় বিজেপি নেতারাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরোধী সুরে কথা বলছেন। কারণ, তাঁদের স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।
পূর্ণ রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা লে-তে বিজেপির দফতর জ্বালিয়ে দিয়েছেন। এখন লাদাখের পুলিশ-প্রশাসন সোনম ওয়াংচুকের দিকে পরিকল্পিত ভাবে হিংসায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু বিজেপির লাদাখের সাংসদ হানিফার যুক্তি, ‘‘সোনম ওয়াংচুককে দোষারোপ করা যায় না। যদি প্রশাসন জানত যে লাদাখের হিংসা পরিকল্পিত, তা হলে মিছিলের, ধর্নার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কেন?” লাদাখে আন্দোলনকারীদের উপরে সেনার গুলিতে চার জন নিহত হয়েছেন। প্রাক্তন সাংসদ নামগিয়াল এ বিষয়ে তদন্ত চেয়ে উপরাজ্যপালকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ‘নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি চালানোর ফলে মানুষের আস্থানড়ে গিয়েছে।’
বিজেপি নেতাদেরই বক্তব্য, লাদাখে এবং মণিপুরের তাঁদের সতীর্থদের অবস্থা একই। এক দিকে তাঁদের স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ সামলাতে হচ্ছে। অন্য দিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁদের দাবিদাওয়ায় কান দিচ্ছেন না। সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরের গোড়াতেও লাদাখের বিজেপি নেতৃত্ব ও স্বশাসিত পরিষদের নেতারা দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের চিন্তার কথা জানিয়ে এসেছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের অভিযোগ, ২০২০-তে লেহ-র স্বশাসিত পার্বত্য পরিষদের নির্বাচনের সময় বিজেপি লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার আগের বছর জাতীয় তফসিলি জনজাতি কমিশন এই সুপারিশ করে। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র, আইন ও জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক এ নিয়ে কোনও আপত্তি তোলেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা মোদী সরকার এই পথে হাঁটেনি।
লাদাখের বিজেপি সাংসদ মহম্মদ হানিফার বক্তব্য, লাদাখে তফসিলি জনজাতির মানুষের বাস। তাই লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যাতে জনজাতির মানুষের সমস্ত অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এখন লাদাখের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা নেই। গণতন্ত্রও নেই। আমলাতন্ত্রের শাসন হচ্ছে। তাই কেন্দ্রের আশ্বাস প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, লাদাখের পূর্ণ রাজ্য ও ষষ্ঠ তফসিল দুই দাবি নিয়েই আলোচনা চলছে। লেহ অ্যাপেক্স বডি ও কারগিল গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। লাদাখে সংরক্ষণের পরিমাণ বেড়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির ৬ অক্টোবর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই আশ্বাস দিলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস, তৃণমূলের অভিযোগ, শাহের জমানাতেই মণিপুরে হিংসা, দিল্লিতে হিংসা, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে এখন সীমান্তবর্তী লাদাখে হিংসা হয়েছে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিহারের নির্বাচনী প্রচার, পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে ব্যস্ত। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘শ্রী শাহ, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কর্তব্য পালন করুন। নির্বাচন মন্ত্রী হিসেবে কাজ করা বন্ধ করুন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)