বাংলাদেশ তিলকে তাল করছে। আর ভারত তার ঠিক উল্টো, অর্থাৎ তালকে তিল!
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে উগ্র ভারত-বিরোধিতা, নৃশংস হত্যা এবং বারবার ভারতের হাই কমিশনারকে ডেকে ‘অপমান করার’ মতো ঘটনার পরেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সমুচিত জবাব দেয়নি। চলতি পরিস্থিতি নিয়ে এই অভিযোগ তুলছে দেশের নিরাপত্তা সংস্থারই একাংশ।
আজ সকালে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মাকে ফের ডেকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। এই নিয়ে গত ১০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার প্রণয়কে ডেকে পাঠানো হল। এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক ডেকে পাঠিয়েছিল তাঁকে।
বাংলাদেশে যে ভাবে বন্যার মতো সমাজের সর্ব স্তর থেকে এবং অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে দোষারোপ, ঘৃণা ছুটে আসছে, ভারতীয় উপদূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে— তার উত্তরে দু’টি বিবৃতি জারি করা ছাড়া সাউথ ব্লকের পক্ষ থেকে আর কিছু করা হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলন করে কোনও জোরালো পাল্টা ভাষ্যও এখনও দেয়নি সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের যুক্তি, সে দেশের পরিস্থিতি এখন এতটাই স্পর্শকাতর, অত্যন্ত সাবধানে পদক্ষেপ না করলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপদ বাড়বে, আগুন আরও জ্বলবে। কূটনৈতিক ভাবে হিংসা থামানোর যা যা চেষ্টা, তা সবই করা হচ্ছে। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকেও যা বলার, কড়া ভাষায় বলা হয়েছে বলে দাবিসাউথ ব্লকের।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ওই রাতেই মৃত্যু হয় বাংলাদেশের ‘ইনকিলাব’ মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির। হাসিনা-বিরোধী বলে পরিচিত বাংলাদেশের এই তরুণ নেতাকে অতীতে ভারত-বিরোধী বিভিন্ন মন্তব্যও করতে দেখা গিয়েছিল। হাদির মৃত্যুর পর থেকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জেরে ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় দীপুচন্দ্র দাস নামে এক যুবককে। অভিযোগ, খুনের পরে তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনে ঢুকে পড়ে উন্মত্ত জনতা। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সরিয়ে দেয়। এর পরে ফের পশ্চিমের শহর রাজশাহীতে ইন্ডিয়ান মিশনের কাছে নতুন করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার বক্তব্য, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামে ভারত-বিরোধী হিংসার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তার প্রতিবাদ শুধু দু’টি মাত্র বিবৃতি হতে পারে না। হাদির মৃত্যুর পরে হত্যাকারীকে ‘ভারতীয়’ বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তৎক্ষণাৎ সেই অভিযোগের কোনও প্রতিবাদ ভারত করেনি কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এক কর্তার কথায়, চিলে কান নিয়ে গিয়েছে বললেই তা প্রমাণ হয়ে যায় না। দীপু দাস নিয়েও ভারতের বয়ানে কোনও ঝাঁঝ ছিল না বলে অভিযোগ। এর উল্টো দিকে শনিবার নয়াদিল্লিতে মাত্র জনা বিশেক লোক মিলে বাংলাদেশের হাই কমিশনের সামনে স্লোগান দেওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশের ভাষ্যে দাঁড় করানো হয়েছে ‘হাইকমিশনারকে খুনের চেষ্টা’ হিসাবে।
ভারত এই মুহূর্তে শুধুমাত্র চট্টগ্রামে ভিসা পরিষেবা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু আরও কঠোর চাপ তৈরি না করলে, যার বা যাদের মদতে এই অরাজকতা এবং সংখ্যালঘু পীড়ন হচ্ছে বাংলাদেশে, তাদের শিক্ষা হবে না বলেই মনে করছে নিরাপত্তা সংস্থার অংশ। তাদের মতে, আরও কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা উচিত। যাদের চিকিৎসার জন্য ভিসা হয়ে রয়েছে, তা অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলাদেশকে নতুন করে ভিসা দেওয়া বন্ধ করা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য রফতানি বন্ধ করলে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার প্রবল চাপে পড়বেই। তখন তারা নিজের দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য রাশ টানতে বাধ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিদেশ মন্ত্রক এখনই এত কড়া পদক্ষেপ করার পক্ষে নয় বলে জানা গিয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)