জলছবির মতো সুন্দর কাশ্মীর আজ আতঙ্কে থমথমে। যে বৈসরন উপত্যকাকে আদর করে পর্যটকরা ডাকতেন ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’, আজ সেখানে মৃত্যুর ঘ্রাণ। নেমেছে নিথর নৈঃশব্দ।
গত কাল পহেলগামে জঙ্গিরা তাণ্ডব চালানোর পর থেকেই পর্যটকদের কাছে ফের ভূস্বর্গের সমার্থক হয়ে উঠছে আতঙ্ক। প্রাণ হাতে করে কাশ্মীর ছেড়ে ফিরে আসতে চাইছেন তাঁরা। যাঁরা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তাঁরাও পালা করে বাতিল করছেন সেই পরিকল্পনা। পর্যটন ব্যবসায়ীদের ফুরসত নেই, প্রতি পলে বেজে উঠছে ফোন।
যাঁরা কাশ্মীরের অন্যত্র ছিলেন তাঁরাও শ্রীনগরে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন আপ্রাণ। একের পর এক গাড়ি উপত্যকা ছেড়ে পৌঁছতে চাইছে নিরাপদ আশ্রয়ে। শ্রীনগরের হাউসবোট, গুলমার্গ, সোনমার্গের হোটেল ও রিসর্টে বাতিল হচ্ছে বুকিং। পর্যটন ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকদের গলায় হতাশা। তাঁদেরই এক জন জানালেন, “প্রচুর মানুষ বুকিং বাতিল করেছেন। আমাদের কাশ্মীর নিরাপদ ছিল। কিন্তু কাল যা হল, মানুষ ভরসা করে থেকে যাবেন এই আশা করতে পারি না।” তবে চুপ করে নেই কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষ। নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে মোমবাতি হাতে রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। তাঁদের সকলের মুখে একই কথা, ‘নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার চাই’।
নির্মম এই জঙ্গি হামলা শুধুই যে উপত্যকার শান্তিকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তা নয়, কাশ্মীরের মানুষদের জীবিকাতেও নিয়ে এসেছে গভীর সঙ্কট। গত দু’বছরে পর্যটন শিল্পে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল কাশ্মীর। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কথায়, “পহেলগামের ঘটনার পরে যে ভাবে পর্যটকেরা উপত্যকা ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন, তা হৃদয়বিদারক। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ ভাবে বুঝতে পারছি তাঁদের এই সিদ্ধান্তের কারণ।” তিনি আরও জানিয়েছেন, পর্যটকদের প্রতি মুহূর্তে সহায়তা করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। শ্রীনগর-জম্মু সড়কপথে গাড়ি চলাচল থেকে শুরু করে বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা, সব কিছু নিয়েই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সাত থেকে আট শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিক ও মানসিক ভাবে একটু একটু করে উন্নতির মুখ দেখছিলেন উপত্যকার মানুষরা। ট্রেক করার নতুন পথ, নানা রকম উৎসবে রোজগারের আশা দেখতে শুরু করেছিলেন মানুষ। বাড়ছিল সিনেমার শুটিংও। ওমর জানিয়েছেন, ২০২৪ সালেই জম্মু ও কাশ্মীরে এসেছেন প্রায় ২.৩৫ কোটি পর্যটক। হঠাৎ করেই আশা যেন বদলে গেল দুঃস্বপ্নে। সমাজমাধ্যমে এক কাশ্মীরবাসীর দাবি, “এই জঙ্গিহানা স্রেফ মানুষের প্রাণ নেওয়া নয়, আমাদের রুটি-রুজির উপরেওনির্মম হামলা।”
উপত্যকার পর্যটনশিল্পে এখন রক্তসন্ধ্যার মেঘ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)